Breaking News

রবীন্দ্র সদনে বাসভূমি সাহিত্য সম্মান ২০২২-এ ভূষিত হলেন ইতিহাসবিদ খাজিম আহমেদ

 

টুডে নিউজ সার্ভিসঃ সর্বাঙ্গীণ সাফল্যের সঙ্গে রবিবার ২৭ নভেম্বর ২০২২ বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে উদযাপিত হলো ৪০ বছর ধরে প্রকাশিত হতে থাকা লিটল ম্যাগাজিন বাসভূমি পত্রিকা ও ৪৫ বছরের পুরনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চন্দ্র কমার্শিয়াচল ইনস্টিটিউট যৌথ আয়োজন ‘বাসভূমি উৎসব’। উক্ত সংস্থা দুটির কর্ণধার অরূপ চন্দ্র, কবি প্রাবন্ধিক ও ইতিহাস গবেষক। 

২০০৮ সাল থেকে বাসভূমি উৎসবে সম্মানিত ও সংবর্ধিত করা হচ্ছে বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সাহিত্যের উন্নতি সাধনে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া অথচ সেই অর্থে প্রচারের আলোয় না থাকা শিল্পী সাহিত্যিক সাংবাদিক ইতিহাস গবেষক সংস্কৃতি-কর্মী নাট্য ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি মহৎপ্রান গুণীজনকে।

২০২২ সালে সর্বমোট ১১ জন পুরস্কৃত সংবর্ধিত ও সম্মানিত হলেন রবীন্দ্রসদন মঞ্চ থেকে। 

২০১৮ সালে বাসভূমি সাহিত্য সম্মাননা’র জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ইতিহাস গবেষক ও ‘চট্টগ্রাম ইতিহাস গবেষণা কেন্দ্র’ সভাপতি সোহেল ফকরুদ্দিন, যিনি ভিসা সংক্রান্ত কারণে সেই সময় উপস্থিত থাকতে না পারার দরুন বাসভূমি সম্মাননা থেকে ব্রাত্য রয়ে গিয়েছিলেন, আজকের দিনে হাজির হয়েছিলেন তিনি সেই সুদূর চট্টগ্রাম থেকে। তাঁর হাতে বাসভূমি সাহিত্য সম্মান ২০১৮ তুলে দিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার প্রবীণ সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক অনল আবেদীন এবং কবি ও সম্পাদিকা দেবী রাহা মিত্র। 

সোহেল বাবুর সঙ্গেই চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলেন শ্রী দুলাল কান্তি বড়ুয়া যিনি নিজেও একজন ইতিহাস গবেষক এবং চট্টগ্রামের অত্যন্ত জনপ্রিয় ইতিহাস বিষয়ক পত্রিকা, কিরাত বাংলার প্রধান সম্পাদক, তাঁর হাতে সংস্থার কর্ণধার অরূপ চন্দ্র স্মারক ও অন্যান্য উপহার তুলে দিলেন।

এ বছর “সিসিএআই বাসভূমি জীবনকৃতি পুরস্কার-২০২২” -এর জন্য নির্বাচিত হয়েছেন ড. সর্বজিৎ যশ। বর্ধমান নিবাসী ইতিহাস গবেষক।

আর “বাসভূমি সাহিত্য সম্মান-২০২২” এর জন্য নির্বাচিত হয়েছেন সর্বমোট ১০ জন।

১. আনসারউদ্দিন। কথাসাহিত্যিক। নদিয়া।

২. নীহারুল ইসলাম। কথাসাহিত্যিক। মুর্শিদাবাদ।

৩. দিলীপ কুমার মিস্ত্রী। শিশু-সাহিত্যিক ও গল্পকার। নদিয়া।

৪. কুণাল কান্তি দে। সাহিত্যিক ও গল্পকার। মুর্শিদাবাদ।

৫. বরুণ দাস। সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদক। কলকাতা।

৬. তপন ভট্টাচার্য। কবি, সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদক। নদিয়া।

৭. সুশান্ত বিশ্বাস। কবি, শিল্পী ও লোকসংস্কৃতি গবেষক। মুর্শিদাবাদ।

৮. খাজিম আহমেদ। ইতিহাস গবেষক। বহরমপুর।

৯. আশীষ কুমার মন্ডল। ইতিহাস গবেষক। বহরমপুর।

১০. সাবিত্রী প্রসাদ গুপ্ত। ইতিহাস গবেষক। বহরমপুর।

নির্বাচিতদের মধ্যে তিন জন ইতিহাস গবেষক, দুজন কবি সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদক, একজন কবি লেখক ও হস্তশিল্পী, দুজন কথাসাহিত্যিক, আর দুজন গল্পকার।

তাঁদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় অভ্যর্থনা স্মারক, পরিয়ে দেওয়া হয় উত্তরীয়, দেওয়া হয় সুদৃশ্য সম্মাননা স্মারক ও মানপত্র, এছাড়া মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত ছানাবড়া ও বেশ কিছু বইয়ের একটি সংগ্রহ।

বাসভূমি পত্রিকা সম্পাদক অরূপ চন্দ্র প্রারম্ভিক ভাষণের পর মঞ্চে আহ্বান জানানো হয় মুর্শিদাবাদ জেলার বিশিষ্ট সংগীত ইতিহাস গবেষক রামপ্রসাদ ভাস্কর মহাশয়কে, তিনিই ছিলেন এই সভার সভাপতি; ডেকে নেওয়া হয় লোকশিল্প গবেষক মুজাফফর হোসেন মহাশয়কে, সভার বিশেষ অতিথি রূপে। এরপর দুই স্কুল ছাত্রী কোয়েলিয়া ও সৌরিমা উদ্বোধনী সংগীত গেয়ে শোনান। 

বাসভূমি উৎসব স্মরণিকা সর্বসম্মুখে নিয়ে আসেন ড. জয়দেব বিশ্বাস, প্রাবন্ধিক চন্দ্রপ্রকাশ সরকার ও কবি মবিনুল হক। একই সঙ্গে প্রকাশিত হয় নবদ্বীপের কবি তপন ভট্টাচার্যের কাব্যগ্রন্থ।

এরপর স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন পাঁচ জন বিশিষ্ট কবি– অরু চট্টোপাধ্যায়, আবদুস সালাম, হৈমন্তী বন্দোপাধ্যায়, রাজন গঙ্গোপাধ্যায়, হাসি খাতুন ও কৌশিক গুড়িয়া; কবিতাগুলি দর্শক দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রবলভাবে।

সভায় জেলার বিশিষ্ট কবি অনন্দিতা মোদক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের উপর রচিত একটি দীর্ঘ কবিতা পাঠ করে শোনান যা উচ্চ প্রশংসিত হয়।

রবীন্দ্র সংগীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশিত হয় দুই স্থানীয় নৃত্য শিল্পী—দেবশ্রী সরকার ও অনিন্দিতা ভট্টাচার্য’র উপস্থাপনায়।

প্রত্যেক কবি ও শিল্পীকে অভ্যর্থনা স্মারক ও বহরমপুরের বিখ্যাত ছানাবড়া উপহার দেওয়া হয়।  

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের পর পুরস্কার প্রাপকগণ তাদের বক্তব্য পেশ করেন, সভার প্রধান অতিথি ও সভাপতিও তাদের বক্তব্যে বাসভূমি পত্রিকার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।

বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক খাজিম আহমেদ তার দীর্ঘ বক্তৃতায় বারবার তুলে ধরেন কলকাতা কেন্দ্রিকতার বাইরেও বৃহৎবঙ্গের তথাকথিত মফস্বল অঞ্চল গুলির এই উদ্যোগ অত্যন্ত মূল্যবান যা বাংলার প্রগতিশীল সমাজকে লেখক শিল্পী সংস্কৃতি কর্মীদেরকে নিরন্তর উৎসাহ জুগিয়ে যাবে।   

সভায় উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের কবি সাহিত্যিকগণ ছাড়াও নদিয়া বর্ধমান বীরভূম জেলার বিভিন্ন খ্যাতনামা কবি সাহিত্যিক ও পত্রিকার সম্পাদকগণ। রামপুরহাট থেকে ‘কাঞ্চিদেশ পত্রিকা’র সম্পাদক শ্যামচাঁদ বাগদী; বেথুয়াডহরীর ‘বনামি পত্রিকা’র সম্পাদক দিলীপ মজুমদার; ছিলেন কবি মবিনুল হক, প্রবীণ লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. আবুল হাসানাত, কবি সন্দীপ বিশ্বাস, কবি সমীর ঘোষ, কবি মনিরুদ্দিন খান, প্রাবন্ধিক কৌশিক বড়াল, ওফেলিয়া চন্দ্র দত্ত, কবি শ্যামল সরকার, কবি শহিদুল ইসলাম, কবি তাপসী ভট্টাচার্য, নাট্যকার সন্দীপ বাগচী, চিত্র শিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত, চিত্রশিল্পী রাজীব দত্ত প্রমুখ।

এদিন সংবর্ধিত ইতিহাসবিদ খাজিম আহমেদকে বাসভূমি সম্মাননা স্মারক তাঁর হাতে তুলে দেন প্রাবন্ধিক অপরেশ চট্টোপাধ্যায়। 

খাজিম আহমেদ এই উপমহাদেশ বিষয়ক ইতিহাসবেত্তা গবেষক, দেশ-বিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবাঙলার কঠোরভাবে একেশ্বরবাদী জাতিসত্তার মর্যাদার অন্বেষক, অনন্যসাধারণ প্রাবন্ধিক।

“বাঙালি মুসললান : আপন ভুবনের সন্ধানে” এবং “পশ্চিমবাংলার বাঙালি মুসলমান : অন্তবিহীন সমস্যা”

উদার আকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে খাজিম আহমেদ-এর দুই ঐতিহাসিক গ্রন্থ। পাঠক দরবারে সমাদৃত হয়েছে। ইতিমধ্যে বেস্টসেলার গ্রন্থ দুটো সংগ্রহ করতে গবেষকদের মধ্যে চাহিদা তৈরি হয়েছে।

About Burdwan Today

Check Also

কার্তিক লড়াইকে ঘিরে জমজমাট কাটোয়া

রাহুল রায়, কাটোয়াঃ পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের সকলের কাছে সব থেকে বড় পুজো হল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *