অপূর্ব দাসঃ জিলাপি কেনার জন্য বেরিয়েছে সায়ন সরকার। জিলাপি খেতে ভালোবাসে সায়ন। দারুণ সুস্বাদু জিলাপি পাওয়া যায় মালিনি-র দোকানে, এরকম কথা শুনেছে সায়ন। মালিনির দোকানের সামনে গিয়ে সায়ন দেখে, জিলাপি ভাজা চলছে। দোকানে বেশ কয়েক জন খরিদ্দার রয়েছে। জিলাপি ভাজছে একজন ঝকঝকে দেখতে মহিলা। ওইতো মালিনি। ‘শহরের দোকানে গ্রামের জিলাপি’, দোকানের সামনে এরকম লেখা দেখে জিলাপি কেনার জন্য এগিয়ে গেল সায়ন। জিলাপি কিনে একটা গরম জিলাপি খেয়ে দেখলো সায়ন। এরকম স্বাদের জিলাপি আগে খায়নি সায়ন। জাস্ট ফাটাফাটি! দারুণ ভালো টেস্ট ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে না শহরের দোকানে গ্রামের এরকম জিলাপিকে।
মন্টুর টি স্টলের চা বানায় মন্টু। চপ বানায় সহকর্মী সহদেব। আর জিলাপি বানায় মালিনি। মন্টুর টি স্টলের তিন রকম চায়ের তিন রকম দাম। ডেয়ারি প্যাকেটের দুধ চা, গরুর দুধের চা আর লিকার চা। মালিনি যখন চা বানাতো তখন থেকেই চা প্রেমিদের কাছে বিশেষ স্বাদের তকমা পেয়ে যায় মালিনির চা। মন্টুর টি স্টলে মালিনির বানানো চা-পান এর জন্য খরিদ্দার বাড়তে থাকে।
প্রতিদিন বিকেলে দোকানে এসে চা বানাতো মালিনি। এখন আর চা বানায় না মালিনি। এখন বিকেলে জিলাপি বানায় মালিনি। সারাদিন মন্টু চা বিক্রি করে। বিকেলে হয় চপ আর জিলাপি। ছিমছাম পোশাক আর হাল্কা সাজগোজ করে বিকেলে দোকানে আসে মালিনি। জিলাপি বানায়। নিজের হাতে খরিদ্দারকে জিলাপি দেয় মালিনি। খরিদ্দারকে মাঝে মাঝে একটা দুটো বাড়তি জিলাপি দেয় মালিনি। বাড়তি জিলাপি পেয়ে খদ্দেররা যেমন খুশি হয়, সেরকম খুশি হয় মালিনির মিষ্টি হাসি দেখে।
মালিনিকে রূপবতী বলা যায়। মন ভালো করে দেওয়ার মতো মিষ্টি হাসি দেখা যায় মালিনির মুখে। এরকম হাসি বন্ধ হয়ে যায় এক-দুই জন সামনে এলে। মন্টুর টি স্টলে পুলকচন্দ্র আসে চুলে কালো রঙ লাগিয়ে। চা খায় দু’বার। চা খেয়ে যাওয়ার সময় জিলাপি কিনলেও পুলকচন্দ্র মালিনির মিষ্টি হাসি দেখতে পায় না।
পুলকচন্দ্রের মতো লোকেরা সামনে এলে মালিনির মুখে হাসি থাকে না। পুলকচন্দ্র জিলাপি কেনার জন্য নয়, ওতো আসে মালিনিকে দেখতে। পুলকচন্দ্রের কুনজর বুঝতে পারে মালিনি। ওর শরীর জরিপ করার করার মতো নজরে তাকিয়ে থাকে পুলকচন্দ্র। মালিনি যাদের পাত্তা দেয় না, তারাই ওর নামে বদনাম রটায়, ‘মালিনির বুদ্ধিতে জিলাপির মতো প্যাচ। তাইতো ওর বানানো জিলাপি ভালো হয়’। এরকম কথায় সবাই কান দেয় না। মালিনির জিলিপি খেয়ে সায়ন সরকার বলেছে, ‘দারুন ভালো টেষ্ট ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে না শহরের দোকানে গ্রামের এরকম জিলাপিকে।’
আসলেই গ্রামের দোকান থেকে জিলাপির রেসিপি নিয়ে এসেছে মালিনি। ওর বড় মাসি থাকে দামোদর নদীর ধারে একটা গ্রামে। সেই গ্রামে মধু ময়রার মিষ্টির দোকান আছে। মধু ময়রা খুবই সুস্বাদু মন্ডা আর জিলাপি বানায়। সুস্বাদু মন্ডার রেসিপি লোককে বললেও জিলাপির রেসিপি কাউকে জানায় না মধু ময়রা। অথচ মালিনিকে জিলাপির রেসিপি জানিয়েছে মধু ময়রা। সেই রেসিপি মতো জিলাপি বানিয়ে খাদ্য রসিকদের মন জয় করেছে মালিনি। ‘শহরের দোকানে গ্রামের জিলাপি’, দোকানের সামনে রঙিন লেখা দেখে কৌতুহল হতেই পারে। অনেকে জিলাপি খেয়ে মালিনির তারিফ করে। জিলাপি খেয়ে খদ্দেররা মালিনির তারিফ করলেও মালিনি জানে; আসলেই তারিফ পেতে পারে রতনলাল। মালিনির বুদ্ধির উপর ভরসা রাখে ওর স্বামী মন্টু। মালিনি তারিফ করে রতনলালের বুদ্ধির। মালিনির বন্ধু রতনলাল প্রতিদিন সন্ধ্যায় আসে। এখনও কেবলমাত্র রতনলালের জন্য এক কাপ স্পেশাল চা বানায় মালিনি। রতনলালের পরামর্শে দোকানের সামনে উজ্জ্বল ভাবে লেখা হয়েছে, ‘শহরের দোকানে গ্রামের জিলাপি।’ এরকম চমকদার পরামর্শ রতনলাল দিতে পারে। তাইতো রতনলালকে মালিনি খাঁটি রতন বলে থাকে।
Social