Breaking News

বালুরঘাটে শ্রী শ্রী বুড়াকালী মাতার মন্দির

অরুণাভ দত্ত, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার শতাব্দী প্রাচীন কালী পুজোর মধ্যে অন্যতম হল বালুরঘাট তহবাজার এলাকার বুড়াকালী মাতার পুজো।  সেই পুরোনো রীতি রেওয়াজ মেনেই এখনও বালুরঘাট বুড়াকালী মাতার পুজো হয়। তবে কাল স্রোতে ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে পুজোর কিছু নিয়ম রীতির পরিবর্তিত হয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন হলেও এই বুড়াকালী মাতার পুজোকে কেন্দ্র করে জেলাবাসীর মনে অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। প্রতিবছর কার্ত্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর দিন এই পূজাকে ঘিরে দর্শনার্থীদের ঢল চোখে পরার মতো। চৈত্র সংক্রান্তির দিন বালুরঘাটে আত্রেয়ী নদীর তীরবর্তী কংগ্রেস ঘাটে মাশানকালীর মন্দিরে পাঁঠা বলি সহ মাশানকালীর পুজোর পর রাতে বুড়াকালী মায়ের পুজো শুরু হয়। সারাবছর বুড়াকালী মায়ের মূর্তি রূপার অলঙ্কারে সুসজ্জিত থাকে। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শনিবার দুপুরে খিচুড়ি ভোগ এবং বাকি অন্যান্য দিন দুপুরে অন্নভোগ হয়। বুড়াকালী মাতার মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য লম্বা লাইন পরে ভক্তদের। সারাবছর বালুরঘাট শ্রী শ্রী বুড়াকালী মাতা পূজা সমিতি বুড়াকালী মায়ের পুজো পরিচালনা করে। বুড়াকালী মায়ের ভক্তদের মুখে শোনা যায় কয়েকশো বছর আগে বর্তমান বালুরঘাট বুড়াকালী মাতার মন্দিরের পাশ দিয়ে নাকি আত্রেয়ী নদী বইতো। এমনকি ভক্তদের মুখে শোনা যায় মন্দির ও বাজারের জায়গায় ঘন জঙ্গল ছিল। শতাব্দী প্রাচীন পুজো হলেও এই পুজোর সঠিক বয়স কত তা কেউ বলতে পারে না।  আত্রেয়ী নদীর ধারে এক সময় নিজে থেকেই নাকি ভেসে ওঠে বুড়াকালী মাতার বিগ্রহ। এক তান্ত্রিক সেই সময় নাকি ওই বুড়াকালী মাতার বিগ্রহকে তুলে নিয়ে এসে পুজো শুরু করেন। তারপর থেকেই নাকি বুড়াকালী মাতার নিত্যপুজো শুরু হয়। অনেক ভক্তরা মনে করেন বুড়াকালী মাতা যেখানে অধিষ্ঠান করছেন সেখানেই এক সময় নিজে থেকেই নাকি মাটি ভেদ করে ওঠে বুড়াকালী মাতার বিগ্রহ। মন্দিরকে ঘিরে ভক্তদের মুখে আরও অলৌকিক ঘটনা শোনা যায় – সন্ধ্যের পর নাকি অপরূপ ফুলের সুগন্ধি পাওয়া যেত এই এলাকা থেকে, কিন্তু সেইসময় মন্দির থেকে কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কোন জনবসতি ও ফুলের গাছ ছিল না, সন্ধ্যায় বুড়াকালী মাতার মন্দির চত্বরে নুপুরের আওয়াজও শোনা যেত। সেই সব নাকি এখন জনশ্রুতি বলে মনে হয় অনেকের। 

প্রথম দিকে টিনের ঘেরা দিয়ে মন্দিরে বুড়াকালী মাতার পুজো শুরু হয়। বর্তমানে বিশাল আকার মন্দিরের পুজিত হন বুড়াকালী মাতা। বুড়াকালী মাতার মন্দিরে বুড়াকালী মাতার মন্দিরের পাশাপাশি শীতলা মাতা ও শিব ঠাকুরের মন্দিরও আছে। কার্ত্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর দিন এবং চৈত্র সংক্রান্তিতে বুড়াকালী মাতার মূর্তি সোনার অলঙ্কারে সাজানো হয়। বুড়াকালী মাতার মন্দিরে পুজোকে ঘিরে পুজোর দিন কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম হয়। আবার অনেক ভক্তরা মনে করেন যেখানে বুড়াকালী মাতা অধিষ্ঠান করছেন আজ থেকে বহুবছর আগে সেই এলাকাজুড়ে ঘন জঙ্গল ছিল, এক রাখাল সেখানে জমিদারের গোরু চড়াতো। একদিন সন্ধ্যায় রাখাল গোরু চড়িয়ে ফেরার পথে একটি গোরুকে দেখতে না পেয়ে গভীর জঙ্গলে গোরুটিকে খুঁজতে যায়, গভীর জঙ্গলে গিয়ে রাখাল হঠাৎ দেখতে পায় যে গোরুটিকে সে খুঁজছিল সেই গোরুটির থন থেকে আপনি আপনি একটি বটগাছের নিচে একটি কালো প্রস্তর খন্ডের উপর দুধ পড়ছে এবং সেখানে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি দেখতে পায়। এরপর জমিদার বুড়াকালী মাতার স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই কালো প্রস্তর খন্ডটিকে পুরোহিত ডেকে সংস্কার করে বুড়াকালী মাতার নিত্যপুজো শুরু করেন। কালীপুজোতে এখনও পাঁঠা বলি ও শোল মাছ ভোগ দেওয়া হয়। তবে জনশ্রুতি আছে আগে নাকি ২০ কিলো ওজনের শোল মাছ ভোগ দেওয়া হতো। এই পুজোকে ঘিরে শুধুমাত্র দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাবাসীই নয় পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুর ও মালদা জেলা থেকেও প্রচুর ভক্ত বা দর্শনার্থী আসে। বর্তমানে বুড়াকালী মন্দির থেকে অনেকটা পশ্চিমে সরে গেছে আত্রেয়ী নদী। জনশ্রুতি আছে একটা সময় নাকি নাটোরের রানী ভবানী এই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন। বজরায় করে এসে তিনি আত্রেয়ী নদী থেকে জল নিয়ে এসে মায়ের পুজো দিয়ে আবার ফিরে যেতেন নাটোরে। যুগে যুগে বহু তন্ত্রসাধক বুড়াকালী মাতার সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেছেন। সাধক ভবাপাগলা বুড়াকালী মাতার মন্দিরে এসেছিলেন। অনেক ভক্তই বুড়াকালী মাতার মন্দিরকে সতীর একান্ন পীঠের এক পীঠ বলে মনে করেন, তবে এর সত্যতা এখনও প্রমাণিত হয়নি। তা সত্ত্বেও ভক্তদের অগাধ বিশ্বাস বুড়াকালী মাতার উপর। মা বুড়াকালী অত্যন্ত ভক্তি ও বিশ্বাসের সহিত পুজিত হন। প্রতিবছর কার্ত্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর পরেরদিন সকালে বালুরঘাট শ্রী শ্রী বুড়াকালী মাতা পূজা সমিতির পক্ষ থেকে মা বুড়াকালী মাতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত খিচুড়ি ভোগ ভক্তদের বিতরণ করা হয়।

About Burdwan Today

Check Also

সম্পত্তিগত বিবাদের জেরে ভয়ঙ্কর কাণ্ড, দাদাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে খুন

দেবনাথ মোদক, বাঁকুড়াঃ সম্পত্তিগত বিবাদের জেরে দাদাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল ভাইয়ের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *