বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, উত্তর ২৪ পরগনাঃ মজুমদার পরিবারের সদস্যদের চোখে জল। বাড়িতে চলছে পরিবারের এক সদস্যের পারলৌকিক ক্রিয়া। দীর্ঘ ২৫ বছর তার এই বাড়িতেই কেটেছে। সকলে তাকে আদর করে ভক্ত নামে ডাকত। গত ২৫ বছর এই বাড়িতে কিভাবে কাটিয়েছে সে সব স্মৃতি বারবার উঠে আসছে পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের মুখে। চোখের জল মুছতে মুছতে ভক্তর ছবিতে মালা দিয়ে পবিত্র মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে চলছে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।
ভক্ত কে? ভক্ত আসলে একটি পোষ্য টিয়া পাখি। তবে হিন্দু পরিবারের কেউ মারা গেলে যেভাবে পারলৌকিক ক্রিয়া করা হয় সেভাবেই করা হচ্ছে ভক্ত-র পারলৌকিক কাজ। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায়। এতদিন যে পরিবারের সঙ্গে পাঠিয়েছে সেই মজুমদার পরিবারের সদস্যদের এদিনও চোখে জল ছলছল করছে। যেন শোক কিছুতেই তারা ভুলতে পারছে না। গত সপ্তাহে বাড়িতে চলছিল অনুষ্ঠান, সেখানেই মাইকের আওয়াজে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে পোষ্য টিয়া ‘ভক্ত।’ মুহূর্তেই পরিবারের মধ্যে তৈরি হয় চাঞ্চল্য। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না কেউই। সুস্থ ভক্ত হঠাৎই হয়ে পড়ে অসুস্থ। ছুটে আসে আশপাশের এলাকার মানুষজনও। আসবে নাইবা কেন, কারণ তাদের প্রিয় ভক্ত হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েছে যে। তবে এভাবেই মুহূর্তের মধ্যে ভক্ত যে সকলকে ছেড়ে চলে যাবে তা তাঁরা কল্পনাতেও ভাবতে পারেননি। মৃত পোষ্য ভক্ত-র দেহ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে গঙ্গায় কলার ভেলায় ফুল মালা দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। আর তারপর থেকেই ফল ও সিদ্ধ ভাত খেয়েই অশুচ পালন করেন গোটা পরিবার।
এদিন পুরোহিত ডেকে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই হল ভক্ত-র টিয়ার পারলৌকিক কাজ। শুধু তাই নয়, শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের পর করা হয় মৎস্যমুখীরও আয়োজন। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পরিবারের সকল সদস্যই ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, পরের জন্মে ভক্ত যেন মানুষ হয়েই জন্মায় এই পরিবারে। ভক্ত না থাকায় আজ অনেকটাই যেন ফাঁকা গোটা বাড়ি।
Social