টুডে নিউজ সার্ভিস, বর্ধমানঃ “ইতিমধ্যে বাঁকার মধ্যেও অনেকেই বাড়ি ঘর করে ফেলেছে, যেহেতু কেউ কিছু বলে না তাই মানুষও মনে করে আমি যেখানে যা করব বাধা দেওয়ার লোক নেই। মানুষ যখন থাকার জায়গা পায় না তখন ভাবে ওই বাঁকার জলের মধ্যে ঘর করে বসে যাই, এটা আমাদের খুব দুঃখের বিষয়”, শনিবার বর্ধমান সংস্কৃতি লোকমঞ্চে বাঁকা নদী নিয়ে এক বিশেষ আলোচনা সভায় এমনই মন্তব্য করলেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস।
প্রাচীন জনপদ ঐতিহাসিক শহর বর্ধমানের একদা পরিবহন ব্যবস্থার বানিজ্যিক মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হত বর্ধমান শহরের লাইফ লাইন নামে খ্যাত এই “বাঁকা নদী।” বর্ধমান পৌরসভার অন্তর্গত কমবেশী ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এই নদী। নদীটির সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রূপায়িত হয়েছে বাঁকা নদীর সংস্কার ও সৌন্দৰ্য্যায়ন প্রকল্প। নদীটির উপর সেতুগুলির সংস্কার করা হয়েছে। বর্ধমানের এই নদীর নবরূপে সৌন্দৰ্য্যায়নের লক্ষ্যে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের উদ্যোগে শনিবার সংস্কৃতি লোকমঞ্চে বর্ধমান শহরের সকল স্তরের নাগরিককের উপস্থিতিতে একটি বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ কীর্তি (ঝা) আজাদ, জেলাশাসক শ্রীমতী আয়েষা রাণী এ, এবং পুলিশ সুপার সায়ক দাস, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শঙ্কর কুমার নাথ এবং বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. অপূর্ব রতন ঘোষ, বর্ধমান পৌরসভার পৗরপতি পরেশচন্দ্র সরকার সহ আরও অনেকে।

এদিন জেলাশাসক আয়েষা রানী এ বলেন, “বাঁকা নদীর সুরক্ষা ও সংস্কারের জন্য দ্রুত বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে, যাতে কেউ নদীকে অযথা দূষিত না করে।”
সাংসদ কীর্তি (ঝা) আজাদ নদীর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, “জল জীবন, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বহু কারখানার বর্জ্য জল দূষিত করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত করছে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, নদী যেন দূষণের শিকার না হয়।”
পৌরপতি পরেশচন্দ্র সরকার বলেন, “বাঁকায় জল নাই, সবাই জল আনুন প্রবাহমান করুন, বাঁকাকে বাঁচান। এই বিশেষ সভার মাধ্যমে বাঁকা নদীর সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য প্রশাসন ও নাগরিকদের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের বার্তা দেওয়া হয়। জল সংরক্ষণ ও নদী দূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির উপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়।”
এদিন বিধায়ক খোকন দাস বলেন, “সারা শহর জুড়ে আমরা এত কাজ করেছি শুক্রবার বর্ধমান পৌরসভার বাজেটে পেশ হয়েছে। বর্ধমান শহরের রাস্তাঘাট ৬ মাসের মধ্যে সমস্ত হবে আমাদের সব টেন্ডার হয়ে গেছে। টাউনহলের কাজ চলছে সর্বমঙ্গলা বাড়ি থেকে বিগ বাজার থেকে শুরু করে সব জায়গায় কাজ হয়েছে। এবার আমাদের একটাই কাজ করা দরকার তা হলো বাঁকা। কারণ, ১৩টা ওয়ার্ডের ভেতর দিয়ে বাঁকা গেছে এই বাঁকা বর্ষাকালে যখন প্রচুর জল হয় সেই সময় কিছু কিছু নিচু জায়গা সেই বাঁকা জল ঢুকে যায় তখন হঠাৎ করে দৌড়া দৌড়ি করতে হয়। এখন আমরা উদ্যোগ নিয়ে যদি বাঁকার গভীরতা বাড়াতে পারি এই বাঁকাকে যদি আমরা সৌন্দর্য্যায়ন করতে পারি, বাঁকায় যদি আমরা নোংরা জল ফেলতে না দিই, তাহলে কিন্তু বাঁকাটা শহরের গৌরব। দিনে দিনে বাঁকার গভীরতা কমে যাচ্ছে। ২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১১ নম্বর ওয়ার্ড এই শহরটার মধ্য দিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার বাঁকা গেছে আর প্রায় ৬০ ফুটের মতো এই বাঁকা চওড়া। ইতিমধ্যে বাঁকার মধ্যেও অনেকেই বাড়ি ঘর করে ফেলেছে এসব তো আছেই। যেহেতু কেউ কিছু বলে না তাই মানুষও মনে করে আমি যেখানে যা করব বাধা দেওয়ার লোক নেই। তারা সেই ভাবে এই সব করে যাচ্ছে। কারণ মানুষ তো শুধু একটু আস্তানা চায় মানুষ যখন থাকার জায়গা পায় না তখন ভাবে ওই বাঁকার জলের মধ্যে ঘর করে বসে যাই, এটা আমাদের খুব দুঃখের বিষয়।”