Breaking News

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির পদধূলি ধন্য খালনায় বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির ২০৫ বছরের মাতৃ আরাধনা

অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়াঃ গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার জয়পুর থানার অন্তর্গত উত্তর খালনায় বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পূজা ২০৫ বছরে পদার্পণ করেছে। উত্তর খালনায় ১৩টি গ্ৰাম্য দুর্গাপূজা হলেও একটি মাত্র পারিবারিক দুর্গাপূজা হয়, যা এই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির। এক সময় এই পারিবারিক দুর্গাপূজার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখার্জি। প্রণব মুখার্জির বড় বোন অন্নপূর্ণার সঙ্গে এই গ্ৰামের দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবাহ হয়েছিল। সেই সূত্রে প্রণব মুখার্জি দিদির বাড়িতে আসতেন এবং এই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পূজার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এই বাড়িতে আসতেন পূজার কটা দিন থাকতেন। সবার সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করতেন, পারিবারিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। 

পরবর্তী সময়ে প্রণব মুখার্জি যখন গ্ৰামীণ হাওড়ার বর্তমানে জয়পুর থানার তাজপুর হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন তখন তিনি তাজপুর গ্ৰামে থাকলেও পূজার কটা দিন এখানে এসে আনন্দ উপভোগ করতেন, পূজায় অংশগ্রহণ করতেন। আজও প্রয়াত প্রণব মুখার্জির পরিবারের সঙ্গে সেই সম্পর্ক অটুট আছে। প্রণব মুখার্জির দাদা পীযুষ মুখার্জি খালনা স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। এই বংশের প্রয়াত সীতাংশু বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।

বন্দোপাধ্যায় বাড়ির ২০৫ বছরের এই পারিবারিক দুর্গাপূজা প্রসঙ্গে এই পরিবারের দৌহিত্র তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনো এক জমিদার বাড়ির মহিলারা সঙ্গে এই গ্ৰামের রাধাবল্লভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবাহ হয়েছিল। ঐ মহিলার বাপের বাড়িতে দূর্গা মা চন্ডীরূপে পূজিতা হন। বিবাহের পর স্বপ্নাদেশ পেয়ে ওনার স্বামী দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এই পূজা শুরু করেন। ২০৫ বছর আমরা বলছি তার কারণ আমাদের কাছে ২০৫ বছর আগে এই পূজার প্রামাণ্য নথি আছে। তবে তার ও আগে এই পূজার সূচনা হয়েছিল বলে আমাদের অনুমান।

আবহমান কাল ধরে মা দুর্গা এখানে দশভূজা ষোড়শ উপাচারে পূজিতা হয়ে আসছেন। বৈশিষ্ট্য হলো একচালের প্রতিমা। ষষ্ঠীর বোধন থেকে দশমী পর্যন্ত বিশেষভাবে মা দুর্গা পূজিতা হন ষোড়শ উপাচারে। বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা মতে পূজা হয়। এখানে পশু বলি হয় না। বৈষ্ণব মতে পূজা হয়। বিভিন্ন ফল বলি হয়। অষ্টমীতে লুচি ভোগ, সন্ধিপূজায় খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয়।মা সধবা বলে নবমীর দিন মাকে মাছের  ঝাল, ঝোল,অম্বল দেওয়া হয়।

 দশমীর দিন নিয়ম মেনে সূতা কাটা হয় – অমাবস্যা, পূর্ণিমা তিথি ও অন্যান্য কোনো কিছু হলেও দশমীর দিনই কিন্তু দেবী বিসর্জন হয়।সন্ধিপূজায় আবালবৃদ্ধবনিতা-জাতি-ধর্ম -বর্ণ নির্বিশেষে সকলে অঞ্জলী দেন। কুমোর, কামার, জোলা তাঁতি সকলে নিয়ন্ত্রিত থাকেন।সবাই মিলে মিশে আনন্দ উপভোগ করেন। এই বংশের যারা সেবাইত,যারা কর্মসূত্রে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি ভারতবর্ষের বাইরে অন্য রাষ্ট্রে যারা থাকেন তারা প্রত্যেকেই দেবী পূজার সময় দেশের বাড়িতে আসেন। পূজা উপলক্ষে এই চারদিন একসঙ্গে গল্পগুজব, খাওয়া দাওয়া থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে উঠেন। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সকল সমবেত হন। এই পূজায় পরিবারের সেবাইত ব্যাতিত ছাড়া অন্য কেহ অর্থ সাহায্য করতে পারেন না। কুমোর, কামার, মুচি,ব্রাহ্মণ, বংশপরম্পরায় করে আসছে। আমাদের পূজা মাইক বর্জিত।ঢাক-ঢোল-কাঁসর ঘন্টা ব্যবহার করা হয়।

এখানে দূর্গা মায়ের সঙ্গে সঙ্গে কাশীনাথ, বিশ্বনাথ-এর পূজা হয়। তৎকালীন সময়ে কাশী থেকে কাশীনাথ ও বিশ্বনাথকে আনা হয়েছিল।

                   

About Burdwan Today

Check Also

কার্তিক লড়াইকে ঘিরে জমজমাট কাটোয়া

রাহুল রায়, কাটোয়াঃ পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের সকলের কাছে সব থেকে বড় পুজো হল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *