Breaking News

স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং চারণকবি মুকুন্দ দাস

স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং চারণকবি মুকুন্দ দাস (জন্মঃ- ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৮৭৮ – মৃত্যুঃ- ১৮ মে, ১৯৩৪)

১৯০৩ সালে ‘সাধন সঙ্গীত’ নামে মুকুন্দ দাসের একটি গানের বই বরিশাল থেকে প্রকাশিত হয়। তাতে শতাধিক গান স্থান পায় জীবনের প্রথম পর্যায়ে। দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় কালীসাধক সনাতন চক্রবর্তী ওরফে সোনা ঠাকুরের প্রেরণায়। এই সময়েই তার মধ্যে প্রবল দেশাত্মবোধক প্রেরণা দেখা দেয়। দেশের মানুষকে পরাধীনতার বিরুদ্ধে ও নানা প্রকার সামাজিক দুর্দশার বিরুদ্ধে সচেতন করার উদ্দেশ্যে তিনি গান ও যাত্রা রচনায় মনোনিবেশ করেন। বরিশালের অশ্বিনীকুমার দত্তের সংস্পর্শে রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন মুকুন্দ দাস। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বরিশালে তুমুল ইংরেজবিরোধী বিক্ষোভ দেখা দেয়। মুকুন্দ দাস নিজে এই বিক্ষোভে অংশ নেন এবং একের পর এক গান, কবিতা ও নাটক রচনা করে বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে নূতন উদ্দীপনার সঞ্চার করেন। তিনি অশ্বিনীকুমারের আগ্রহে মুকুন্দদাস মাতৃপূজা নামে একটি নাটক রচনা করেন। দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীতে নবগ্রামে এই নাটকের প্রথম প্রকাশ্য যাত্রাভিনয় হয়। সুঅভিনেতা মুকুন্দ নিজেই স্থানে স্থানে এই পালা অভিনয় করে বেড়াতে থাকেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলার অভিযোগে ইংরেজ সরকার এই পালা রচনা ও প্রচারের জন্য মুকুন্দ দাসকে প্রেপ্তার কর এবং সরকার মাতৃপূজা নাটকটি বাজেয়াপ্ত করে। বিচারে মুকুন্দ দাসের তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়। কিছু দিন বরিশাল জেলে রাখার পর মুকুন্দ দাসকে দিল্লি জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। মুকুন্দ দাস কারাবসে থাকাকালীন তাঁর স্ত্রী সুভাষিণী দেবীর মৃত্যু ঘটে।

তিন বছর পর জেল থেকে মুক্তিলাভের পর মুকুন্দ দাস বরিশালে ফিরে আসেন। এ সময় চিত্তরঞ্জন দাশ ও সুভাষচন্দ্র বসুর অনুপ্রেরণায় নতুন করে যাত্রার দল গঠনে উদ্যোগী হন এবং পুনরায় পালা রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯১৬ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আমন্ত্রণে মুকুন্দ দাস তার যাত্রার দল নিয়ে কলকাতা যান। কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে সে দলের অভিনয় হয়। মহাত্মা গান্ধী আহূত অসহযোগ আন্দোলনের সময় মুকুন্দ দাস মাতৃপূজা কর্মক্ষেত্র, পল্লীসেবা প্রভৃতি যাত্রাপালা রচনা করেন। এছাড়াও মুকুন্দদাসের রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ , সমাজ, আদর্শ, পল্লীসেবা, সাথী, কর্মক্ষেত্র, ব্রহ্মচারিণী, পথ ইত্যাদি। মুকুন্দ দাসের এসব যাত্রাপালাকে বাংলা নাট্যসাহিত্যে সংগ্রামী সংযোজনরূপে গণ্য করা হয়। দেশ বিখ্যাত চারণ কবি ও স্বদেশী পল্লী অঞ্চলের তৃণমূল মানুষের সুখ দুঃখের কাহিনীর গান ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কবি মুকুন্দ দাশ এর অবদান অপরিসীম। মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম জাগাতে, দেশের পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার প্রেরণা জোগাতে তিনি গান গেয়ে ও যাত্রাভিনয় করে স্থানে স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মুকুন্দ দাস কলিকাতা থাকাকালে একবার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার সঙ্গে দেখা করেন।তিনি তাকে গান গেয়ে শোনান ও তার লেখা কয়েকটি বই উপহার দেন।

স্বদেশী যাত্রার প্রবর্তক মুকুন্দ দাস ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার বানরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতার নাম গুরুদয়াল দে এবং মাতার নাম শ্যামাসুন্দরী দেবী। মুকুন্দ দাসের বাবার দেওয়া নাম ছিল যজ্ঞেশ্বর দে এবং ডাক নাম ছিল যজ্ঞা। তবে মুকুন্দ দাস নামেই তিনি খ্যাত হন। বরিশালে বৈষ্ণব সন্ন্যাসী রামানন্দ অবধূত যজ্ঞেশ্বরের গলায় হরিসংকীর্তন ও শ্যামাসঙ্গীত শুনে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে দীক্ষা দিয়ে তাঁর নাম রাখেন মুকুন্দদাস। এ ছাড়াও আসামের এক প্রতিষ্ঠান তাকে ‘চারণসম্রাট’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। মুকুন্দ দাসের পিতা গুরুদয়াল বরিশালে চাকরি করতেন। মুকুন্দ দাসের জন্মের পর বিক্রমপুরের বানরী গ্রাম পদ্মা নদীতে তলিয়ে গেলে তাঁরা সপরিবারে গুরুদয়ালের চাকরিস্থল বরিশাল শহরে চলে আসেন। শৈশব থেকে মুকুন্দ পিতার সঙ্গে বরিশালে ছিলেন। ফলে সেখানকার বাসিন্দারূপেই তিনি পরিচিত হন। বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে মুকুন্দকে ভর্তি করানো হলেও পড়াশোনায় তেমন অগ্রগতি হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা দেশব্রতী অশ্বিনীকুমার দত্তের সঙ্গে কিশোর বয়সেই মুকুন্দের পরিচয় হয়। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে গুরুদয়াল একটি ছোট মুদির দোকান দিয়েছিলেন। এই দোকানটি নিয়েই মুকুন্দের কর্মজীবন শুরু হয়। সে সময় বরিশালের নাজির ছিলেন বীরেশ্বর গুপ্ত। তিনি ছিলেন সুকণ্ঠ কীর্তনীয়া। তার কীর্তনের দল ছিল। মুকুন্দ তার দলে যোগ দেন ও শিগগিরই কীর্তন গায়করূপে সুখ্যাতি অর্জন করেন। বীরেশ্বর গুপ্ত মারা গেলে মুকুন্দ নিজেই কীর্তনের দল গঠন করেন ও নানা স্থানে কীর্তন পরিবেশন করতে থাকেন। তার গান রচনাও শুরু হয় সে সময় থেকেই।

১৯৩৪ সালের ১৮ মে কলকাতায় যাত্রা পরিবেশন করতে গেলে মুকুন্দ দাস হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৬বছর বছর।

রচনা
মুকুন্দদাসের রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মাতৃপূজা, সমাজ, আদর্শ, পল্লীসেবা, সাথী, কর্মক্ষেত্র, ব্রহ্মচারিণী, পথ ইত্যাদি।

ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে,
মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে।।
তাথৈ তাথৈ থৈ দ্রিমী দ্রিমী দং দং
ভূত পিশাচ নাচে যোগিনী সঙ্গে।
দানব দলনী হয়ে উন্মাদিনী,
আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে।।
সাজ রে সন্তান হিন্দু মুসলমান
থাকে থাকিবে প্রাণ না হয় যাইবে প্রাণ।।
লইয়ে কৃপাণ হও রে আগুয়ান,
নিতে হয় মুকুন্দে-রে নিও রে সঙ্গে।।

ছল চাতুরী কপটতা মেকী মাল আর চলবে ক’দিন?
হাড়ি মুচির চোখ খুলেছে, দেশের কি আর আছে সেদিন।।
খেতাবধারী হোমরা চোমরা, নেতা বলেই মানতে হবে,
মনুষ্যত্ব থাক কি না থাক, তাঁর হুকুমেই চলবে সবে।
সত্যকে পায়ে দলবি তোরা আসন চাইবি বিশ্বজোড়া ।
হবে না তা নবীন যুগে হোস না তোরা যতই প্রবীণ।

লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত

About Prabir Mondal

Check Also

বাঘ গুনতে সুন্দরবনে বসছে ১৪৪৪টি ক্যামেরা

টুডে নিউজ সার্ভিসঃ বাঘের সংখ্যা জানার জন্য আবার সুন্দরবনের জঙ্গলে বসতে চলেছে ক্যামেরা। প্রতিবছর শীতের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *