প্রবীর মণ্ডল, বর্ধমানঃ আট বছরের পুরনো তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ মামলায় ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে পূর্ব বর্ধমান জেলা আদালত। সোমবার আদালত তাঁদের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। দোষী সাব্যস্ত করা ১৩ জনের মধ্যে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ (বিডিএ)-এর চেয়ারপার্সন তথা বর্ধমান-১ তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি-সহ ৪ জন অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাধীন, তাঁরা আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত না থাকায় মঙ্গলবার সাজা ঘোষণা স্থগিত রাখেন বর্ধমান ফাস্ট ট্র্যাক দ্বিতীয় কোর্টের বিচারপতি অরবিন্দ মিশ্র। বুধবার ওই ৪ জনকে স্বশরীরে অথবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপারিটেনডেন্টকে।
২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বর্ধমান-১ ব্লকের রায়ান ১-এর তৎকালীন পঞ্চায়েত সদস্য জীবনকৃষ্ণ পালের বাবা দেবু পাল গ্রামেরই দুর্গাতলায় সন্ধ্যাবেলায় বসেছিলেন। অভিযোগ, ওই সময় তাঁর ওপর অভিযুক্তরা বাস, লাঠি, টাঙ্গি নিয়ে হামলা চালায়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে প্রথমে বর্ধমান মেডিক্যাল ও পরে কলকাতায় পাঠানো হয়। এই হামলার ঘটনায় তাঁর ডান চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এরপরই দেবু পালের স্ত্রী তথা জীবনকৃষ্ণ পালের মা সন্ধ্যা পাল বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনায় কাকলি তা গুপ্ত-সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সোমবার ফাস্ট ট্র্যাক দ্বিতীয় আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং মঙ্গলবার রায় ঘোষণার কথা জানান। তবে দোষী সাব্যস্তদের মধ্যে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারপার্সন তথা বর্ধমান-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি কাকলি তা গুপ্ত, যুব সভাপতি মানস ভট্টাচার্য, রায়ান-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কার্তিক বাগ ও রায়ান-১ অঞ্চলের সভাপতি সেখ জামাল অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কাকলি তা গুপ্তকে অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত না থাকায় মঙ্গলবার সাজা ঘোষণা স্থগিত রাখেন বিচারক। বুধবার ওই ৪ জনকে স্বশরীরে অথবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপারিটেনডেন্টকে।
সরকারি পক্ষের আইনজীবী হরিদাস মুখার্জী জানান, মঙ্গলবার ১৩ জনের মধ্যে ৯ জন আদালতে হাজির ছিলেন, কিন্তু ৪ জন অসুস্থ থাকায় সাজা ঘোষণা একদিন পিছিয়ে যায়। বুধবার স্বশরীরে সকলে হাজির না হতে পারলেও ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে তাঁদের সাজা ঘোষণা করা হবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, মঙ্গলবার রায় দান হয়নি কারণ আসামিদের ১৩ জনের মধ্যে ৪ জন উপস্থিত হতে পারেনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে। সেই মর্মে জেলার-কে বিচারক নির্দেশ দেন যদি বুধবার স্বশরীরে হাজির করাতে পারে সাজা ঘোষণা হবে, তবে কোনো কারনে যদি সকলে উপস্থিত না থাকে তাহলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হবে।
এদিকে, অসুস্থ নেতাদের দেখতে হাসপাতালে যান রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি তাঁদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন এবং আদালতে হাজির হওয়া বাকি ৯ জনের সঙ্গেও কথা বলেন।
