খালনায় লক্ষ্মী পূজার প্রস্তুতি তুঙ্গে

Burdwan Today
3 Min Read

অভিজিৎ হাজরা, জয়পুর, হাওড়াঃ   রাত পোহালেই লক্ষ্মী পুজো। গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত জয়পুর থানার ‘খালনা’ আদতে একটি প্রত্যন্ত গ্ৰাম। কিন্তু, এই গ্ৰাম এখন লক্ষ্মী পুজোর পীঠস্থান হয়ে উঠেছে। কারণ, এখানে ঘরে ঘরে  লক্ষ্মী পুজোর হয়। আর এই পুজোকে কেন্দ্র করে খালনা গ্রাম হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উদাহরণ স্বরূপ। প্রাচীন বর্ধিষ্ণু এই গ্ৰামটির এখন নতুন নাম হয়েছে ‘লক্ষ্মীগ্রাম।’

খালনায় বারোয়ারী ও পারিবারিক পুজো শতাধিক।প্রায় ৩৫ টি বারোয়ারী পুজো হয়। এই বারোয়ারী পুজোর জন্যই কিন্তু খালনা এখন ট্যুরিস্ট ম্যাপে প্রবেশ করতে চলেছে। এই পুজো গুলির মধ্যে বড় বাজেটের পুজো ১০ থেকে ১৫ টি। এখানকার লক্ষীপুজো আড়ম্বরে ও আয়োজনে এবং অভিনবত্বে এখন দুর্গাপুজোকেও হার মানিয়েছে। লক্ষীপুজোকে কেন্দ্র করে খালনা গ্রামের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সারা দেশের একটা উদাহরণ স্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।হিন্দু সম্প্রদায়ের যুবকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই পুজোয় নিজেদের ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নিয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবকরাও।

খালনা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি বাড়ি, বারোয়ারী, ক্লাব, প্রতিষ্ঠানে  লক্ষ্মী পুজোর আয়োজনের প্রস্তুতি তুঙ্গে। নানা ধরনের থীম, আলোক সজ্জা, নানা রুপে লক্ষী প্রতিমা নানা সাজে পূজিতা হবেন।

জয়পুর – বাগনান বাসরাস্তার খালনার দুই দিকে খালনা গ্রামের লক্ষ্মী প্রতিমা পূজিতা হন তিন দিন ধরে। এ কারণে যানবাহন তিন দিন ধরে নিয়ন্ত্রন করবে প্রশাসন। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হবে তিন দিন ধরে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই তিন দিন ধরে অংশ নিতে ভিড় জমাবেন। হাজারো বিকিকিনির সম্ভার নিয়ে ক্রয় – বিক্রয়ের আশায় বুক বাঁধে পরিযায়ী হকারের দল।আগত দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখরিত হবে খালনা গ্রাম।

এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক ও কংগ্রেস নেতা অসিত মিত্র, আমতা কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক সুকান্ত পাল সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অসিত  মিত্র ও সুকান্ত পাল বেশ কয়েকটি  লক্ষ্মী পুজোর মন্ডপের উদ্ধোধন করবেন।

খালনার  লক্ষ্মী পুজো প্রসঙ্গে আমতা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক ও কংগ্রেস নেতা অসিত মিত্র বলেন, ‘ খালনা গ্রাম বন্যা কবলিত গ্ৰাম হিসাবে একটা সময় চিহ্নিত ছিল। আমি বিধায়ক হয়ে বন্যা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্ৰহণ করেছিলাম।সফল হয়েছি। এখন খালনা গ্রাম আর বন্যার কবলে পড়ে না। বিধায়ক থাকাকালীন সময়ে আমি খালনা গ্রামের  লক্ষ্মী পুজোকে পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ  লক্ষ্মী পুজোর শিরোপা দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছিলাম। বর্তমানে খালনার  লক্ষ্মী পুজোয় শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন নয় – অন্য রাজ্যের মানুষজন ছুটে আসেন ‘ ।

পুজো কমিটির সভাপতি থেকে প্রতিমার সাজ সজ্জা তৈরী করা ছাড়াও বিভিন্ন কাজে সবেতেই হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের যুবকদের ভূমিকা দস্তুর মতো লক্ষ্য করা যায়। প্যান্ডেল তৈরি থেকে পুজোয় সংগঠনের হিন্দুদের সঙ্গে সমান তালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে এসেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবক থেকে গৃহবধূরা। এছাড়াও সাজসজ্জার বিষয়ে থিম পুজোর রমরমা ক্লাব গুলি একে অপরকে টেক্কা দিতে নিজেদের উজাড় করে দিতে ব্যস্ত। চমকপ্রদ মন্ডপ তৈরী থেকে অভিনব প্রতিমা তৈরীতে, মৌলিক চিন্তাধারা ও শৈল্পিক নৈপুণ্য যুক্ত হয়েছে। খালনা গ্রামের  লক্ষ্মী পুজোকে কেন্দ্র করে এখন প্রস্তুতি তুঙ্গে।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *