গোপাল দাস, বর্ধমানঃ উত্তর থেকে বর্ধমানে উড়ে এসে নাম অনুবাদিত হয়ে হলো পতং থেকে বাংলায় ‘ঘুড়ি‘। দূর্গা পূজোর পর থেকে শুরু করে মকর সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত ঘুড়ি ওড়ানোর শেষ পর্যায়ে বর্ধমানে এখনো পালিত হয় ঘুড়ির মেলা, ১ম দিনে বর্ধমান সদর (তৎকালীন), ২’য় দিনে বাহির সর্বমঙ্গলা ও ৩য় দিনে সদরঘাটে ঘুড়ি ওড়ানোর মেলা উদযাপিত করে সেই বছরের মতন ঘুড়ি ওড়ানোর সমাপ্তি ঘোষণা করা হতো। আর দক্ষিণের হাওয়ার উল্টো পুরানে উড়ান জমেও উঠতো না ।
একসময় রাজবাড়ীর লোকজন থেকে শুরু করে বর্ধমানের সেই সময়ের নামকরা মানুষজন মেলায় ঘুড়ি ওড়াতে অংশ নিতেন। এমন’কি শোনা যায় শহরের অবস্থা-সম্পন্ন মানুষেরা ঘুড়ির লেজে টাকা বেঁধে ঘুড়ি উড়িয়ে,প্রতিযোগিতা করে ক্ষমতার জাহির করতেন।
পতং থেকে ঘুড়ি কিভাবে ঘড়ে এলো জানলেও ঐ খেলায় ব্যবহৃত শব্দগুলি কোন্ পরিবর্তিত শব্দ থেকে এসেছে তা আমরা সেদিন বুঝতে পারতাম না , যেমন – হাফতা, মাঞ্জা- (৫০০/১০০০), রিল, লাটাই, যুক্তি, লেই, ঘুড়ির মাপ বোঝাতে, সিকি-তাইয়া, ঢের-তাইয়া, দু-তাইয়া।
অস্ট্রেলিয়ান কাগজ, কাঁপ কাঠি, লেজ,কার্ণিক দাবা, লাট খাওয়া, স্থীর হয়ে থাকা, ধরাই, খেঁচা, টানা, গোটানো, পেট দিয়ে ঢোকা, ঘাড় চেপে লড়াই, হাতের গোরা দিয়ে টানা, লাটাই ছেড়ে খেলা, ভো’কটা, লপ্টানো ও হাফতা এইরকম অনেকগুলি অভিধান বহির্ভূত পৃথক ধরনের শব্দ ব্যবহার করে সেই সময় ঘুড়ি উড়ানো হতো ।
ঘুড়ির নামগুলিও ছিল একদম তার নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী , যেমন – সিরাজু চাঁদবালী, বগ্গা, পেটকাটি, তিলকধারী, কাঁকড়া বিছে, সতরঞ্জী আরও কয়েকটি নাম থাকতেও পারে। যেগুলো হয়তো সময়ের সাথে কাটা ঘুড়ির মতন উড়ে গেছে মন থেকে । সেই সময়ের শিশিরে ভিজে যাওয়া ঘুড়ির মাঞ্জাসুতোয় পেকে যাওয়া গিঁঠ খোলার চেষ্টা আর শীতের মায়াবী রোদে ছাদ উৎসবে হাজির বয়স্কদের নেওয়া শীতের আয়েস, কম বয়সী নারীপুরুষদের উল্লাস ও অনেকের চোখে চাওয়ার সাথে পাওয়ার গিঁঠ পাকিয়ে নেওয়ার ব্যস্ত প্রচেষ্টার কথা আজও অনেকটাই মনে আছে, যে সকল বিষয় আজকের প্রজন্মের কিশোরদের অনেকের কাছেই হয়তো হেলাফেলার ।
Social