টুসু পরব ঘিরে উৎসবমুখর বাঁকুড়া

Burdwan Today
3 Min Read

 

দেবজিৎ দত্ত, বাঁকুড়াঃ বাঁকুড়াও মেতে ওঠে বারো মাসে তেরো পার্বণে। গ্রামবাংলার তেমনই এক পরব মকর সংক্রান্তি।  মকর পরব আর টুসু ভাসান ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠল বাঁকুড়ার বেশ কিছু এলাকা। গান-বাজনা, হৈ হুল্লোড়ে দিনভর জমজমাট থাকল দক্ষিণ বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের যমুনা বাঁধ এলাকায়। সকাল থেকেই  টুসুর চৌদাল ভাঁসাতে ভিড় উপচে পড়ল মকর স্নানের। এক মাস ধরে বন্দনার পরে এদিন টুসুকে বিসর্জন দেওয়া হল স্থানীয় নদী বা পুকুরে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে খানিকটা ভাটা পড়লেও প্রাচীন সংস্কৃতির এই ধারা আজও বয়ে চলেছে।

অন্যান্য রাজ্য ও জেলার মতো বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলাতেও টুসু হল একটি কৃষিভিত্তিক উৎসব। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি থেকে পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত টানা এক মাস ধরে এই উৎসব পালিত হয়। ধানের ক্ষেত থেকে এক গোছা নতুন আমন ধান মাথায় করে এনে খামারে পিঁড়িতে রেখে দেওয়া হয়। অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির সন্ধ্যায় গ্রামের কুমারি মেয়েরা একটি পাত্রে চালের গুঁড়ো লাগিয়ে তাতে তুষ রাখেন। তারপর দুর্বা-ঘাস, গাঁদা ফুলের মালা প্রভৃতি দিয়ে সাজিয়ে, গায়ে হলুদ রঙের টিপ লাগিয়ে পাত্রটিকে পিড়ি বা কুলুঙ্গির উপরে স্থাপন করা হয়। প্রতি সন্ধ্যায় পূজিতা হন এই টুসু দেবী। গোটা পৌষ মাস জুড়ে প্রতি সন্ধ্যায় দেবীর উদ্দেশ্যে চিঁড়ে, গুড়, বাতাসা, মুড়ি ভোগ নিবেদনের সঙ্গে বাড়ির কুমারী মেয়েরা সুর করে টুসু গান গায়। গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শীতের সন্ধ্যায় এভাবেই টুসু বন্দনায় মেতে ওঠে মেয়েরা।

 এই টুসু উৎসব পালনের সময় পৌষ মাসের শেষ ক’টা দিন চাঁউড়ি, বাঁউড়ি ও মকর নামে পরিচিত। চাঁউড়ির দিনে গৃহস্থ বাড়ির মেয়েরা উঠোন গোবর-মাটি দিয়ে নিকিয়ে পরিষ্কার করে। তৈরি করা হয় চালের গুঁড়ো। বাঁউড়ির দিন পিঠে তৈরি হয়। চাঁছি, তিল, নারকেলের পুর দিয়ে বিভিন্ন আকারের পিঠে বানানো হয়। স্থানীয় ভাষায় যার নাম গড়গড়্যা পিঠে বা পুর পিঠে। বাঁউড়ির রাতেই হয় টুসুর জাগরন। মেয়েরা ঘর পরিষ্কার করে ফুল, মালা, আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলে। টুসু দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। অবিবাহিতা মেয়েদের পাশাপাশি বাড়ির বধূ ও বয়স্করাও টুসু গানে অংশ নেয়। গ্রাম বাংলায় সারা রাত ধরে গানের সুর ভেসে আসে টুসু জাগরনে। এর পর দিনই পৌষ সংক্রান্তি অর্থাৎ মকর। এই দিন ভোর থেকেই মেয়েরা গান গাইতে গাইতে টুসু দেবীকে নিয়ে হাজির হয় স্থানীয় পুকুর কিংবা নদীতে। সেখানে টুসু বিসর্জন দিয়ে শুরু হয় পরের বছরের প্রতীক্ষা।

লালমাটির বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গাতেও টুসু ভাসান হয়। মকর পরবের সঙ্গে টুসু ভাসানে এদিন জমজমাট ছিল  বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গাতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে বিষ্ণুপুর।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *