পাপু লোহার, আউসগ্রামঃ ‘রাঙ্গামাটি পথের ধারে তোমায় দেখেছি মনে মনে আমি তোমায় ছবি এঁকেছি’ রাঙামাটির পথের ধারে শাল পলাশের জঙ্গল আর সেই জঙ্গলকে রক্ষা করতে গ্রামের গুটিকয়েক ছেলে তাদের মনে মনে আঁকা ছবি এখন লবনধার গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে অঙ্কনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে।
শাল, পলাশ, সেগুন, মহুয়া গাছের ঘন জঙ্গলের মাঝেই ছোট্ট একটি গ্রাম। আউসগ্রাম জঙ্গলমহলের লবনধার গ্রামে রয়েছে প্রায় ১০০টি বাড়ি। গ্রামেরই যুবকদের প্রচেষ্টায় এখন লবনধার গ্রাম আশেপাশের গ্রামের মানুষের নজর কেড়েছে।কারণ এই গ্রামের কয়েকজন যুবক জঙ্গল বাঁচাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচারের অভিনব মাধ্যম খুঁজে নিয়েছেন।
গত কয়েকদিনের প্রচেষ্টায় তারা প্রায় অধিকাংশ গ্রামের দেওয়ালে নানান ছবি অঙ্কন করে ফেলেছেন। জঙ্গলের পরিবেশ থেকে আদিবাসী সমাজের পরিবেশ ও তাদের সংস্কৃতি ছবি তুলে ধরা হয়েছে দেওয়ালে। কোথাও পৌরাণিক কাহিনী তো কোথাও দেবদেবীর কথা, আবার কোথাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জঙ্গল থেকে গাছ কেটে নিলে কি ক্ষতি হতে পারে। আর তাদের এই অবিনব উদ্যোগের জন্যই সেজে উঠেছে গোটা গ্রাম। আর নিত্যদিন গ্রাম দেখতে আশেপাশের গ্রামের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন লবন ধার গ্রামে।
গ্রামের বাসিন্দা অর্ণব ঘোষ জানিয়েছেন, তারা জঙ্গলকে রক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছেন কয়েকজন যুবক মিলে। তৈরি করা হয়েছে একটি সংগঠন।যার নাম দেওয়া হয়েছে লবনধার অন্নপূর্ণা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। জঙ্গলের উপরই নির্ভর করে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা। তাই জঙ্গল অনেক মানুষের অন্ন জোগায় সেই কারণে তারা তাদের সংগঠনের অন্নপূর্ণা নাম যোগ করেছেন। এলাকার কয়েকজন যুবক মিলে তারা এই সংগঠন তৈরি করে প্রথমে সাধারণ মানুষদের মধ্যে প্রচার করেন। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া পাননি। এরপর তারা উদ্যোগ নেন এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ির দেওয়ালে তারা তাদের প্রচার ছবির আকারে তুলে ধরবেন। একটি দুটি দেওয়াল অংকন করার পরই গ্রামের মানুষের কাছ থেকে বেশ ভালই সাড়া মিলছে শুরু করে। এরপর এগিয়ে আসেন কোটা গ্রামের মানুষ তারা সকলেই কাদের বাড়ির দেওয়াল অংকন করার জন্য স্বেচ্ছায় অনুমতি দেন। একটি দুটি করে দেওয়ার অঙ্কন করতে করতে গোটা গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির দেয়াল অঙ্কন করার ফলে সেজে ওঠে গোটা গ্রাম।
পাশাপাশি এলাকার যে সমস্ত পুরানো মন্দির রয়েছে। সেই সমস্ত মন্দিরের দেওয়ালে পৌরাণিক কাহিনী অঙ্কন করে গ্রামের মানুষের নজর কেড়েছেন তারা।
তারা জানিয়েছেন, একদিকে যেমন নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামের সংস্কৃতি, বন-জঙ্গল সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরেছেন। অপরদিকে জঙ্গলকে রক্ষা করতে কী করণীয় সেই বিষয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে তারা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন যা নতুন প্রজন্মকে আরও উৎসাহ বাড়িয়েছে। তাদের আশা এর ফলে সাধারণ মানুষ অনেক সচেতন হবেন এবং জঙ্গল থেকে অবাধে গাছ কাটা বন্ধ হবে এবং গ্রীষ্মকালে যে ভাবে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় তাও বন্ধ হবে বলে আশা তার। গ্রামের যুবকদের কাজে খুশি এলাকার মানুষ।
গ্রামের বাসিন্দা অর্চনা রায় জানিয়েছেন, তারা ভাবতেই পারেননি তাদের গ্রাম এত সুন্দর হয়ে উঠবে। আগামী দিনে তাদের যে সমস্ত আত্মীয়রা বিভিন্ন এলাকায় থাকে তারা তাদের গ্রামে এসে তাদের গ্রামের প্রশংসা করলে তাদের ও গর্ব হবে।
গ্রামের বাসিন্দা তথা কলেজ পড়ুয়া শ্রীলেখা রায় জানিয়েছেন একটা গ্রাম এত সুন্দরভাবে সেজে উঠতে পারে তা তিনি কখনোই কল্পনা করতে পারেননি। একদিকে যেমন গোটা গ্রাম সেজে উঠেছে তেমনই সেজে উঠেছে গ্রামের সমস্ত পুরানো মন্দির। গ্রামের দেওয়ালে গ্রামের সংস্কৃতি এবং আদিবাসী সমাজের সংস্কৃতি এবং বন-জঙ্গল রক্ষা করার জন্য যে প্রচার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবির আকারে তা অনেকটাই প্রভাব পড়েছে গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।