পড়ুয়াদের টানে অবসরের পরেও ‘মান্নান স্যার’ স্কুলে

Prabir Mondal
3 Min Read

দেবনাথ মোদক, বাঁকুড়াঃ বাঁকুড়ার খাতড়া বাজারের ইন্দকুড়ির বাসিন্দা শেখ আব্দুল মান্নানের এখন অবসর জীবন উপভোগ করার কথা। শীর্ষ আদালতের রায়ে এক ধাক্কায় চাকরি গিয়েছে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর। কে যোগ্য, কে অযোগ্য বোঝা দায়। যোগ্যের গায়েও হয়তো লাগছে অযোগ্যতার কালি। তাঁদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্কুলগুলি ও পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে এই নিয়ে যখন চারদিকে অস্থিরতা তখন অন্য ছবি দেখাল খাতড়ার সুপুর হাই স্কুল ও সেখানকার ‘মান্নান স্যার।’


খাতড়া বাজারের ইন্দকুড়ির বাসিন্দা শেখ আব্দুল মান্নানের এখন অবসর জীবন উপভোগ করার কথা। দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর সুপুর হাই স্কুলে শিক্ষকতার পরে গত জানুয়ারিতে খাতায়-কলমে অবসর নিয়েছেন তিনি। তবে অবসর নেওয়ার পরেও ছাত্রছাত্রী ও সুপুর হাই স্কুলকে ছাড়তে পারেননি। এখনও নিয়মিত ‘মান্নান স্যারের’ জীবন বিজ্ঞানের ক্লাস হয় সুপুর হাই স্কুলে। বিনা পারিশ্রমিকেই ছেলেমেয়েদের পড়ান তিনি।

সুপুর হাই স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে মোট ১১৬০ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। প্রধান শিক্ষক-সহ রয়েছেন মোট ২৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। ওই স্কুলে জীবন বিজ্ঞান-সহ মোট তিনটি বিষয়ের শিক্ষকের পদ খালি। জীবন বিজ্ঞানের একজন শিক্ষক থাকলেও তাঁর পক্ষে সবটা সামলানো হয়তো কঠিন। এই পরিস্থিতিতে সহায় হয়েছেন আব্দুল মান্নান। মঙ্গলবার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল দশম শ্রেণির ক্লাসে পড়াচ্ছেন অবসর প্রাপ্ত ওই শিক্ষক। অবসর জীবন কেন উপভোগ করলেন না, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৫ বছরের সম্পর্ক স্কুলের সঙ্গে। তা কি এত সহজে ছিন্ন করা যায়। যত দিন সামর্থ্য থাকবে ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে যাব।” ছাত্রছাত্রীদেরও প্রিয় তিনি। দশম শ্রেণির অয়ন, পায়েল, সুস্মিতারা বলে, “স্যারের কাছে বিজ্ঞান ছাড়াও আমরা জীবন গড়ার শিক্ষা পাই। উনি আমাদের খুব ভালবাসেন।”


প্রধান শিক্ষক বিকাশচন্দ্র লায়েক বলেন, “মান্নানদা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের পদও সামলেছেন। অবসরের পরের দিন থেকেও স্কুল আসা বন্ধ করেননি। রোজ দু’টি করে ক্লাস নেন।’’

আব্দুল মান্নানের এই কাজ সমর্থন করেন তাঁর স্ত্রী আমিনা সুলতানাও। তাঁর কথায়, “পড়ুয়াদের সঙ্গেই ওনার জীবন কেটেছে। বাকি জীবনও পড়ুয়াদের নিয়ে কাটাতে পারলেই উনি ভাল থাকবেন।” স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা এক পড়ুয়ার অভিভাবক অঞ্জন রজকের কথায়, “মান্নান স্যার আমাদের আদর্শ, শিক্ষক সমাজের গর্ব। তাঁর এই স্বেচ্ছাশ্রমে বাকিরাও অনুপ্রাণিত হবে বলে আশাবাদী।” শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের অস্থির পরিস্থিতির মাঝে যেন সুপুর হাই স্কুলের ছবি খানিকটা শান্তি দেয় বাসিন্দাদের।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *