টুডে নিউজ সার্ভিস, বর্ধমানঃ একই পরিবারে একই উঠানে ৭টি দুর্গা প্রতিমার পূজা হয়। প্রসাদ বিতরণকে কেন্দ্র করে এই পুজো একটি থেকে পরে সাতটি পূজোতে ভাগ হয়। শাক্ত ও বৈষ্ণব মতের এই পুজো দেখতে ভিড় জমায় বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।
প্রায় ৬০০ বছর আগে খাটুন্দী গ্রামের দক্ষিণে বয়ে গেছে কাদর আর এই কাদরের পাশে ছিল ঠাকরুন পুকুরের মাঠ। এই গ্রামে বাস করতেন রামগোপাল ভট্টাচার্য। রামগোপাল ভট্টাচার্যের ছেলে কেশব ভট্টাচার্য তখন বালক। পরে কেশব পান্ডিত্য লাভ করেন। তিনি ঠিক করেন সন্ন্যাস নেবেন। পরে তিনি সন্ন্যাস নেন এবং তার পদবী হয় ভারতী। এই কেশব ভারতী নবদ্বীপের নিমাইকে অর্থাৎ নদের নিমাইকে কাটোয়ার গঙ্গার তীরে দীক্ষা দিয়েছিলেন। এরপর নিমাইয়ের নাম হয় শ্রীচৈতন্য। এই কেশব ভারতীর বাবা রামগোপাল ভট্টাচার্য এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা।
পরে এই পুজো ভাঙতে ভাঙতে তিনটিতে রূপ নেয় এবং তারপরে ভাঙতে ভাঙতে আরো চারটি মোট সাতটি পুজোতে পরিণত হয়। একই পরিবারের বিভক্ত হয়ে সাতটি পুজো দেখতে আসা মানুষের মনে হবে না এদের মধ্যে কোন বিবাদ আছে। শাক্ত ও বৈষ্ণবের এই পুজো একসাথে সহবস্থান করে।
শোনা যায় পাশের কুলাই গ্রামের জমিদার মিত্রদের সঙ্গে বিবাদের জেরে এই পুজোর সূচনা। মিত্রদের বাড়িতে পুজো করতেন রাম গোপাল বাবু, এরপর মিত্রদের কাছ থেকে ওই পুজোটি তিনি নিয়ে চলে আসেন খাটুন্দী গ্রামের কৃষ্ণ মন্দিরের পাশে। কৃষ্ণ মন্দিরের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয় দুর্গা মন্দিরের। এর কয়েক বছর পর ওই মন্দিরে প্রসাদ বিতরণকে কেন্দ্র করে পূজো বিভক্ত হয়। এরপর শরিকের মধ্যে পুজো হলেও পরে দৌহিত্রসূত্রের পুজো আরও চার ভাগে ভাগ হয়। মোট পুজোর সংখ্যা দাঁড়ায় একই দালানে সাতটি।
এই পুজোর বিশেষত্ব হলো পরিবারের পুরুষেরা এই পুজো করবেন বাইরে কোন পুরোহিত এই পুজো করতে পারবেন না। অষ্টমীর দিন সিঁদুর খেলা। এছাড়া এই পুজোতে মাকে বরণ করবে পুরুষেরা। কৃষ্ণ মন্দিরের পাশে এই পুজো গুলি হাওয়ায়, প্রথমে কৃষ্ণের আরতি হয় তারপরে দুর্গার আরতি হয়। শুধু তাই নয় যখন এই ৭ টি দুর্গাপুজোয় বলিদান হয় তখন কৃষ্ণের কানে তুলো গুজে দেয়া হয়। বছর বছর ধরে একই পরম্পরায় এই পুজো হয়ে আসছে।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই সাতটি দুর্গা প্রতিমা ওই গ্রামেরই এক মিৎ শিল্পী বংশ-পরম্পরায় একই রূপ দিয়ে থাকেন সাত সাতটি প্রতিমার।
মূলত এই বংশ দীক্ষা দানের কাজ করে থাকেন। সেই কারণে সারা ভারতবর্ষ এবং বিদেশ জুড়ে রয়েছে এই বংশের শিষ্যরা। পূর্ব বর্ধমান জেলার এই পুজো এক নজির সৃষ্টি করায় বহু মানুষের সমাগম হয় এই পুজো দেখতে।
Social