Breaking News

নিয়োগ দুর্নীতির ধাক্কা এবার ভোটার লিস্টে

 

টুডে নিউজ সার্ভিস, কলকাতাঃ হাতে মাত্র আর কটা মাস তারপরেই ২০২৪-র লোকসভা নির্বাচন। এখন তার প্রস্তুতি নিয়ে রীতিমতো দিনরাত এক করে পড়ে গিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। জাতীয় নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করাতে গেলে তাঁরা প্রথমেই নজর দেন ভোটার তালিকার ওপর। এবার সেই ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে গিয়েই রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরকে। এতোদিন পর্যন্ত এই ভোটার তালিকার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে প্রাইমারি স্কুল টিচারদের। কিন্তু, এবার সেই ভোটার তালিকা তৈরী করতে গিয়ে গোটা রাজ্যজুড়েই মিলছে না সেই সমস্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের। তার অন্যতম একটা কারণ দাঁড়িয়েছে প্রাথমিকে কোন নিয়োগ নেই। ২০২২ সালে প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে যে ছবি ধরা পড়েছে গোটা দেশবাসীর কাছে তার ফল এবার ভোগ করতে হচ্ছে খোদ জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা তৈরী ও সংশোধনের কাজ করতে গিয়ে। ২১ জুলাই থেকে ২১ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করবেন এই সমস্ত প্রাথমিকের শিক্ষকরা যারা জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) হিসেবেই থাকবেন। কিন্তু সেই প্রাথমিক শিক্ষকদেরই পাওয়া যাচ্ছে না। আবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে যে পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে প্রাথমিকের শিক্ষকদের সবসময় কাজে লাগানো যাবে না, তাঁদের পড়ানোর পরে কাজে লাগানো যেতে পারে। আবার ভোটার তালিকাও তৈরী করতে হবে নিখুঁত ভাবে। ১৯৯৫ সাল থেকে এই ভোটার তালিকার কাজে সব সময় ব্যবহার করা হয়েছে প্রাথমিকের শিক্ষকদেরকেই। এতদিন পর্যন্ত একটা বুথের দায়িত্বে থাকতেন তিন থেকে চারজন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। অর্থাৎ একটা বুথের ভোটার সংখ্যা যদি বারোশো জন হন তাহলে এই শিক্ষকরাই নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে প্রত্যেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করতেন। কিন্তু, এবার একটা বুথের দায়িত্ব একজনের ওপরেই পড়েছে। মিলছে না প্রাথমিকের শিক্ষক অগত্যা তাই অঙ্গনওয়াড়ি, আইসিডিএস, আশাকর্মী এরকম তেরো ধরণের লোক দিয়েই কাজ করতে হচ্ছে এখন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরকে।

কমিশন একদিকে জানিয়েছে এই তালিকা তৈরীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে একমাত্র রাজ্য সরকারী  কর্মচারীদেরই। কিন্তু কথায় বলে ঠেলায় পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে, তাই অস্থায়ী কর্মীদেরকে দিয়েই এখন ভোটার তালিকার কাজ করতে হচ্ছে কমিশনকে। কিন্তু কেন এবার ভোটার তালিকা সংশোধনের উপর সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন? তার কারণ ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচন ও ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে বেশ কিছু গাফিলতি ধরা পড়েছে এই ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে। যাদের বয়স ১৭ বছর পেরিয়ে গিয়েছে তাঁদেরকে সঠিকভাবে ভোটার তালিকার আওতাভুক্ত করা হচ্ছে না। যার ফলে নতুন ভোটারের সংখ্যা অনেকটাই হ্রাস পাচ্ছে, বিরত থেকে যাচ্ছে তাঁরা ভোট দান থেকে প্রাপ্ত বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও। আগে কমিশন  সতঃপ্রণোদিতভাবে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া, স্থানান্তরিত করা, সহ বিভিন্ন কাজ করতে পারতো কিন্তু এখন নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করেই তা করতে হয, ফলে এটা একটা বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে, কিন্তু এর ফলে স্বচ্ছতা থাকছে একেবারেই একশো শতাংশ। কিন্তু যে জায়গাটার সমস্যা সব থেকে বেশি তা হল কোন ব্যক্তি যদি মারা যান তাহলে কমিশনের নিয়ম ও আইন অনুযায়ী উক্ত ব্যক্তির পরিবারকে কমিশনের কাছে জানাতে হয় তার পরিবারের সেই সদস্য বা সদস্যা মারা গিয়েছেন এবং তার ভোটার আই কার্ডটি কমিশনের কাছে জমা দিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ভোটার তালিকা সংশোধনের পরেও তালিকায় থেকে যাচ্ছে মৃত ব্যক্তির নাম। যা কিনা কমিশনের কাছে অনেক বড় একটা সমস্যা। রাজ্যের ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে সংখ্যায় এই কারণেই অনেক গলদ থেকে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরের আধিকারিকেরা। কিভাবে এই সমস্যার আশু সমাধান করা যায় সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর থেকে সব জেলার কাছে একদিকে যেমন নির্দেশ পাঠানো হয়েছে সবিস্তারে অন্যদিকে সেই নির্দেশকে সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা সেটাও মনিটর করা হচ্ছে প্রতিদিন। আগামী ১৯ শে অগাস্ট রাজ্যে আসছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তিনজন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। মূলতঃ তাঁরা আসছেন এই ভোটার তালিকার সংশোধনের কাজ কিভাবে করা হচ্ছে এবং তাতে কতটা স্বচ্ছতা থাকছে এই কাজটাকেই সরোজমিনে খতিয়ে দেখতে। সেই জন্যই রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর দিনরাত এক করে এখন থেকেই উঠে পড়ে লেগেছে সব কাজ গুছিয়ে ফেলতে। 

রাজ্যে এই মুহূর্তে বুথের সংখ্যা ৭৯,৫০১টি। কিন্তু, ২০২৪ সালে নতুন যে ভোটার তালিকা প্রকাশ পাবে তাতে একদিকে যেমন ভোটারের সংখ্যা বাড়বে ঠিক তেমনি বাড়বে বুথের সংখ্যা। কারণ জাতীয় নির্বাচন কমিশন পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, যে বুথে ১৫০০ বেশি ভোটার থাকবে সেই বুথকে ভেঙে দুটো বুথ করা হবে। এরফলে একদিকে যেমন ওই বুথের ওপর চাপ কমবে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত সকলের, ঠিক তেমনই ভোটার সংখ্যা কম হওয়ার ফলে ভোটাররাও আরও বেশি শান্তিপূর্ণভাবে কম সময়ের মধ্যেই তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু, এক্ষেত্রেও সমস্যা সেই একটাই ভোট কর্মী পাওয়া। তার কারণ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সেই অর্থে কোন নিয়োগ নেই রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের। অগত্যাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এই বছর কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের ভোটকর্মী হিসেবে অধিক সংখ্যায় ব্যবহার করা হবে এটা খুব পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে সকলের কাছেই। কিন্তু সেখানেও আবার প্রশ্ন সেই নিরাপত্তা নিয়ে। কারণ, সম্প্রতি রাজ্যে যেভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে তারপর ভোটকর্মীরা কতটা নির্ভয়ে যেতে পারবেন ভোটকেন্দ্রে সেটা এখন থেকেই ভাবাচ্ছে তাঁদের। যদিও লোকসভা নির্বাচনে প্রতি বুথেই থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী কিন্তু আদপে পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা যে জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে তারপর জাতীয় নির্বাচন কমিশন তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে কতটা অবাধ, সুষ্ঠু, স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করাতে সক্ষম হয় সেটা এখন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

About Burdwan Today

Check Also

দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার গুসকরা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, গুসকরাঃ চতুর্থ দফা নির্বাচনের একেবারে শেষলগ্নে কার্যত জনপ্লাবনে ভেসে গেল গুসকরা শহর। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *