দেবজিৎ দত্ত, বাঁকুড়াঃ বাঁকুড়া জেলা ইন্দাসে শালী ও দামোদর নদের মোহনায় সোমসার গ্রামের জমিদার বাড়ির দুর্গা পূজা।আনুমানিক ২৫০ বছর আগে বর্ধমান মহারাজাদের কাছ থেকে ৬টি মৌজা মিলে ইন্দাস অঞ্চলের জমিদারি শুরু করেন চন্দ্রমোহন পাল। বর্তমানে প্রতিদিন এই চাঁদপালঘাট থেকে ফেরি পার হয়ে কলকাতা পৌঁছায় বিভিন্ন কাজের জন্যে অনেকে।
কেন এই ঘাটটির নাম চাঁদপালঘাট? এই চন্দ্রমোহন পাল অর্থাৎ চাঁদ পালকে তার পরিচয়টা অনেকেই যানে না। তৎকালীন যুগে এই চন্দ্রমোহন পাল ছিলেন ইন্দাসে সোমসার গ্রামের ছেলে। তিনি ছিলেন একজন কাপড় ব্যবসায়ী। বিদেশ থেকে তার বর্জা আসতো কলকাতার বিভিন্ন ঘাটে। সেই সব ঘাট থেকে বিভিন্ন কাপড়ের আরতে যেতে তার এই বিদেশি কাপড় তার কাপড়ের ব্যবসার সুবিধা জন্যে ইংরেজদের সাহায্য ছাড়া নিজের খরচে গঙ্গার পারে একটি ঘাট তৈরী করেন, এখন তা চাঁদ পাল ঘাট নামে পরিচয় পেয়েছে। এই বাঁকুড়া জেলার ইন্দাসে এই ছেলেটি ছোট বেলা থেকে গ্রামেও গ্রামবাসীদের উপর টান ছিলো। পরিবার সদস্যের মুখে জানা যায়। তিনি কোনো কাজে এমনকি তার কাপড়ের ব্যাবসা থেকে শুরু করে তার বর্জায় ইন্দাস এলাকার লোকজন শুধুমাত্র কাজ করতো। এই সময় তিনি ইন্দাসে শালী ও দামোদর নদীর মোহনায় একটি শুবিশাল প্রাসাদ তৈরী করেন এবং শুরু করেন বাঁকুড়া জেলার ইন্দাসে সোমবার গ্রামে দূর্গা পুজো শুরু করেন এই জমিদার বাড়িতে। জানা যায়, ব্যবসা সুত্রে তার পরিবারের লোকজন কলকাতা থাকতেন। পুজার সময় সবাইকে নিয়ে চন্দ্রমোহন পাল এই গ্রামের পুজোতে সোমসার গ্রামে আসতেন এবং তার সাথে তার গ্রামবাসী ও প্রজাদের জন্যে বিলিতি কাপড় মা বোনেদের জন্য। পুরুষদের জন্যে ধুতি পাঞ্জাবী আনতেন। এই এলাকায় মানুষ এই পুজোর সময়টার জন্যে অপেক্ষা থাকতো তাদের ঘরের ছেলে কখন আসবে তাদের জন্যে কাপড় জামা নিয়ে আসবে। এই পুজোর সময় তিনি প্রজাদের এবং গ্রামবাসীদের যে বিদেশি কাপড় দিতেন তা পড়ে সবাই মিলে এই জমিদার বাড়িতে এসে এই দুর্গা পুজোর সময় মেতে উঠতেন।
পুজার দিন গুলোতে হিন্দু মুসলমান সমাই মিলে আনন্দে মেতে উঠতো। চার দিন ধরে চলতো খাওয়া দাওয়া।এই জমিদার বাড়িতে বসতো বাইজি নাচের আসর, রামলীলা, যাত্রাপালা, নহবত আসোর। এই ভাবেই বেশ কটাদিন প্রজাদের সাথে ও গ্রামবাসীদের সাথে আনন্দ করে কাটাতেন । এই এই জমিদারি তো নেই। তাই এখন কোনো রকমভাবে জমিদারে বংশধররা এই পুজো চালিয়ে যাচ্ছে। এই সব পুরাতোন দিনের সূতিকে নিয়ে বেঁচে রয়েছে এই পরিবারের লোকজন।