উদয় কর্মকারঃ আমরা সকলেই কম বেশি জানি চাঁদ সওদাগরের চম্পাই নগর সম্পর্কে। সেই ‘চম্পাই নগর’ আজ পূর্ব বর্ধমানের কসবা নামক একটি গ্রাম। ‘চম্পাই নগরের‘ সরস্বতী পুজার প্রচলন সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।
প্রায় শত বছরেরও বেশি দিন ধরে পুজো হয়ে আসছে দেবী সরস্বতী। চম্পাই নগরের রামেশ্বর শিব মন্দিরের সামনে নায়ক পরিবারের নির্মিত সরস্বতী মন্দিরে। স্বর্গীয় গদাধর নায়ক নির্মিত করিয়ে ছিলেন এই মন্দির এবং সরস্বতীর প্রতিমা এনে পুজোরও ব্যাবস্থা তিনিই করে ছিলেন।
পরবর্তীতে স্বর্গীয় কালী সাধন নায়ক ও ভায়েরা প্রতিবছর এই পুজোর ব্যবস্থা করাতে থাকেন। কসবা গ্রামের বিখ্যাত মৃৎ শিল্পী স্বর্গীয় ফকীর চন্দ্র পাল ছিলেন স্বর্গীয় কালী সাধন নায়ক বাবুর বন্ধু। তাই তিনি ফকীর পালকে বললেন সরস্বতীর প্রতিমা গড়ার জন্য। বন্ধুর কথা ফেলতে পারেননি শিল্পী ফকীর চন্দ্র পাল। তৈরি করে ফেললেন দেবী সরস্বতীকে যেন মানস প্রতিমা গড়ে দিলেন। নিখুঁত প্রতিমা দেখতে বাইরে থেকে এসে ভিঁড় জমাতে শুরু করলো হাজারো মানুষ। এ যেন সত্যি কোন ‘নারি’ সাজ পরে বীণা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
বিভিন্ন গ্রাম তো বটেই জেলার বাইরে থেকেও সরস্বতী গড় বিভিন্ন গ্রাম তো বটেই জেলার বাইরে থেকেও সরস্বতী গড়ার জন্য অর্ডার আসতে লাগলো পাল বাবুর কাছে।
সেই থেকে শিল্পী ৺ফকীর চন্দ্র পাল বাবু প্রতিবছর প্রতিমা গড়ে দিতেন এবং মৃত্যুর আগের সরস্বতী পুজোর প্রতিমাটাও গড়ে ছিলেন বলে জানান সন্তোষ নায়ক।
আগে শিব রাত্রিতে ১ মাস ধরে মেলা চলতো। সরস্বতী পুজো শুরু করেই মাকুরী সপ্তমী থেকে বসতে থাকতো দোকানপাট। মাইক আসতো বর্ধমান মাইক রেডিও সার্ভিস থেকে। বর্ধমান থেকে এনে বুদবুদে নামিয়ে দিতো মাইক ও ব্যাটারি। বুদবুদ থেকে কসবা ছিলো কাঁচা রাস্তা তাই গরুর গাড়ি করে তা আনা হতো কসবাতে। ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেলে আবার বুদবুদ থেকেই চার্জ করিয়ে আনতে হতো।
তখন কসবা ও আসে পাশের গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা থেকে শুরু করে রাধারানী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকরা আসতেন মা সরস্বতীর পুষ্পাঞ্জলি দিতে।
তবে এখন সবটাই পাল্টে গেছে। রাস্তাঘাট সরস্বতী প্রতিমা থাকার মন্দির যা ভগ্ন দশা। বিখ্যাত মৃৎ-শিল্পীর পরলোক গমন। এমন কি মা সরস্বতীর প্রতিমা দেখতে ভিড় না হওয়ায় পুষ্পাঞ্জলিতে ছাত্র-ছাত্রীদের অভাব।
পাল্টে গেছে মেলা বসারও নিয়ম। আর সরস্বতী পুজো থেকে মেলা বসেনা। ডি.এম ও প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী শিবরাত্রীর এক সপ্তাহ আগে থেকে দোকান পাট বসানো হয় আর শিবরাত্রী শেষ হলেই উঠিয়ে দেওয়া হয়।
সেই সরস্বতী পুজোর আনন্দ আর লোয়াপুর গ্রামের পুরোহিত (ফটিক মাষ্টার) শিক্ষক ৺সুকুমার ভট্টাচার্য-র শ্রুতি মধুর পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র পড়া হারিয়ে গেছে চম্পাই নগর থেকে।
Social