টুডে নিউজ সার্ভিসঃ শাল-পিয়ালের ছায়ার মায়ায় জড়িয়ে পথ চলেছে পাহাড় জঙ্গল পেরিয়ে। উঁচু নিচু বন্ধুর পথে নুড়ি পাথরের মসমসে শব্দ, চেনা অচেনা পাখিদের কিচির মিচির, ঝরা পাতার মুচমুচে আওয়াজে ক্ষণে ক্ষণেই মন সচকিত। তবে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায় ভয় একটাই, হাতিদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অভিন্ন রাস্তার অধিকার সবার সমান। আমলাশোলে একটি সদ্য নির্মিত সাজানো গোছানো জঙ্গল কুঠীর, বাকিটা ক্রমশ প্রকাশ্য।
কিভাবে পৌঁছবেন :
৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে লোধাশুলিমোড় থেকে ঝাড়গ্রাম হয়ে বেলপাহাড়ির উপর দিয়েই আসা যায় আমলাশোল গ্রামের অন্দরে। বেলপাহাড়ি মোড়ের মাথা থেকে দুই পথের গন্তব্য একটাই। বাঁ হাতে ওদলচুয়ার মোড় থেকে কাঁকড়াঝোড়ের পথে যেতে না চাইলে সোজাসুজি বাঁশপাহাড়ি, চাকাডোবা হয়েও চলে আসা যায়। তবে অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য ভুলাভেদা জঙ্গলের মধ্যবর্তী পথ আদর্শ হতে পারে।
ঘাটশিলা স্টেশন থেকে মাত্র ২২ কিমি । অটো ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা । ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে দূরত্ব ৬৫ কিমি l
এবার আসা যাক রুট অনুযায়ী বেড়ানোর গল্পে. . .
▪️ কাঁকড়াঝোড়
দেড় কিলোমিটার হাতি করিডোর পেরিয়ে কাঁকড়াঝোড় অতিথি নিবাস, ধীর গতির ছন্দে বয়ে চলেছে কাঁকড়াঝোড় নদী। প্রাচীন শাল জঙ্গলের মধ্যে সেকালের ভবানী থান, নদীর পাড়ে শিব মন্দির, জামবাঁধ জলাধার একে একে সবগুলোই দেখে নেওয়া যেতে পারে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে। একই সঙ্গে ঢাঙ্গিকুসুম ঝরনা ১৫ কিলোমিটার দূরে | সবুজ পাহাড় দেখতে দেখতে কেটে যাবে সময়। ফেরার পথে ওদলচুয়া মোড় থেকে বামহাতি রাস্তা ধরে রঙিন পাহাড়ের সৌন্দর্যে মন ভরিয়ে চলে যাওয়া যেতে পারে জঙ্গলের অন্দরে কেতকি লেক। গোধূলির সূর্যাস্তে মন্দ লাগার কথা নয়।
▪️ বেলপাহাড়ি
প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে গহীন অরণ্যের মধ্যে দিয়ে এক জল সুন্দরী খাঁদারানী লেক। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে নিজেকে রানীর বেশে রাঙিয়ে নিয়েছে খাঁদারানী। দিগন্তবিস্তৃত পাড় জুড়ে সবুজ সবুজ আর সবুজ পাহাড়, প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফেরার পথে লালজল পাহাড়ের উপরে প্রাকৃতিক গুহায় সেকালের সাধুদের সাধনাস্থল, গাড়রাসিনি আশ্রম | অদূরেই কালো পাথরের নদী #ঘাগরা , বর্ষায় এর অনন্য রূপ |
▪️ ঘাটশিলা
দক্ষিণের পথ ধরে ঘাটশিলা যাওয়ার পথে পাঁচ-ছয় কিলোমিটারের মধ্যে বুরুড়ি ড্যাম। ওখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে পাহাড় জঙ্গলের মধ্যে ধারাগিরি দেখে ফেরার পথে ভুমরু_গুহা, সবমিলিয়ে ঘুরে আসতে সময় লাগবে ঘন্টা তিনেক।
বেড়ানোর জন্য গাড়ির ভাড়া :
দিনপ্রতি বড় গাড়ির জন্য ভাড়া ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা | আর ছোট গাড়ির জন্য ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা ।
পায়ে হেঁটে :
পায়ে পায়ে শাল পিয়ালের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ময়ূর ঝরনা, সেও এক আশ্চর্য ঠিকানা। মাত্র এক থেকে দেড় কিলোমিটার, নিশ্চিন্ত মনে চলে যাওয়া যেতে পারে পাখিদের গান শুনতে শুনতে। আমলাশোল খেলার মাঠ পেরিয়ে কমিউনিটি হলের পাশ দিয়ে ছুরিমারা যাওয়ার রাস্তায় কিছুদূর গিয়ে ডানহাতি পথে ঘুরে গেলে গভীর অরণ্যের মধ্যে দিয়ে বকডুবা জঙ্গল সাফারি। ময়ূর দেখা, ময়ূরের ডাক শোনার জন্যও পড়ন্ত বিকেল আদর্শ। তবে হাতির ভয়ে অল্পবিস্তর গা ছমছম করলেও করতে পারে এই যা।
ওয়াচ টাওয়ারের মাথায় চড়ে এক ঝলকেই ভালোলাগা আপন হয়ে যায়। দুই পায়ের জোরে একে একে দেখে নেওয়া যায় মুণি আশ্রম, পুন্নাজল, ফরেস্ট ড্যাম, খোচলা পাহাড়। দিগন্তবিস্তৃত সবুজ সৌন্দর্যের মাঝে মন হারিয়ে ঘুরে আসতে ঘন্টা তিনেক
লেখা ও ছবি – উৎপল নাগ
Social