দেশ জুড়ে জনগণের গর্জন, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিসর্জন

Prabir Mondal
54 Min Read

ফারুক আহমেদঃ দেশ জুড়ে জনগণের গর্জন ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিসর্জন এই স্লোগান তুলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঝড় তুলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে ঐতিহাসিক প্রকল্পের সুবিধা পেতেই সাধারণ মানুষের দুহাত ভরে আশীর্বাদ করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারকে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বাংলা জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত শুধু সময়ের অপেক্ষা। পক্ষান্তরে কেন্দ্রীয় সরকারের ভুয়ো প্রতিশ্রুতির একটাও বাস্তবায়ন হয়নি। জনগণের গর্জনে তা পুনঃ পুনঃ প্রমাণিত।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যথাযথই বলেছেন, ‘‘কেউ বলছেন ‘বেলুড়ঘাট’, কেউ লিখছেন ‘মালদহ পূর্ব’ কেন্দ্র! ঠিক এই কারণেই আমরা বিজেপিকে ভোটের পরিযায়ী পাখি বলি। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহকে একপ্রকার উপেক্ষা করে, মালদহ দক্ষিণের জনসভায় যে জন-বিস্ফোরণ ঘটল, তাতে আমি নিশ্চিত এই কেন্দ্রে যতই বিজেপি, সিপিআইএম এবং কংগ্রেস তলে তলে জোট বাঁধুক না কেন, মানুষের পূর্ণ সমর্থন আমাদের সঙ্গে আছে।” মালদা দক্ষিণে শাহওনাজ আলি রাইহানের জয় সুনিশ্চিত শুধু সময়ের অপেক্ষা। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন প্রজন্মের মুখ তুলে এনে নয়া চমক দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেশকে এখন ঘিরে রেখেছে এক ঘোর অনিশ্চয়তা। বেকারত্ব থেকে মাতৃশক্তির অপমান, গরিব মানুষকে ইচ্ছাকৃত বঞ্চনা থেকে বিভাজনের রাজনীতিকে আধার করে সম্প্রীতির পুণ্যভূমিতে হিংসার আগুন ছড়ানো— এইসব নোংরা খেলায় মেতেছে বিজেপি। উল্টোদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের মানবকল্যাণে উৎসর্গীকৃত বিভিন্ন উদ্যোগসমূহকে, মানুষ তাঁর যাপনের সঙ্গী করেছে। যাঁরা বলছেন, ‘জয় বাংলা। জয় তৃণমূল’, সেইসব সৈনিকরা প্রতি মুহূর্তে বারংবার বলে চলেছেন— ‘পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,
মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে।’
বৈশাখের তপ্ত রৌদ্রকে উপেক্ষা করে মানুষ যেভাবে ভোট দিচ্ছেন, যোগ দিচ্ছেন জনসভায় তাতে বোঝাই যাচ্ছে, কোনও বাংলা-বিরোধীর স্থান নেই এই বঙ্গে। যে প্রতিনিধি গরিব মানুষের ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা টাকার বিরুদ্ধে প্রশ্ন করেন না, যে প্রতিনিধি স্বামী বিবেকানন্দকে অসম্মান করেন, সেই প্রতিনিধি আর যাইহোক সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হতে পারেন না, মানুষ তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন।
তাই, গ্রামে শহরে ফুটছে উন্নয়নের ফুল, পাহাড় থেকে সাগর—শুধুই তৃণমূল।

লোকসভা নির্বাচনে ভোট প্রচারে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই এগিয়ে। সোনার বাংলা সহ মহান ভারতের সারা দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িকতার যে চোরা স্রোত বইছে, তার বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির ঘৃণার ও বিভাজনের ভাষনে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বিজেপির সমর্থকেরা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস রাখেন না এবং ঘৃণার ভাষনে তাঁরাও নেতা-কর্মীদের উপর বিরক্ত হয়েছেন। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, বহরমপুর থেকে আসানসোল, দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ চষে বেড়াচ্ছেন, এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত। সেই সঙ্গে চলছে পদযাত্রা। যত বেশী মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারেন। ভোট প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত করতে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঝড় তুলেছেন তার ধারে কাছে কেউ নেই। জনসভা আর পদযাত্রাই হোক, ভোট প্রচারের জন্য বাংলা এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎপরতার ছবি দেখা যাচ্ছে। আর সেই ভয়ে বিরোধী মুখ সব আতঙ্কে চুপসে গেছে। তাই এবারের ভোটেও যে রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ভয় একটাই ঘর শত্রু বিভীষণরাই না সে পথে কাঁটা বিছিয়ে দেন। এ দিকে নজর দেবার দরকার। বাংলার আদি তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিকরা সর্বত্র বঞ্চিত ও অপমানিত হচ্ছেন। এর প্রতিকার না হলে বিরোধী দলের পতন সুনিশ্চিত করা অসম্ভব। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের তিরিশের বেশি আসনে জয় সুনিশ্চিত শুধু সময়ের অপেক্ষা।
চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনের অনিয়মকে একধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে বাংলাকে নতুন জীবন দেওয়া এক দুঃসাধ্য কাজ। সেই কঠিন কাজ নিপুণভাবে সামলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মমতার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রামবাংলার মানুষ। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে বিগত ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত, বিধানসভা, লোকসভা, পৌরসভার নির্বাচনে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার। সন্ত্রাস, সারদাকাণ্ড, কামদুনি, সন্দেশখালি, পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড ইত্যাদি ঘটনার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের জমানায় নির্বাচনে পাল্টা চাল দেবেন। কিন্তু গ্রামবাংলার মানুষ কার্যত সেই আশায় জল ঢেলে মমতার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছেন। পঞ্চায়েত, পৌরসভা ও উপনির্বাচনের ফলেই প্রমাণিত যে, সাধারণ মানুষ মর্মে মর্মে জানে এই সরকারই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রথম সরকারে আসেন তখন তাঁর সামনে যে-দুটি মূল সমস্যা হাজির হয়েছিল তা হল জঙ্গলমহল ও পাহাড়। রাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল মাওবাদী। মাওবাদী দমনে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। জঙ্গলমহলের জন্য তিনি আলাদা প্রকল্প ঘোষণা করেন। তাদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা নেন। জঙ্গলমহলের জন্য পৃথকভাবে পুলিশ ও হোমগার্ড নিয়োগ করেন। দুটাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। জঙ্গলমহলের মানুষ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেলেন। পাহাড়ের অশান্ত পরিবেশকে শান্ত করার জন্য আলাদা কমিটি গঠন করেন। পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য আলাদা বরাদ্দ রেখেছেন বাজেটে। আবার তারা পৃথক রাজ্যের দাবি জানালে তাও কঠোর হাতে দমন করেছেন। নবান্ন ও মহাকরণ থেকে জেলায় প্রশাসনিক মহল, সর্বত্র তিনি কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। যতই সমালোচনা হোক না কেন, তিনিই একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যিনি প্রত্যেক মাসে বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করে বিডিও, এসডিও, ডিএম, জেলা সভাধিপতিদের মুখোমুখি বসে সমস্যার কথা শোনেন এবং সমাধানের পথ বাতলে দেন। কয়েকবছর আগে কল্যাণীতে প্রশাসনিক বৈঠকের সময় দেখেছি, এক খুদে শিশু, আড়াই বছরের কন্যা রাইসা নুরও বাবার কোল থেকেই দিদি, ওই তো দিদি, বলে ছুটে যেতে চাইছে দিদির কোলে। সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন আকাশ স্পর্শ করছে যেন। জনসভার মাঠ জনপ্লাবনে ভরে উঠছে। দেশের কল্যাণে তিনি নিবেদিত প্রাণ হয়ে মানুষের নিকট দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছেন। রাজ্যের সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চালু করেছেন বঙ্গসম্মান। কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান, তার জন্য তৎপর হয়েছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নয়নের জন্য তিনি জেলায় জেলায় আরও হাসপাতাল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পিপিপি মডেল স্কুল-কলেজ এবং হাসপাতাল খোলার উদ্যোগ রাজ্যের প্রথম। সখ্যালঘু উন্নয়নের প্রশ্নে বামশাসকেরা ছিলেন নির্বিকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু উদ্যোগী। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি অনেক মুসলমান গোষ্ঠীকে ওবিসি-র অন্তর্ভুক্ত করেছেন। চাকরিক্ষেত্রে এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ঘোষণা করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ, কবরস্থান, ইদ্গাহ সংস্কারের জন্য ওয়াকফ বোর্ডকে সক্রিয় করে তুলেছেন। রাজ্যে ওয়াচ টাওয়ার ও হস্টেল নির্মাণ করেছেন। সংখ্যালঘু সংকটে তিনি গুরুত্ব সহকারে বোঝার চেষ্টা করেছেন। রাজ্যে এই প্রথমবার এত সংখ্যালঘু রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধিকার অর্জন করেছেন। পঞ্চায়েতে সংখ্যালঘুদের এত বড় সুযোগ অন্য সরকার দেয়নি। ফলে সামগ্রিক বিচারে এই উন্নয়নকে সার্থক বলা যায় অনায়াসেই। যা চৌত্রিশ বছরে সম্ভব হয়নি, তা মাত্র কয়েক বছরে সম্ভব নয় কখনওই–এই বোধ আমাদের থাকা দরকার। বিরোধীদের অনৈতিক জোট যে মানুষ বরদাস্ত করেনি, তার প্রমাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুনরায় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন। বামসরকারের রাজত্বে সংখ্যালঘুদের হাতে না মেরে ভাতে মারা হয়েছিল। শিক্ষা, চাকরি, বাসস্থান–সবদিক থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছিল। মমতা-সরকার এই বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্রকৃত উন্নয়ন কাকে বলে। বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘুদের বিপুল সমর্থন পেতে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজিপি মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল। কারণ সংখ্যালঘুদের ভোট যাদের দিকে যাবে তারাই সরকার গড়বে।
বিগত চৌত্রিশ বছরে সংখ্যালঘুদের চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও সামাজিক সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের কোনও চেষ্টাই করেনি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জামানায় সংখ্যালঘুদের সংকট বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। জ্যোতি বসুর শাসনকালে মুসলিমদের জন্য চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের দাবি তুলেছিলেন জনাব হাসানুজ্জামান। তাতে জ্যোতি বসু বলেন, ‘জনাব হাসানুজ্জামান কি মুসলমানদের জন্য কারাগারেও সংরক্ষণ চাইছেন।’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তার জমানায় বলেছিলেন, ‘মাদ্রাসা-মক্তব হল সন্ত্রাসবাদ-এর আখড়া।’ এই চরম অপমানের বদলা বাংলার মানুষ ও সংখ্যালঘু সমাজ ভোটবাক্সে দিয়েছেন।
মনে রাখতে হবে, সংখ্যাগরিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতা সংখ্যালঘিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতার চেয়ে বহুগুণে ধ্বংসাত্মক আর শক্তিশালী। সংখ্যাগরিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতাবাদী রাজনীতি মুসলমানদের অস্তিত্বকেই ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, জহরলাল নেহেরু একথা স্পষ্ট করে লিখেছিলেন। এর সত্যতা বারবারই প্রমাণিত হয়েছে। সংখ্যালঘু প্রার্থীদের মধ্যে যারা লোকসভা ভোটে বা বিধানসভা ভোটে জিতেছে, ভাল কাজ করলেও তাদের অনেককেই প্রার্থী করা হয় না বা আসন বদল করা হয়। কখনও-বা ঠেলে দেওয়া হয় হেরে যাওয়া আসনগুলিতে। মুসলিম প্রার্থীদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় সুচতুরভাবে।
সাধারণ মানুষ কিন্তু রাজনীতির এসব প্যাঁচপয়জার বোঝে না। তারা চায় প্রত্যেক এলাকায় আধুনিক মানের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠুক। যেমন মুর্শিদাবাদ জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার দাবী দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন জেলার মানুষ, যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি প্রকৃত অর্থে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খানিকটা হলেও সে দিকে অগ্রসর হতে পেরেছেন। অনেকগুলি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও বেশ কয়েকটি নতুন কলেজ খুলেছেন রাজ্যে। মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা করে নতুন বিল্ডিংয়ের জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। আধুনিক যুগে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ল্যাব তৈরি করতে হবে এবং বিজ্ঞান বিভাগ চালু করতে হবে। শুধু নামে নয় কাজের স্বকৃীত স্বরূপ পরিপূর্ণ পরিকল্পনা করে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় সব বিভাগ নিয়ে চালু করতে হবে। আর্টস বিভাগের সমস্ত বিষয় যেমন থাকবে, তেমনই বিজ্ঞান বিভাগের সব বিষয় চালু করতে হবে তার সঙ্গে বানিজ্য বিভাগ কমার্সও চালু করতে হবে। আর চাই আর্দশের জন্য দর্শন বিভাগ। বিল্ডিং না থাকলে নতুন বিল্ডিং না গড়লে অধ্যাপক ও কর্মচারী নিয়োগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অর্জন হবে না কখনো। তাই শিক্ষা প্রসার ঘটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও উচ্চশিক্ষার মন্ত্রী শ্রী ব্রাত্য বসুকে আরও বেশি বেশি নজর দিয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।
২০১৬ ও ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘুদের বিপুল সমর্থন পেতে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে প্রকৃত মর্যাদা পেয়েছেন। সংখ্যালঘুদের বিপুল সমর্থন পেতে চাইবেন সব দলই, কারণ এই সংখ্যালঘুদের মন জয়ে সকল রাজনৈতিক দল নানা কৌশলে বাজিমাত করতে উঠেপড়ে লেগেছিল।
বাম-কংগ্রেস ও বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস-এর দিকে থাকা মুসলিম ভোটে থাবা বসাতে চাইছিল। রাজ্যের মানুষের মুখে মুখে জোট নিয়ে জোর চর্চা চলছিল। বাম-কংগ্রেস নেতারা বারবার ছুটে যাচ্ছিলেন ফুরফুরাতে। কোন দল কতটা সমর্থন পাবে তা ভাবার বিষয় ছিল। বাংলার সংখ্যালঘুরা বোকা নয়, তারা এখন বুঝতে পারেন। কে বা কারা রাজ্যের মানুষের ও সংখ্যালঘুদের প্রকৃত কল্যাণ চান।
বিগত ৩৪ বছর বাংলার মানুষ দেখেছেন সংখ্যালঘুদের সামাজিক সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের কোন চেষ্টাই করেনি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। বাম শাসনে রাজ্যের ২৩টা জেলায় বামফ্রন্টের পার্টি সম্পাদক ছিলেন, কিন্তু কোনও মুসলিমকে সম্পাদক পদে বসাতে পারেননি বাম কর্তারা। বামফ্রন্টের কর্তারা বলেন, তারা নাকি অন্যদের থেকে অসাম্প্রদায়িক। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে কখনও মুসলিম আধিকারিককে বসাতে পারেননি কেন, এই প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। এই কালো ইতিহাস বাংলার মানুষ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে না, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কয়েকজনকে জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসনেও বসিয়েছেন। বাম সরকার যা কখনও ভাবতেই পারেনি।
বামফ্রন্টের কর্তারা ও বিজেপির অধুনা কর্তারা শুধু ভোটের সময় ভোট লুঠ করতে আর লেঠেল বাহিনী করে মুসলিমদের এবং দলিতদের এগিয়ে দিয়েছে সুচতুরভাবে। মারছে মুসলিম, মরছে মুসলিম আর মরছে দলিতরা। বাংলার মানুষ ভুলে যায়নি তাদের চালাকি ও অত্যাচারের কথা। অপ্রত্যাশিত দেশভাগের ফলে সাবেক বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সমাজ পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। মানসিক অস্বস্তিকাতরতায় আচ্ছন্ন মুসলমান জাতিসত্তা এই সাড়ে সাত দশকের বেশি সময় ধরে কোন অবস্থানে?
স্বাধীনোত্তর পশ্চিমবাংলায় জীবন বিকাশের হরক্ষেত্রে বিশেষত রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রশ্নে মুসলমানদের নানা মতে বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের ‘গণতান্ত্রিক সাম্যতাহীন’ নির্লজ্জ স্বার্থসিদ্ধি আর নানাবিধ ধান্ধাবাজির সওয়ালে দাবার বড়ে হিসেবে ব্যবহার করেছে অর্থাৎ ‘ভোটব্যাঙ্ক’ হিসাবে। এই নিঃসহায় ধর্মীয় সম্প্রদায়কে মাদারি নাচের উপাদান করে তুলেছে। হরেক কিসিমের কারসাজির উৎসকেন্দ্রকে এক নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখলে যা স্পষ্ট তা খোলসা করে বলা দরকার। সত্য নির্মম, সেক্ষেত্রে কাউকে রেয়াত করার প্রশ্নই ওঠে না। সে সুযোগও নেই, কেননা কঠোরভাবে একেশ্বরবাদী এই ধর্মবিশ্বাসী সমাজ ‘সিউডো সেক্যুলার’, নরম ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের সমস্ত রকমের ফন্দি আর ফিকির অনুধাবনের পূর্ণ ক্ষমতা অর্জন করেছে। দেশবিভাগের পর তারা অন্তবিহীন সমস্যায় আক্রান্ত, জর্জরিত এবং তারা রাজনৈতিক সমাধান কোন পদ্ধতিতে সম্ভব তার তত্ত্বগত, কৌশলগত আর পরিস্থিতি মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও পারঙ্গম হয়ে উঠেছে। তার প্রমাণ তারা দিয়েছে বিগত তিন বিধানসভা ও ২০১৪ এবং ২০১৯ লোকসভা ভোটে। কোনও ‘ললিপপ’ আজ তাদের তৃপ্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়। অতলান্তিক সমস্যা আর অস্তিত্বের সংকটগুলো অতিক্রম করে কিভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকবে তার পূর্ণ একটি ছকও সংখ্যালঘু মনে ক্রিয়াশীল। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের দিকে নজর দিলে দেখা যাচ্ছে ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছে। তাই বিরোধীরা এই বাংলায় সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। আর আছে মায়েদের ভোট কন্যাশ্রী ও লক্ষীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য সাধারণ মহিলারা বেশিরভাগ উপকৃত হয়েছেন। তাই তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দু-হাত ভরে আর্শীবাদ করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত করতে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
বিগত বাম শাসনের ও কেন্দ্র সরকারের অহমিকা, ঔদ্ধত্য, ভণ্ডামি আর দুর্নীতির গহ্বরে নিমজ্জিত তস্কর শাসকগোষ্ঠীর বলির পাঁঠা হতে তারা আর আগ্রহী নয়। বাম জামানায় কেন্দ্রে বিজেপির রাজত্বে প্রশাসনিক বদমায়েশি সম্পর্কে নিরন্তর প্রতিবাদী হয়ে ওঠা সমাজ এখনও সচেতন আছেন। তারা ভুলে যায়নি জ্যোতি বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের জামানায় সংখ্যালঘুদের সংকট বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। সর্বদিক থেকে তাদের হাতে না মেরে ভাতে মারার সেই সুকৌশল আজও ভোলার নয়। এই চরম অপমানের বদলা বাংলার মানুষ ও সংখ্যালঘু সমাজ ভোটবাক্সে দিয়েছেন। যার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল বিধান চন্দ্র রায়ের পর একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সকলকেই চমকে দিয়ে ২১২ বেশি টা আসনে জয়ী হয়েছিল। গোটা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মিটিং-মিছিল করে জোটের মুখে ঝামা ঘসে ও চুন-কালী মাখিয়ে তাদের পতন সুনিশ্চিত করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী জোর আওয়াজ তুলেছিলেন, সব দলগুলো সংখ্যা অনুপাতে ৩০ শতাংশ আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দিক। সেই পথে কোনও দলই হাঁটেনি অবশ্য।
যেসব ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে তা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে বর্তমান সরকারকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণ মানুষ চান প্রত্যেক এলাকায় আধুনিক মানের সাধারণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠুক। রাজ্যের উচ্চশিক্ষায় অবশ্য স্বর্ণযুগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কয়েটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও অনেকগুলো কলেজ খুলেছেন। শিক্ষা প্রসার ঘটাতে উচ্চশিক্ষার মন্ত্রী শ্রী ব্রাত্য বসু তৎপর হয়ে কাজ করছেন।
রাজ্যের কল্যাণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিকদের মধ্যে অন্যতম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, সুব্রত বক্সীরা নিষ্ঠার সঙ্গে অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ করে চলেছেন। আপদে-বিপদে রাজ্যের মানুষের পাশে সর্বদা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
নগর উন্নয়নে ও কলকাতার মেয়র হিসেবে ফিরহাদ হাকিম-এর শুভ উদ্যোগ প্রাণিত করেছে বাংলার মানুষকে।
আশার কথা, মানবীয় চিন্তাচর্চায় যথার্থ আগ্রহী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মেধাজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তক, সর্বোপরি আম-জনতার মধ্যে থেকে সচেতন অংশটি বাম শাসনের ও বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির শাসনের প্রশাসনিক বদমায়েশি সম্পর্কে নিরন্তন প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজ থেকে উদ্ভূত প্রতিনিধিস্থানীয় সমাজ-বেত্তা, প্রাবন্ধিকদের ভাবনাচিন্তাকেও তুলে ধরেছিলাম আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন ‘কংগ্রেস ও বাম শাসনে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক’ ও ‘বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম’ দুটি গ্রন্থে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের একটি অংশ, যারা আজও উটপাখির মতো মরুবালিতে মুখ গুঁজে উপেক্ষিত অংশের জাগরণকে স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত, তাদের বোধদয় হবে এমন প্রত্যাশা করা যায়। যার ফলে বাম শাসনের অবসান ঘটাতে আমরাও এগিয়ে এসেছিলাম। পরন্তু সীমাহীন রাজকীয় ক্ষমতানির্ভর সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে ঘাড়ে-গর্দানে এক হয়ে যাওয়া বামফ্রন্টের ও বিজেপির রাজাবাবুরা এতদিনে যে সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজাংশের উপস্থিতিকেই স্বীকার করতো না, আজ তারাই বেমক্কা নির্লজ্জভাবে ছুটে যাচ্ছেন সংখ্যালঘুদের কাছে। সংখ্যালঘুরা চান সমদৃষ্টি সমাজবিকাশ। তারা সময়ের বিচার করেছেন এবং বিপুলভাবে জয় দিয়ে ফিরিয়ে এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। বাংলার অনেকেই মনে করছেন এবার ৪২-এর মধ্যে ৪২ না হলেও ৩৩টা আসনে জয় আসবেই। লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে আছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুর্শিদাবাদ ও মালদা জেলায় কংগ্রেস-এর জেতা আসন এবার লড়াই দিয়ে ছিনিয়ে নেবে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা।
রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিলেন বৈষম্য না করে উন্নয়ন করা যায়। তাই উন্নত, ঐক্যবদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রগতিশীল ভারত গড়ার লক্ষ্যে বাংলার ৪২টা লোকসভা কেন্দ্রে প্রকাশ্য জনসভা করছেন বাংলার নয়নের মণি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনী ভোট প্রচারে তাঁদের জনসভা গুলো জনসমুদ্রের আকার নিচ্ছে।
গণতন্ত্র ও সংবিধান আজ বহু রাজনৈতিক নেতাদের হাতে ধ্বংস হচ্ছে। গণতন্ত্র ও সংবিধান বাঁচাতে দেশের সাধারণ নাগরিকদের আরও সচেতন হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে হবে।

‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই হয়েছিলেন এবং আবারও হবেন এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

১৩ বছরেই তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বিরাট কোহলি’ ও ‘রোহিত শর্মা’ হয়ে উঠেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কোনও পরিস্থিতিতেই যে সেরা প্লেয়ার, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ২০১৬ ও ২০২১-তে রাজ্যের ক্ষমতায় মমতার প্রত্যাবর্তনের অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার যুবশক্তির মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এবার নির্বাচনে তৃণমূল যুব দলের সেই অধিনায়ক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যুব সম্প্রদায় শপথ নিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার কুর্সিতে ফের অধিষ্ঠিত করার। তা করেও দেখিয়েছেন। তৃণমূলের বিপুল জয়ের পিছনে অনেকেই দারুণ ‘খেলেছেন’। কিন্তু ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই হয়েছিলেন।
নির্বাচনের প্রাক্কালে, এলাকায় চষে বেড়িয়ে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। বাংলার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দাপিয়ে বেড়িয়ে তুলে ধরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসনে বিগত ১২ বছরে রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাওয়ার কথা। বামফ্রন্টের আমলে পিছনের সারিতে চলে যাওয়া এই বাংলাকে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী আবার সামনের সারিতে অধিষ্ঠিত করেছেন, সেই লড়াইয়ের কথা বাংলার ঘরে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মমতার সাফল্য, মমতার আগামী দিনের কর্মসূচী প্রচারের মূল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। সেইমতো তাঁর যুববাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মানুষের কাছে যেতে, মানুষকে বোঝাতে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে যে উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে, সেই উন্নয়নের বার্তা রাজ্যবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়ে মমতার জয় সুনিশ্চিত করে তোলার পিছনে অভিষেকের অবদান কারও থেকে কম নয়। তাঁর দূর্বার ডাকেই তৃণমূলের হাত শক্ত করতে সমর্থনের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। তাইতো, যতই জোট গড়ুক সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি, মানুষ বুঝতে সমর্থ হয়েছিল, অত্যাচারী সিপিএম ও বিজেপি আর নয়, বাংলার বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে যার হাত ধরে তাঁকেই বাংলার কুর্সিতে দরকার।
যুব সংগঠনই দলের ভবিষ্যৎ। যুব সংগঠনের বৃদ্ধি না হলে, নতুন মুখ উঠে না এলে, যে-কোনও দলেই পচন ধরে। আর মানুষের পাশে, মানুষের কাছে গেলে, দলে নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি হতে বাধ্য। দলীয় সদস্যপদ নবীকরণ হওয়া মানেই দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠা। সেই সরল সাধারণ মন্ত্রই যুব নেতা হিসাবে রাজ্যের প্রতিটি যুব শাখার অন্দরে প্রবেশ করিয়ে দিতে পেরেছেন অভিষেক। বয়সে নবীন হলেও, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার সার্থক বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সমর্থ হয়েছেন সর্বভারতীয় তৃণমূল যুব সভাপতি থেকে বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক। নেত্রীর দেখানো পথই তাঁর এগিয়ে চলার সোপান। তাই তো যুব সংগঠনের ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, শৃঙ্খলা আর অনুশাসনই দলের মূলমন্ত্র। বলেছিলেন দলের অন্দরে অশান্তি-বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত নয়। চূড়ান্ত করে দিয়েছিলেন যুবনেতা-কর্মীদের চলার পথ। তাঁর নির্দেশনামার প্রথমেই ছিল, মানুষের জন্য কাজ। বলেছিলেন, মানুষের জন্য জীবনপাত করুন, স্বার্থসিদ্ধি মানব না। রাজ্য সরকারের কর্মসূচি ও সাফল্যের কথা বুথে বুথে পৌঁছে দিতে হবে। যুব সংগঠনের মাধ্যমেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সাফল্যের কথা গ্রামেগঞ্জে, শহর-শহরতলির অলি-গলি, তস্য গলিতে ছড়িয়ে পড়বে। রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের মধ্য দিয়ে যদি এই বার্তা মানুষের মনে প্রবেশ করানো যায়, তাঁর প্রভাব পড়বে বহুগুণ। দলের প্রতি, দলনেত্রীর প্রতি মানুষের বিশ্বাস দ্রুত বাড়তে থাকবে। দল বাড়বে। সরকারের উন্নয়নমুখী কাজের প্রচারে যোগ দিতে ভিন্ন ভিন্ন দল থেকে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষও ভিড় জমাতে শুরু করবেন। তাঁদের দলে অন্তর্ভুক্তির জন্য ছাঁকনির কাজ করার গুরুদায়িত্ব নিতে হবে যুবকর্মীদের। আরও একটা বড় কাজ, ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলা। কেননা ছাত্র সংগঠনের পরের ধাপই যুব সংগঠন। ছাত্র নেতা-কর্মীদের যুবস্তরে নিয়ে আসার ও তৈরি করার দায়িত্ব তো যুবনেতা-কর্মীদেরই। অভিষেক প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, মূল সংগঠনের সঙ্গে নীতিগত ফারাক বা কোনও সংঘাত তিনি চান না। এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সর্বস্তরে। মনে রাখতে হবে যুব সংগঠন দলের ডানহাত। এ হাত যত শক্ত হবে, দল ততটাই মজবুত হবে। কিন্তু মূল সংগঠনের সঙ্গে স্বার্থ-সংঘাত থাকা মানে দল নড়বড়ে হয়ে পড়া। যুব শাখার একটা বিশেষ দায়িত্ব থাকে। দলীয় নীতি মেনে সেইসব কাজের মাধ্যমেই দলকে শক্তিশালী করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রাজ্যের উন্নয়নের প্রচারে মুখ একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসে এক, দুই বা তিন বলে কিছু নেই। দলের শীর্ষে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর নীচে আছেন কর্মীরা। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেত্রীর কর্মযজ্ঞকে সফল রূপায়ণে সহায়তা করব। সেই ব্রত নিয়েই তিনি এগিয়ে চলেছেন। যে মন্ত্রে তিনবার বিধানসভায়, পৌরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয় এসেছে, সেই একই মন্ত্রে এবার লক্ষ্য লোকসভা ২০২৪। সচেতন নাগরিকগণের কাছে একাটাই দাবি নিয়ে ৩৫ করাই একমাত্র লক্ষ্য।
তাই তো এখন লক্ষ্য গ্রাম। গ্রামের উন্নয়নে তাঁকে দলনেত্রী যেভাবে কাজে লাগিয়েছেন, সেই মতোই তিনি দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বিপুল কাজ করছেন। গ্রামে বিগত দিনে যে উন্নয়নের ঝড় বয়ে গিয়েছে, তা তিনি তুলে ধরছেন তাঁর যুববাহিনীর মাধ্যমে। বলছেন ভবিষ্যৎ কর্ম যজ্ঞের কথাও।
২০১৬ বিধানসভা ভোটে মাথাচাড়া দিয়েছিল অনৈতিক জোট। তাঁকে সমূলে উৎখাত করা গিয়েছে। এখন বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে তিনি বাংলার লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে অংশ গ্রহণকারী প্রার্থীদের হয়ে জোরালো প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। জনগণের গর্জন বিরোধীদের বর্জন। এবার লোকসভা ভোটেও কর্মীদের যে-কোনোও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি। বলেছেন, অসন্তোষ থাকলে দলের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে। যুব সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে তিনি আদর্শ যুবনেতার পরিচয় বহন করতেই আগ্রহী ছিলেন। তিনি চান তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দুর্যোগ বা ঝড়ে প্রকৃত কাণ্ডারীর মতোই শক্ত হাতে হাল ধরতে। স্বচ্ছ প্রশাসন রাজ্যবাসীকে উপহার দিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলার যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বদ্ধপরিকর। যুবাদের অনুপ্রেরণার তিনিই উৎস।
আবার রাজনীতিতেও সক্রিয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। এবার ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে ৪২টির মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫টি আসন জিতিয়ে আনতে তিনি বদ্ধপরিকর হয়েছেন।
সামনের ২০২৬ বিধানসভা ভোটেও তৃণমূল কংগ্রেসকে বিপুল ভাবে জিতিয়ে আনতে তিনি প্রধান সেনাপতি। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে বাংলায় পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে তিনি সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়ে ছিলেন। হ্যাট্রিক করতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরবর্তীকালে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বাংলার প্রতি প্রান্তে সংগঠন ও সদস্য সংখ্যা বাড়াতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি।
বাংলার কল্যাণে ও দেশের কল্যাণে যুব সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে আদর্শ ভারত গড়তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই দিদির যোগ্য উত্তরসূরি। তিনিই আলোর দিশা হয়ে উঠছেন।

অনেক বছর পেরিয়ে গেল, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজও আমরা সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ভারত গড়ে তুলতে পারিনি। দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, সম্প্রীতির বন্ধন অগ্রাহ্য করে বেড়ে চলেছে হানাহানি। সংবাদমাধ্যমেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসব ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের খবর প্রচারের সময় আমরা সমদৃষ্টির পরিচয় দেখতে পাই না। এ এক ট্রাজেডি।
পশ্চিমবঙ্গে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ মানুষই মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। এই সম্প্রদায়ের বড় উৎসব ঈদ। কিন্তু শারদ উৎসবের সংবাদ যেমন প্রচার পায়, তার ছিটেফোঁটা সংবাদ ঈদ উৎসবকে ঘিরে হয় না কেন? শারদ উৎসবকে ঘিরে যত শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হয় তাতে চোখ রাখলে দেখতে পাই, ঈদ সংখ্যাগুলোতে সংখ্যাগুরুদের অবাধ প্রবেশ ঘটলেও, শারদ সংখ্যাগুলোতে মুসলমান লেখক কবি সাহিত্যিকদের নাম প্রায় দেখতেই পাওয়া যায় না। ব্যতিক্রমী দু’এক জনের নাম মাত্র দেখতে পাই। সম্প্রীতির মেলবন্ধন জরুরী। পরিবর্তন চাই মননে ও কার্যক্ষেত্রে।
আমাদের মধ্যে যে বিভেদের প্রাচীর তোলার অশুভ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা ব্যর্থ করতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নইলে যতই আমরা মুখে সম্প্রীতির বার্তা শোনাই না কেন, সব আয়োজন গঙ্গার ভাঙনের মতো তলিয়ে যাবে। আমরা ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিতে চাই। প্রকৃত ধর্মবোধে যারা বলীয়ান তাদের স্বাগত জানিয়ে সকলে মিলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে চাই। বিভিন্ন ইফতার অনুষ্ঠানে আমরা সংখ্যাগুরু সমাজের মানুষদের উদার আহ্বান জানিয়ে গর্ববোধ করেছি। কিন্তু বিভিন্ন পুজোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমরা আজও ব্রাত্যই থেকে গেলাম কেন?
আমরা বঞ্চনা চাই না। যে বঞ্চিত, সে হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান হোক আর মুসলমান হোক, সেই আমাদের দুঃখের সমভাগী। গোটা দেশের দিকে একটু আলোকপাত করলে বহু চিত্র উঠে আসবে। এক পরিসংখ্যানে প্রকাশ, ঋণের দায়ে ৪৫ হাজারের বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। দৈনিক ৩৫ জন কৃষক আত্মহত্যা করছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে আত্মহত্যার ঘটনা ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রসঙ্গে আন্না হাজারে বলেছিলেন, ‘মোদি সরকার কৃষকদের কল্যাণে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যদিও লাভজনক প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় এসেছে। কৃষকদের চেয়ে শিল্পপতিদের নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার বেশি চিন্তিত। গণতন্ত্রে সরকারের চাবি থাকে জনতার হাতে এবং তাদের সরকারকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া উচিত। দেশের কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তারা ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। কৃষকরা জমিতে সেচের জন্য সস্তা মূল্যে বিদ্যুৎ ও পানি পাচ্ছে না, খালে পানিও সরবরাহ হচ্ছে না।’ তিনি সরকারের কাছে কৃষি কমিশন গঠন করে তাকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।
দেশের চারিদিকে প্রত্যেক দিন ৩৫ জন কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। ঋণের দায়ে ৪৫ হাজারের বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে আত্মহত্যার ঘটনা ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই সরকারকে তো কৃষকবিরোধী সরকার বলতেই হয়। এই সরকারের আমলে একেরপর এক ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্র সরকার জনবিরোধী সরকার। এনআরসির নামে চলছে বিভাজনের রাজনীতি।
ভারতে নতুন সূর্য ওঠার ডাক দিয়েছিল দলিত-সংখ্যালঘু নেতার সঙ্গে বাংলার যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও দলিত ইস্যু নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর পদক্ষেপের ভূয়ষি প্রশংসা করেছিল সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষরা।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর এক রিপোর্টে প্রকাশ, বিগত ১৪ বছরে দলিত নির্যাতনের ঘটনা ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি ১৫ মিনিটে ১টি করে অপরাধমূলক ঘটনা ঘটানো হয়েছে দলিতদের বিরুদ্ধে। দেশে দলিতদের উপর নির্যাতনের ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছিল দলিতদের মনে। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, বঞ্চনা ও বৈষম্যের ঘটনাও চরমহারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ভারতের বিকাশ বিশ বাঁও জলে ঠেলে গোটা দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা ছড়িয়ে দিয়ে অস্থির পরিবেশ তৈরি করেছিল সাম্প্রদায়িক শক্তি। এখনও প্রতিদিন ভারতে দলিতের ৬ জন নারী ধর্ষিতা হন।
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দলিত ও সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। “লাভ জেহাদ” ও “গো রক্ষা”-র নামে অসহায় সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। যা চোখে দেখা যায় না, এই সব দৃশ্য আদিভারতবাসীদের চোখে জল আনছে। এসসি-এসটি আইন পরিবর্তন ও দলিত-সংখ্যালঘু নিপীড়নের প্রতিকার করতে ভারত জুড়ে দলিত ও সংখ্যালঘু জাগরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। কলকাতার রাজপথে মহামিছিল ও প্রতিবাদসভা চোখে পড়েছে। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন দলিত ও সংখ্যালঘু নেতারা।
এই মহান ভারতে বেশিরভাগ আদিভারতীয়দের মধ্যে দলিত ও সংখ্যালঘু মুসলমানরাই সর্বদিকে সর্বাধিকভাবে বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছেন। এই বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে, দলিত ও মুসলমানদের জোটবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসতে হচ্ছে বিভেদকামী শক্তির বিরুদ্ধে ভোটে অংশ নিয়ে।
পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেহাল দশা কাটাতে অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করতে রাজ্য সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। মাদ্রাসায় এখন‌ও দলিত ও সংখ্যালঘু মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাই অধিক। সেজন্যই কি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এতো অবহেলা করছে মাদ্রাসার প্রতি? শিক্ষক নিয়োগে এতো অনীহা কেন? জোরালো প্রশ্ন উঠছে চারিদিকে। বাংলার রাজ্য সরকার অনুমোদিত ৬১৪টি মাদ্রাসায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষক পদ এখনো শুন্য। মাদ্রাসা শিক্ষা সিস্টেম ভেঙে পড়েছে, সরকার তবুও কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না, কোন অদৃশ্য কারণে? বিশ বাঁও জলে তলিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা। কোর্টে কেস চলার অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার চরম অবহেলা করছে মাদ্রাসার প্রতি।
রাজ্যে নামেই সাতজন মুসলিম মন্ত্রী কিন্তু মুসলিমদের কাজের বেলায় একজনও যথেষ্ট পরিমানে কাজ করতে পারেন না। আর পারলে মাদ্রাসা সমস্যার কবেই সমাধান হয়ে যেত। রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে এই সরকার পুরোটাই ব্যর্থ হয়েছে বললে ভুল হবে না। ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি উন্নয়নের জন্য আজ পর্যন্ত কেন্দ্র সরকার “ওয়াক্‌ফ উন্নয়ন করপোরেশন” তৈরি করল না। ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি দিনের পর দিন বেহাত হয়ে যাচ্ছে। বেদখল সম্পত্তি ফিরিয়ে আনতে এবং বর্তমানে যে সব সম্পত্তি আছে তা রক্ষা করতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রে মোদী সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ওয়াক্‌ফ বোর্ডের কাজ দেখলে মনে হবে গভীর সঙ্কটে আছে। এই সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর একটাও হাই মাদ্রাসা নতুন করে অনুমোদন দেয়নি। সবাই জানি একটাই গল্প, দশ হাজারের ভাঁওতা। সংখ্যালঘু মুসলিম আধিকারিকদের পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনে নীতিনির্ধারণের কোনও জায়গায় রাখা হচ্ছে না।
সংখ্যালঘু উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু ভাতা, ‘শ্রী’ যুক্ত প্রকল্প ছাড়া এই সরকার কিছুই করেনি। অথচ এই সরকার ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল তারা ক্ষমতায় এলে সাচার কমিটির সুপারিশ এই রাজ্যে রূপায়িত করতে বদ্ধপরিকর থাকবে। ক্ষমতায় এসে রাজেন্দ্র সাচারকে রাজ্যে আনা হয়েছিল, কিন্তু তাঁর সুপারিশ মানা হয়নি। বাস্তবিক গুরুত্বপূর্ণ রাজেন্দ্র সাচারের সুপারিশকৃত পরামর্শ আজও প্রয়োগ করতে এই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য সুপারিশ ছিল “সমসুযোগ কমিশন” গঠন করতে হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে ব্যাঙ্ক থেকে বেশি বেশি সংখ্যালঘুদের ঋণ দিতে হবে। রাজ্যস্তরে সংখ্যালঘুরা উপকৃত হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য রাজ্যস্তরে তথ্যপঞ্জী ব্যাঙ্ক গঠন করতে হবে যাতে অন্যান্য অংশের মানুষের উন্নয়নের সঙ্গে সংখ্যালঘু উন্নয়নকে তুলনামূলকভাবে বিচার করা যায়। রাজ্য সরকারের প্রশাসনে সংখ্যালঘু মুসলমিদের প্রতিনিধিত্ব বাড়েনি। সাংসদ প্রতিনিধি, বিশেষ করে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে সংখ্যা বাড়লেও, সংখ্যালঘু প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়েনি, তা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে।
পৌরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকাতে ওবিসি ক্যাটাগরি “এ” এবং “বি” করে সংখ্যালঘু মুসলিম প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছে এবং বিষয়টি গুলিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে। অনেক জেলাপরিষদে ৬০-৭০ শতাংশের কাছাকাছি মুসলিমদের বসবাস থাকলেও সেখানে কোনও মুসলিম নেতা ও নেতৃকে প্রার্থী করা হয়নি।
১২টি এমন বিধানসভা কেন্দ্র আছে যেখানে সংখ্যালঘুরা ৫০ শতাংশের অধিক, অথচ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে সংরক্ষিত আসন করে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্যসরকার আজ পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এসসি-এসটি-ওবিসি সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য এই সরকার অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে। একেই গরিব পিছিয়ে পড়া, তার উপর অনলাইন? এই সিদ্ধান্তের জন্য সবাইকে টাকা নিয়ে শহরে ছুটতে হচ্ছে অনলাইন ফর্ম ফিলাপ করতে। আবার সবাই সার্টিফিকেটও পাচ্ছে না, যার ফলে চাকরি, ভর্তি সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। ওবিসি সংরক্ষণের নামে বঞ্চনা চলছে। বহু ক্ষেত্রে ওবিসি সার্টিফিকেট আছে এমন চাকরিপ্রার্থীর আবেদনকারীদের আবার সাধারণ ক্যাটাগরিতে চাকরিই দেওয়া হচ্ছে না। এখন ওবিসি সার্টিফিকেট আছে তেমন চাকরি প্রার্থীদের মধ্যেই লড়াই করে দু’একটা কোথাও চাকরি হচ্ছে। এবছর মুর্শিদাবাদ জেলায় সামান্য প্রাইমারি চাকরি পরীক্ষায় বহু যোগ্য সংখ্যালঘুদের সুপরিকল্পিত ছকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বহু টেট পাশরা আজও চাকরি পায়নি। রাজ্যসরকারের চাকরিতে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহ বিভিন্ন বিভাগে সংখ্যালঘুদের বঞ্চিত করা হয়েছে, যার ফলে এই সব জায়গায় মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব বাড়েনি।
জনসংখ্যার অনুপাতে বহু বেশি পরিমাণে মুসলিমরা শুধুমাত্র কারাগারে রয়েছে। ভাবুন, পরিবর্তনের জন্য অধিক সংখ্যায় সংখ্যালঘুরা এই সরকারকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছিল। বাম সরকারের পতন সুনিশ্চিত করেছিল, তৃণমূল কংগ্রেসকে জিতিয়ে সরকার গড়েছিল। বাস্তবিক সংখ্যালঘুর কল্যাণে এই সরকার কিছুই করছে না, কিন্তু মুখে বলছেন ৯৯ শতাংশ কাজ করে দিলাম।
রাজ্যের যে-কোনও রাজনৈতিক দলের দিকে চোখ রাখলে দেখতে পাই শহীদের তালিকায় মুসলমান ও দলিতরাই আছে। বাস্তবিক সব রাজনৈতিক দল সুপরিকল্পিতভাবে দলিত ও মুসলমানদের লড়িয়ে দেয়, ফলে মারে ও মরে এই উভয় সম্প্রদায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুলিশ ও রাজ্য সরকারের ৮২টির মতো স্বশাসিত সংস্থার চেয়ারপার্সন বা কর্ণধার ও কমান্ডিং পদে কোনও দলিত ও মুসলমান আধিকারিককে বসানো হয় না। ব্যতিক্রম হয়েছিল পিএসসিতে। তবে তাঁকে দিয়ে অন্যায় কাজ করিয়ে নিতে না পারায় তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ না হতেই সরিয়ে দেওয়া হলো। তিনি (সেখ নুরুল হক, আইএএস) নিজের সম্মান বাঁচাতে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলেন ওই সময়। এটা অনেকেই জানেন। এখনও পর্যন্ত কোনও মুসলমান আধিকারিক পিএসসিতে সামান্য সদস্যও নেই। যা ভারতের অন্য রাজ্যে ভাবাই যায় না। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে কোনও মুসলিম পুলিশ আধিকারিককে ডিজি ও পুলিশ কমিশনার করা হয়নি। আমরা দেখেছি সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে মুসলমান এবং দলিত নেতাদের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকাই থাকে না।
৬৪ সালের দাঙ্গার পর রাজ্যবাসী খুব একটা বড় ধরনের দাঙ্গার মুখোমুখি হয়নি। এখন দেখতে হচ্ছে হালিশহর, বাদুড়িয়া, বসিরহাট, ধুলাগড় ও আসানসোলের মতো এলাকার দাঙ্গার ভয়াবহতাকে। ধর্মের নামে অস্ত্রের ঝনঝনানির আজ বাড়বাড়ন্ত, যেন রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে। সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য এ রাজ্যে যে সম্প্রীতির নিরাপত্তা ছিল তাও আজ সঙ্কটের মুখে। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা রোধে ও দাঙ্গা-পীড়িতদের ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের স্বার্থে কংগ্রেসের ইউপিএ সরকার যে আইন তৈরি করেছিল তা আজও সরকার আইনে পরিণত করেনি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে রক্ষা করতে আইন তৈরি করছে না কেন? উন্নয়নের নামে সব জায়গায় দলিত ও মুসলমানদের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, কিন্তু উন্নয়নের অংশে তাদেরকে ব্রাত্য করে রাখা হচ্ছে। রাজ্যে মুসলমান ও দলিতদের জমি নিয়ে বসবাসের জন্য যত উপনগরী তৈরি হয়েছে সেখানে মুসলমানদের ঠাঁই হয়নি। অল্প জায়গায় ঘেটোবাসী হয়ে বসবাস করাটাই তাদের এখন ভবিতব্য হয়ে উঠেছে। তাই কোনোরূপ অজুহাত রাজ্যের মানুষ আর শুনতে চায় না।
বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমস্ত চাকরির পরীক্ষাগুলিতে সঠিকভাবে রোস্টার মানা হচ্ছে না। এই চরম বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে এসসি-এসটি-ওবিসি-“এ” এবং ওবিসি-“বি” চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে। রোস্টার মেনেই চাকরি দিক রাজ্য সরকার। বঞ্চনার অবসান ঘটাতে বাধ্য করতে হবে সরকারকে। রাজ্যে যোগ্য সংখ্যালঘু ও দলিত আধিকারিকদের গ্যারেজ পোস্টিং দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে, এই বৈষম্য দূর করতে হবে অবিলম্বে।
২৩টি জেলায় চোখ রাখলে কোনও ডিএম ও এসপি বা কমান্ডিং পোস্টে যোগ্য ও সৎ আধিকারিক কাউকে দেখছি না। কেন চাকরিরত যোগ্য সংখ্যালঘু ও দলিতদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, কেন? এই বঞ্চনার অবসান ঘটাতে হবে। ডিজি এবং কমিশনার অফ পুলিশ পদে কখনও কোনও মুসলিম পুলিশ আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি ইতিপূর্বে। পশ্চিমবঙ্গ শাসনকালে কোনও রাজ্য সরকার এই সৎ সাহস দেখাতে পারেনি কেন? এর উত্তর আজও অজানা।
রাজ্যে সমসুযোগ ও সমবিকাশ প্রতিষ্ঠা করতে সরকার উদ্যোগী হবেন। রাজ্যের আমজনতার কল্যাণে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া এবং রক্ষা করা সরকারের প্রাথমিক কাজ। সব ধর্মের, সব বর্ণের ও সর্বশ্রেণীর মানুষের কল্যাণে সমদৃষ্টি দিয়ে রাজ্য সরকারকে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন করতে এগিয়ে আসতে হবে। কাউকে বঞ্চিত করে বা পিছনে ঠেলে রাজ্য ও দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। বিশেষ করে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চনার অবসান ঘটাতেই হবে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত শিক্ষাদান করতে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। তার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথে নামলে পুলিশ লাঠি পিটিয়ে হটিয়ে দিচ্ছে, আন্দোলন করতে বাধা দিচ্ছে।
নতুন ভাবে বাংলার কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ফেরাতে জোটবদ্ধ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিপন্ন দেশের মুক্তি সুস্থ গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখা। সংবিধান বাঁচাতে দেশবাসীকে আরও বদ্ধপরিকর হতে হবে। লোকসভা নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘুদের প্রাপ্য অধিকার সংখ্যা অনুপাতে প্রার্থী দিয়ে সৎ সাহস দেখাতে পারেনি। জোর আওয়াজ উঠেছিল রাজ্যে ৪২টি আসনের মধ্যে ১৫ জন সংখ্যালঘু মুসলমানকে প্রার্থী করুক সব রাজনৈতিক দল। বাস্তবিকই কোনও রাজনৈতিক দল সে পথে হাঁটেনি এবং সৎ সাহস দেখাতে পারেনি।
গণতন্ত্র ও সংবিধান আজ বহু রাজনৈতিক নেতাদের হাতে ধ্বংস হচ্ছে। গণতন্ত্র ও সংবিধান বাঁচাতে দেশের সাধারণ নাগরিকদের আরও সচেতন হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলায় বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নারী-শক্তির জয় জয়কার দেখে সবাই অবাক হয়েছিলেন। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৫০ শতাংশ সিটে মহিলা প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এবার লোকসভা নির্বাচনে বেশ কিছু মহিলা প্রার্থী দিয়ে সকলকেই টেক্কা দিলেন তৃণমূল দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪২টি আসনের মধ্যে অনক মহিলাকে টিকিট দিয়েছেন, যা এই রাজ্য সহ গোটা ভারতের আর কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই নজির দেখাতে পারেন নি।
এবার লোকসভা নির্বাচনে যত সংখ্যক মহিলা প্রার্থী হয়েছেন তা একটা রেকর্ড। সর্বোপরি যেভাবে মহিলা প্রার্থীরা পঞ্চায়েত ও বিধানসভার নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরিয়ে গেলে তখন দেখা যাবে বাংলা থেকে সব থেকে বেশি মহিলা সাংসদ লোকসভার সদস্য হয়েছেন। মনে হয় সাংসদীয় রাজনীতিতে নারী শক্তির জয় হবে তৃণমূল দলের হাত ধরেই।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে লোকসভা কেন্দ্রে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন যাদবপুরে সায়নী ঘোষ, উলুবেড়িয়াতে সাজদা আহমেদ, কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্র, বারাসাতে কাকলি ঘোষ দস্তিদার, বীরভূমে শতাব্দী রায়, হুগলীতে রচনা ব্যানার্জী সহ আরও অন্যদের জয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি হবে। অন্য রাজনৈতিক দলেও বেশ কিছু মহিলা প্রার্থী আছেন।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম সবসময়ই সমাজ প্রগতির লক্ষ্যে নারীর অবরোধ প্রথার বিলোপ এবং তাঁদের শিক্ষার আলোকে আলোকিত করার জন্য গুরুত্ব দিয়ে তাঁর লেখনিতে তুলে ধরেছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমকালে নারী সমাজের মুক্তির লক্ষ্যে যারা একনিষ্ঠভাবে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রণী ছিলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। নারীদের আরও বেশি করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন—-
‘সাম্যের গান গাই,
আমার চক্ষে পুরুষ রমণী কোন ভেদাভেদ নাই,
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
আশার কথা যে, সামাজিক পরিবর্তনের পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে সর্বত্র। একবিংশ শতাব্দীর এই দিনে নারী-পুরুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে হবে, আর তাহলেই কবির সার্থকতা প্রতীয়মান হবে। নির্বাচনের ফলেও আমরা দেখবো নারী-শক্তির জয় জয়কার হবে বাংলা ও দেশ জুড়ে। বাংলার ইতিহাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ জায়গা করে নিলেন সমাজের কল্যাণে অফুরন্ত কাজ করে। তবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁকে আরও কঠোর হতেই হবে।
আর্দশ ভারত গড়তে বিজেপিকে হটিয়ে ৪২টি আসনেই তৃণমূল জিততে পারবে কি না তা সময় বলবে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার মানুষ ইতিহাস তৈরি করতে পারেন। এই সুযোগ আছে। তাই বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে এবং বিভেদকামী শক্তির অবসান ঘটাতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে একটা ভোটও বিজেপিকে দেওয়া উচিত হবে কি না তা দেশবাসীর ভাবার সময় এসেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সকল ভারতীয় এগিয়ে আসুক। দেশ রক্ষার শপথ নিয়ে ভোট দিক। ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করবে না এবং গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা করবে এমন কোনও রাজনৈতিক দলের প্রধানই হোক দেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশের মানুষের কল্যাণে দলিত মুসলিমদের যৌথ উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মহামিছিল ও জনসভা সফল করতে তরুণ তুর্কী নেতারা বড় দায়িত্ব পালন করছেন। তবুও আর্দশ ভারত গড়তে বিজেপি ও কংগ্রেসকে হটিয়ে এই রাজ্যে ৪২টি আসনেই তৃণমূল জিততে পারবে না বলেই মনে হয়। যদিও ৪২টা আসনেই প্রচারের মুখ, তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল দলের আসন বাড়াতে কর্মীরা দৃঢ় প্রতীজ্ঞ। এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তিন ফিরহাদ হাকিম সহ অন্যরা জোর কদমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়।
এবার পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ আসে কি সেটাই দেখার।
দলিত-মুসলিমদের যৌথ উদ্যোগেই ঐতিহ্যময় ভারত গড়তে দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। আদি ভারতবাসীদের নিজেদের মধ্যে লড়িয়ে দিয়ে কারা ক্ষমতায় আছেন এতো বছর? ভাবুন একবার আর জেগে উঠুন। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করবেন না। ভাবুন একবার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বাবরী মসজিদ ভেঁঙ্গেছে বিভেদকামী শক্তি কি কারণে? স্রেফ বিভাজনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা তুলবে বলে। বহুজন সমাজের মানুষ ও মুসলিমদের সজাগ থাকতে হবে। ধর্মীয় আবেগের জন্য কোনো ভুল পথে পরিচালিত হলে বিভেদকামী শক্তির উত্থান রোখা যাবে না। কোথাও কখনও উস্কানিমূলক বক্তব্য শুনে প্রভাবিত হবেন না। প্রভাবিত হলে চলবে না। বরং বিভেদকামী শক্তির বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের দেশ ভারতকে বিপথে চালিত করার হাত থেকে রক্ষা করুন। মনে রাখতে হবে দলিত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ওপর যে চরম বৈষম্য ও বঞ্চিত করার চক্রান্ত চলছে তার প্রতিকার করতে হলে জোটবদ্ধ হতে হবে।
৭৫ বছর পেরিয়ে গেছে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তবুও আদি ভারতবাসীর প্রকৃত কল্যাণে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা তেমন ভালো কাজ করতে পারেননি।
নিজেদের মধ্যে আর মারামারি নয়। কোনও বিবাদ থাকলে তা এড়িয়ে চলুন। একটু বিচার ও বিশ্লেষণ করুন, কে বা কারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে এই বিবাদ ও বিভাজনের রাজনীতির উত্থান ঘটিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো ফায়দা লুটতে চাইছে কোন কৌশল অবলম্বন করে তা বুঝতে হবে। প্রতি নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকাতে কাদের নাম উঠে এসেছে? দেখা যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলিম ও বহুজন সমাজের দলিত মানুষদের নাম। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা চলছে কে কতটা বেশি দলিত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ব্যবহার করতে পারবে এবং তাদের নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে সক্ষম হবে।
ভারতীয় ঐতিহ্যময় ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে জোটবদ্ধ হয়ে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে এবং হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে।
সকলেই অবগত আছেন, বিভেদকামী শক্তি ভারতকে বিপথে চালিত করছে। তাই এখন আর কোনো বিভাজনের রাজনীতির উত্থানের পেছনে থাকলে চলবে না। বাংলার মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের মানুষের কল্যাণে বড় কাজ করছেন। বাংলা ও দেশকে বাঁচাতে তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী করার সুযোগ করে দিন।
ভারতে আসামের ধাঁচে পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) কার্যকর করে অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের দাবি জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তাতে অবশ্য হিন্দু শরণার্থীদের বিতাড়নের কোনও প্রশ্ন নেই বলে জানিয়েছেন এবং তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে সাফাই দিয়েছেন। সম্প্রতি সংগঠনটির রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এনআরসি ছাড়াও ‘ঘর ওয়াপসি’, ‘লাভ জিহাদ’, ‘ল্যান্ড জিহাদ’ ইত্যাদি বিতর্কিত ইস্যুতে মাঠে নামার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ‘ঘর ওয়াপসি’ (বিভিন্ন কারণে যারা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, তাদেরকে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা) বা ‘ঘরে ফেরানো কর্মসূচি’ রূপায়ণের জন্য দুর্গাবাহিনী ও বজরং দলের সদস্যদের নিয়ে একটি মঞ্চ গঠন করা হয়। এর পাশাপাশি কাজে লাগানো হয় মঠ-মন্দির ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে। তাদের অভিযোগ, এখানে হিন্দুদের দেবত্তর সম্পত্তি ও হিন্দুদের সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেওয়া হচ্ছে এবং কম দামে কিনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘ল্যান্ড জিহাদ’ চলছে। অন্যদিকে, তারা কথিত ‘লাভ জিহাদ’ (হিন্দু নারীদের ভালবাসার ছলে ধর্মান্তরকরণ) রুখে দিতে মানুষজনকে বোঝাতে বাড়ি বাড়ি প্রচার করছে। এইসব বিভাজন করে ভারতের ও বাংলার সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারবে না বিজেপি ও আরএসএস।
পশ্চিমবঙ্গে ওরা কখনও সফল হবে না। পশ্চিমবঙ্গে ওরা একবিন্দুও সফল হতে পারবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য ছোটখাট দাঙ্গার মধ্য দিয়ে মানুষকে বিভক্ত করার চক্রান্ত করেও ওরা চরমভাবেই বাংলায় ব্যর্থ হয়েছে। বিভাজনের রাজনীতি করে সম্প্রীতির বাংলায় কখনও সফল হবে না বিজেপি। বাংলার মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। দেশের বৈধ নাগরিকদের অন্যায়ভাবে বিদেশি বানিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দেশবাসী সোচ্চার হচ্ছেন, এটাই আশার আলো। আমরা আগে দেখেছি বিজেপি সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে বিভাজন করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছে। আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে লাখ লাখ বৈধ নাগরিকদের নাম বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র কোন উদ্দেশ্যে তা আমরা বুঝতে পারছি। এভাবে আসাম থেকে বাঙালি মুসলিম ও হিন্দুদের খেদিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না কেন্দ্র ও আসাম সরকার।
আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ভারতকে ওরা ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ বানাতে পারবে না। ভারতের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। সংবিধানকে কলঙ্কিত করার উদ্যোগ সুস্থ নাগরিকরা মেনে নেবেন না। মিশ্র সংস্কৃতিই আমাদের বৈভব। সম্প্রীতির দেশ ভারত। ভারতীয় সংবিধানের অমর্যাদা প্রকৃত ভারতবাসীরা মেনে নিচ্ছে না। ভারতকে যারা অপবিত্র করছে তারা মানুষ নয়, মানুষ নামের অন্য কিছু। ভারত আমাদের মাতৃভূমি। যেভাবে ওরা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে তাতে ভারত গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে অন্য দেশের থেকে।
পশ্চিমবঙ্গে কোনোরকমভাবে ওরা দাঁত ফোটাতে না পেরে এখন একেকটা ইস্যু তোলার চেষ্টা করছে। এখানে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদা সব ধর্ম, সব বর্ণের মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন। যেজন্য গোটা ভারতের বিরোধীশক্তি মমতা বন্দোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী করতে চাইছেন। সেই ভয়ে বিজেপি এখন পশ্চিমবঙ্গে আশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। মহান ভারতকে ওরা আর কত নীচে নামাবে! আশা করি ভারতবাসী লোকসভা নির্বাচনে যোগ্য জবাব দেবেন। এবার লোকসভা ভোটে দেশের সুনাগরিকরা বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করবেন।

বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে পারবেন বিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী ও অন্য সব বিরোধী শক্তি।
ভারতের সংবিধানে যে মৌলিক অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরার প্রয়াসে অনেক কিছু জানা যাবে। নিজেদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন হতে পারবো।

মৌলিক অধিকার
ভারতের সংবিধানের তৃতীয় অংশে ১২ থেকে ৩৫ নম্বর ধারায় ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কোনো আইন ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি ক্ষুন্ন করতে পারে না। এই বৈশিষ্ট্য বিশ্বের খুব কম সংবিধানেই পরিলক্ষিত হয়। ভারতের সংবিধানের মৌলিক অধিকারগুলি লিখিত ভাবে স্বীকৃতিদানের ফলে নাগরিকদের ব্যক্তি স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করেছে। এই অধিকারগুলির মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। মূল ভারতীয় সংবিধানে সাত প্রকারের মৌলিক অধিকারের উল্লেখ থাকলেও ১৯৭৮ সালে ৪৪তম সংশোধনীর দ্বারা সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সরকার অধিকার ভাঙলে সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে তার প্রতিকার করা যায়।
বর্তমানে মৌলিক অধিকার ৬টি নিম্নরূপ :
(১) সাম্যের অধিকার : জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী, পুরুষ নির্বিশেষে প্রতি নাগরিকের সমান অধিকার।
(২) স্বাধীনতার অধিকার : বাক ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, ইউনিয়ন গঠন, দেশের সর্বত্র স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার।
(৩) শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার : বিনা বেতনে বেগার খাটানো, মানুষ ক্রয় বিক্রয়, ১৪ বছরের কম বয়সের শিশুদের কারখানা বা খনির কাজে লাগানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
(৪) ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার : কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হতে পারেন এবং কোনো নাগরিককে বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা যাবে না। ব্যক্তির ইচ্ছে অনুযায়ী ধর্ম পালন করার অধিকার আছে।
(৫) সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার : নাগরিকদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও শিক্ষার অধিকার মৌলিক অধিকারের ভিতর ধরা হয়েছে।
(৬) সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার : কোনো নাগরিক উপরিউক্ত অধিকারগুলি বা কোনো একটি অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে তিনি সুপ্রিম কোর্টে প্রতিকারের জন্য আবেদন করতে পারেন।
সংবিধানে নাগরিকদের কর্তব্যের কথাও বলা হয়েছে। যথা — সমাজের মঙ্গলের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থত্যাগ, আইন মেনে চলা, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রভৃতি। সংবিধানের নির্দেশক নীতি দ্বারা জনকল্যাণমূলক নির্দেশক নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। অধুনা এই নির্দেশক নীতিকে বাধ্যতামূলক করার প্রবণতা সংবিধানে দেখা যায়। ভারতের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি অবাধ নয়। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অধিকারগুলির ওপর যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যেমন:
(১) রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানো,
(২) আদালত অবমাননা,
(৩) অশালীনতা প্রভৃতি ঘটনা ঘটলে ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা যায়,
(৪) বিশেষ পরিস্থিতিতে ভারতরাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলিকে সাময়িক ভাবে নিয়ন্ত্রিত বা খর্ব করতে পারে,
(৫) দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলে ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলিকে খর্ব করা যায়।

বাংলার মানুষের কল্যাণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে। বাংলার সকল ধর্মের ও বর্ণের সচেতন মানুষ শান্তিময় জীবন অতিবাহিত করতে চান তাই বাংলাকে পবিত্র রাখতে তাঁরা বিভেদকামী শক্তিকে প্রতিহত করবেই, এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। পুলিশ ও প্রশাসনে কোনও আধিকারিক বিভেদকামী শক্তির হাতে পরিচালিত হলে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। মোদির জামানার পতনের মধ্য দিয়ে দেশ আবার নতুন করে স্বাধীন হবে, এই আশায় সাধারণ মানুষ।
মানুষের পাশে থেকে সার্বিক কল্যাণে কাজ করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বদ্ধপরিকর। এই মুহূর্তে তিনিই একমাত্র ভরসা। বামফ্রন্টের আমলে চৌত্রিশ বছরের শেষের দিকে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে যা অগ্রগতি হয়েছে তা ড. আবদুস সাত্তার-এর হাত ধরে। সংখ্যালঘুদের কল্যাণে প্রকৃত অর্থে বিপুল পরিমাণে যিনি কাজ করেছিলেন তিনি হলেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়। ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ জুন পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, ওই সময় চাকরিতে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব ছিল ৮ শতাংশ, যা অন্যদের সময় নেমে এল ২ শতাংশে। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়-এর আমলে আটজন সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ গুরুত্বপূর্ণ দফতরে মন্ত্রী ছিলেন এবং দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সার্বিক বিচারের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন একমাত্র আশার আলো। তাঁর রাজত্বের সময় কলকাতার মেয়র পদে কর্মরত রয়েছেন একজন মুসলমান নামের মানুষ। তিনিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বর্তমানে একই সঙ্গে তিনি মন্ত্রী ও মেয়র পদে আসীন। এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের কল্যাণে কত দূর যেতে পারেন তা আগামী সময় বলবে।

“অনেক হয়েছে শাসন
এবার বিজেপির বিসর্জন”

কেউ বলছেন ‘বেলুরঘাট’, কেউ লিখছেন ‘মালদহ পূর্ব’ কেন্দ্র! ঠিক এই কারণেই আমরা বিজেপিকে ভোটের পরিযায়ী পাখি বলি। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহকে একপ্রকার উপেক্ষা করে, মালদহ দক্ষিণের জনসভায় যে জন-বিস্ফোরণ ঘটলো, তাতে আমি নিশ্চিত এই কেন্দ্রে যতই বিজেপি, সিপিআইএম এবং কংগ্রেস তলে তলে জোট বাঁধুক না কেন, মানুষের পূর্ণ সমর্থন আমাদের সঙ্গে আছে।

এখানকার বিদায়ী সাংসদ এই কেন্দ্রের একটা বুথের উন্নয়নের জন্য সংসদে সোচ্চার হয়নি। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে পারি, মালদহ দক্ষিণের মানুষ এবার জোড়াফুলের সুশিক্ষিত প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রায়হানকে দু’হাত ভরে সমর্থন করবেন। কারণ এইরকম প্রার্থী সংসদে গেলে দেশের উন্নতির সঙ্গে দশেরও উন্নতি অবশ্যম্ভাবী।” এদিন মূল্যবান বক্তব্য রাখেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে ঐতিহাসিক প্রকল্পের জন্যই সাধারণ মানুষের আর্শীবাদ পাবেন। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত শুধু সময়ের অপেক্ষা। . কন্যাশ্রী . স্ববলম্বন . সবলা . লক্ষ্মীর ভাণ্ডার . সবুজ সাথী . খাদ্যসাথী . আনন্দধারা . গতিধারা . ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান ১০. সমব্যাথী ১১. মিশন নির্মল বাংলা ১২. স্বাস্থ্য সাথী ১৩. শিশু সাথী ১৪. পথ সাথী ১৫. গীতাঞ্জলি ১৬. লোকপ্রসার ১৭. শিক্ষাশ্রী ১৮. শিশু আলয় ১৯. যুবশ্রী ২০. খেলাশ্রী ২১. বিশেষ উল্লেখ: সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ ২২. স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড ২৩. বয়স্কদের জন্য মাসিক ভাতা সহ একাধিক প্রকল্প বিশ্ব জয় করেছে। আর কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প তো ঐতিহাসিক। বাংলার সমাজ জীবনের এমন কোন দিক নেই যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের হস্ত প্রবেশ করেনি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মমতার কোন না কোন প্রজেক্ট আছেই এবং তা সকলেই ভোগ করে। মুখ্যমন্ত্রীর কোন না কোন প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছে না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল এই বঙ্গে, তা সে বিরোধী হোক বা সরকার পক্ষের। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাস, যোগাযোগ, কৃষি, বিভিন্ন রকম ভাতা, স্কলারশিপ-পরিষেবার যেন শেষ নেই। এই বয়সেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে সারা পশ্চিমবঙ্গ চষে বেড়াচ্ছেন, মানুষের সুখ-দুঃখ সরজমিনে দেখছেন এবং সমাধান করছেন তা ভাষায় বর্ণনীয় নয়। যে যাই বলুক না কেন প্রত্যেককে তার অন্তর বিবেচনায় স্বীকার করতেই হবে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হলেন বাংলার নব রূপকার।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *