Breaking News

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রথযাত্রা

 

টুডে নিউজ সার্ভিসঃ পুরী এবং মাহেশের মত ঢাকার অদূরবর্তী ধামরাইয়ের যশোমাধবের রথযাত্রা উৎসবও সুপ্রাচীন এবং ভারত উপমহাদেশে সুবিখ্যাত।

এই রথযাত্রা প্রচলনের একটি সুন্দর ইতিহাস রয়েছে। বাংলার পাল রাজাদের শেষ রাজা ছিলেন যশোপাল। তিনি খুবই প্রজাবৎসল ও ধার্মিক রাজা ছিলেন। এই রাজা একদিন হাতির পিঠে চড়ে বেড়াতে যান ধামরাই এলাকার এক গ্রামে । রাস্তায় চলতে চলতে একটি মাটির টিবির সামনে গিয়ে হাতিটি থেমে যায় আর চলতে চায় না। রাজা শত চেষ্টা করেও হাতিটিকে সামনে নিতে পারলেন না এবং অবাক হলেন। তখন তিনি হাতি থেকে নেমে স্থানীয় লোকজনকে উক্ত মাটির টিবি খনন করার জন্য নির্দেশ দেন। সেখানে একটি মন্দির পাওয়া যায়। এছাড়া কতগুলো মূর্তি পাওয়া গেল। এর মধ্যে শ্রী বিষ্ণুর মূর্তির ন্যায় শ্রী মাধব মূর্তিও ছিল। রাজা ভক্তি করে সেগুলো সঙ্গে নিয়ে আসেন। পরে ধামরাই সদরে ঠাকুর বাড়ি পঞ্চাশ গ্রামের বিশিষ্ট পন্ডিত শ্রী রামজীবন রায়কে তিনি উক্ত মাধব মূর্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্বভার দেন। তখন থেকে শ্রী মাধবের নামের সাথে রাজা যশোপালের নামটি বিগ্রহের সাথে যুক্ত হয়ে নতুন নামকরণ হলো শ্রী শ্রী যশোমাধব।

সেইদিন থেকে সেবা পূজার বন্দোবস্ত হলো। আজও ধামরাইয়ে শ্রী মাধবঅঙ্গনে পূজা অর্চনা চলে আসছে। পরবর্তীতে শ্রী মাধবকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে ধামরাইয়ের শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা ও মেলা।

আজও হাজার হাজার হিন্দু ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হয়ে তাদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান রথ যাত্রা প্রতিবছর সম্পন্ন করে থাকে। রথযাত্রার সাথে গড়ে উঠে বিভিন্ন রকমের আয়োজন। আয়োজনে থাকে ছোটদের খেলার সামগ্রী, মিষ্টি সামগ্রী দোকান, যাত্রা, সার্কাস, মৃৎ শিল্প, কাঁসা পিতল শিল্প।

১০৭৯ বঙ্গাব্দে শুরু হওয়া এই রথযাত্রায় সর্বপ্রথম বাঁশের ও কাঠের ছোট আকারের রথ থাকলেও ১৩৪৪ বাংলা সনে ধামরাই, কালিয়াকৈর, সাটুরিয়া, সিঙ্গায়ার থানার বিভিন্ন কাঠ শিল্পিরা যৌথভাবে নির্মাণ কাজে অংশগ্রহন করে সুবিখ্যাত রথটি তৈরী করে। মূল্যবান কাঠের তৈরী ৪০ ফুট প্রস্থ, ৭৫ ফুট উচ্চতা , ৩ তলা বিশিষ্ঠ ও ৯ টি প্রকোষ্ঠ এবং ৯ টি মাথা বিশিষ্ঠ সৌন্দর্য শৈলীর নানা কারুকার্য খঁচিত ছিল এই রথটি। এটি টানতে প্রায় ২৭ মণ পাঠের কাছি দরকার হতো। রথ টানার সময় হাজার হাজার নর নারী উলু ধ্বনি ও কলা চিনি ইত্যাদির মাধ্যমে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

যদিও আজ আর সেই রথটি আর নেই, ঐতিহ্যমন্ডিত এই রথখানি ১৯৭১ সালের পাকিস্থানের বর্বর হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় সহযোগীরা পুড়িয়ে দেয়। ঐতিহ্য মন্ডিত রথটি পুড়িয়ে দেয় ঠিকই কিন্তু উৎসব ও সংস্কৃতির স্রাতে ধারা থেকে রথযাত্রার উৎসব বিচ্ছিন্ন করতে পারে নাই। ২০১০ সালে ধামরাইয়ে পুরোনো রথটির আদলে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন রথ নির্মাণ করে দেন ভারত সরকার। এখন সেই রথেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে রথ উৎসব।

তথ্যসূত্র ও ছবি সংগৃহীত

About Burdwan Today

Check Also

কার্তিক লড়াইকে ঘিরে জমজমাট কাটোয়া

রাহুল রায়, কাটোয়াঃ পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের সকলের কাছে সব থেকে বড় পুজো হল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *