অশোক মজুমদারঃ বিশ শতকের ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে জ্যোতি বসু এক উজ্জ্বল নাম। এক আপসহীন কমরেড। ভারত তথা এশিয়ায় বামপন্থী চেতনা বিকাশের অন্যতম কারিগর। বৃহস্পতিবার জ্যোতি বসুর ১০৮ তম জন্মদিন। বাংলা ও বাঙালির রোজনামচায় যিনি নিবিড়ভাবে জড়িত। আমার সাংবাদিকতায় পা দেবার সময়ে যিনি বাংলার শাসনকার্যের মধ্যগগনে ছিলেন।
কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম নেতা ও একজন দীর্ঘসময়ের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও রাজনীতির আঙিনায় তাঁর প্রাজ্ঞতার কথা কয়েকটি শব্দবন্ধে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আমি সে পথে যাবোও না। আমি শুধু ওনার বিষয়ে কয়েকটি কথা শেয়ার করবো যা আমার ব্যক্তিগত ভাবনার।
অত্যন্ত রাশভারী মানুষটিকে কভার করতে গিয়ে ক্যামেরা তাক করে রাখতাম কখন উনি একটু হাসবেন আর আমরা চিত্ৰ সাংবাদিকরা তা বন্দি করে রাখবো। ওনার হাসির কোনো একটু মুহূর্ত যদি কেউ তুলতে পারতো তবে তার সেদিন কেল্লাফতে। কিন্তু সেটা খুব বিরলতম, কদাচিৎ ঘটতো।
রাজনৈতিক কিংবা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জ্যোতিবাবু ছিলেন ভীষণভাবে শৃঙ্খলাপরায়ণ ও মেপে পা ফেলার মানুষ। ওনাকে একমাত্র একটু হাসিখুশি ও খোলামেলা দেখা যেত তিন নাতনি কোয়েল, দোয়েল ও পায়েলদের সঙ্গে। বাকি সময় স্বল্পবাক ও গভীর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক কমরেড, এক মুখ্যমন্ত্রী। যে কারণেই উনি কখনো রাজনীতির সহজ সম্ভাষণ “দাদা” হননি।
দিল্লীর দরবারে দু-দুবার শাসনভার নেওয়া আটকে গেছিলো পার্টির সিদ্ধান্তে। “ঐতিহাসিক ভুল” নামক ছোট্ট দুকথায় নিজের আফসোস ব্যাখ্যা করেছিলেন। স্বয়ং রাজীব গান্ধীর প্রস্তাব যদি সেদিন গৃহীত হতো আজ বোধয় ভারতীয় রাজনীতির এতোটা অকাল সময় আসতো না।
যে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিলো, একদিন সেই রাইটার্সেই জ্যোতিবাবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠান। কি কথা হয়েছিলো তা জানার সুযোগ না হলেও শোনা যায় তিনি বলেছিলেন, “এই মেয়েটি অনেকদূর যাবে।” (শোনা কথা। বলতেও পারেন। নাও বলতে পারেন।) ২০১০ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী না হোক অনেকদূর পৌঁছে গেছেন, এটা দেখে যেতে পেরেছিলেন। শেষের দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওনার বাসভবনে প্রায়ই যেতেন দেখা করতে, খোঁজ নিতে।
আমার সৌভাগ্য ভারতীয় রাজনীতির এই লিভিং লেজেন্ডকে কাজের সূত্রে কাছ থেকে দেখেছি। সুসংহত, সুশৃঙ্খল ও পার্টি আদর্শকে কঠোরভাবে মেনে চলা কিংবদন্তি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভাস্বর হয়ে থাকবেন জ্যোতি বসু। বৃহস্পতিবার তাঁর জন্মদিন। বামপন্থী রীতি মেনে হাত তুলে কমরেডদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। আমি প্রণাম জানালাম।
Social