সেখ সামসুদ্দিন, মেমারিঃ মালিকপক্ষের ব্যক্তিগত ঝামেলায় এক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় প্রধান শিক্ষক-এর সামনে খুলে দেওয়া হলো কলেজ। ঘটনাটি ঘটেছে মেমারি থানার অন্তর্গত দুর্গাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনস্থ চোটখন্ডগ্রামের ‘কবি নজরুল ইসলাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজ’-এ। দীর্ঘ করোনাকালে সমস্ত সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর গত কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলে গেলও, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের কথায়, তারা সরকারের নির্দেশ মতো যথাসময়ে কাজে যোগ দিলেও মালিকপক্ষের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে তারা কোনো রকম নোটিশ ছাড়াই কলেজের প্রধান দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর কেটেছে কয়েক মাস কিন্তু শিক্ষালয়ের দরজা খোলেনি। শিক্ষকরা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় সুফল না পাবার পর তারা পঞ্চায়েত ও গ্রামবাসীদের দ্বারস্থ হয়।
অবশেষে ২০ মার্চ গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে শিক্ষকদের সামনে প্রতিষ্ঠানের তালা খুলে দেয় এবং তারা বলেন মালিকপক্ষের যদি কোনো রকম সমস্যা থাকে তবে তা কলেজের বাইরে মিটমাট করুক। এই কলেজে পঠনরত প্রায় ২০০ ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছেলেখেলা করা যাবে না ।
তবে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ব্যাপারে মালিকপক্ষের কোনো বক্তব্য সেদিন পাওয়া যায়নি। এরপর ২৮ মার্চ সোমবার মালিকপক্ষের দ্বিধাবিভক্ত থাকা একপক্ষ এসে পুনরায় তালা ঝুলিয়ে দেয় সেখানে মিডিয়ার সামনে সৌম্য চন্দ, দেবকুমার দাস, স্বরূপ দাশগুপ্ত ও অরুণকুমার বোসের পক্ষ থেকে বলা হয় মালিকপক্ষের সমস্যা মিটুক চাইছি কিন্তু যতক্ষণ না মিটছে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে কলেজ চলুক। তবে তাদের দাবি উভয় পক্ষের দুইজন করে স্টাফ থাকুক শুধু এক পক্ষের স্টাফ নিয়ে কলেজ চালনার বিরোধিতা করছেন মাত্র। তাছাড়াও দাবি করেন আর্থিক তছরূপ করা হয়েছে, তাদের মারধর করা ও বাড়িতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
পাল্টা ২৯ মার্চ মঙ্গলবার দ্বিতীয় পক্ষ মহঃ কে আবেদিন, হীরালাল কৈরী, মৃগাঙ্ক কুমার সাহা, এহিয়া লায়েক প্রমুখ মিডিয়ার সামনে একই অভিযোগ করেন। তারাও বলেন ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে কলেজ খোলা থাকুক যতক্ষণ না মালিকপক্ষের সমস্যা মিটছে কেউ কলেজে প্রবেশ করবে না। তারাও জানান তাদের বিরুদ্ধে গুন্ডা লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে, খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হীরালাল কৈরী দাবি করেন তার যদি কোন অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার জন্য দায়ী থাকবে প্রথম পক্ষের চারজন। দুঃখজনকভাবে দ্বিতীয় পক্ষের মিডিয়া কভার করছিলেন তখন প্রথম পক্ষের ট্রাস্ট মেম্বারদ্বয় ও স্বরূপ দাসগুপ্ত ও সৌম্য চন্দ ফোন করে আটকানোর চেষ্টা করেন। তাদের কাছে জানা যায় আমাদের মিডিয়ার কোনো বন্ধুর কাছে আমার ফোন নম্বর সহ তারা জানতে পারেন। যাই হোক আবেদিন সাহেবরা জানান তাদের বিরোধী পক্ষ স্বরূপ দাসগুপ্তরা দ্বিতীয় পক্ষকে ট্রাস্টি থেকে বের করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আদালতে গেছে। তারা আদালতে মামলা চলাকালীন কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন না। তারা আদালতের রায় নিয়ে এসে আমাদের বের করে দিক, মেনে নেব। নচেৎ আদালত থেকে মামলা তুলে নিয়ে এসে সমস্যা মেটাতে আসুক। একই সঙ্গে ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সমস্ত হিসাব মিটিয়ে দিক। আবেদিন দাবি ছিল হিসাব অডিট করতে হবে। এত বছর কলেজ চলছে কোনো ক্যাশবুক নেই। সৌম্য চন্দ ২০১৫ সাল থেকে মাসিক ৫০ হাজার টাকা তুলেছেন অথচ রেজুলেশন করে পাশ করানো হয় ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর। কত টাকা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ নেই অডিট রিপোর্টে। হীরালাল কৈরী ও মৃগাঙ্ক কুমার সাহা ২০১৯ সালে আক্রান্ত হয়ে কালনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করার তথ্য সহ অভিযোগের সপক্ষে তথ্য দেন। উল্লেখযোগ্য তথ্যগুলি হল- কলেজ নির্মাণের আগে ট্রাস্ট গঠন, কলেজের জন্য জমি ক্রয়ের ডিড, বিভিন্ন সময়ের অডিট রিপোর্ট, আদালতে মামলার নথি, কোর্টে জমাকৃত নথির তালিকা, অরুণ বোসের পদত্যাগ পত্র, মালিকপক্ষের সমস্যা নিরসনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন চিঠি, উভয়পক্ষের পত্র বিনিময়ের তথ্য সহ সংবাদ প্রতিনিধিকে দেওয়া হয়। সেই সকল তথ্যের ভিত্তিতে কলম চলবে।