টুডে নিউজ সার্ভিসঃ রাজ্যে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষ কর্মীর চাকরি বাতিলের জের। এবার রাজ্যের উচ্চ প্রাথমিক মধ্যশিক্ষা ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষা কর্মীদের প্রশাসনিক বদলির নির্দেশিকা বাতিল করল রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তর। গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনিক স্তরে রাজ্যের উচ্চ প্রাথমিক মধ্যশিক্ষা ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের সারপ্লাস ট্রান্সফারের বদলি নিয়ে যে নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তর তা আপাতত প্রত্যাহার করা হলো। এই মর্মে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের উপসচিব রাজ্যের কেন্দ্রীয় স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে জানালেন যে পুনরায় নতুন নির্দেশিকা না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের বদলি সংক্রান্ত ১০ ফেব্রুয়ারির নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা হলো। পরবর্তীতে পরিস্থিতি বুঝে কি করা হবে তা ভবিষ্যতে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে আবার জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও নয়া নির্দেশিকায় জানিয়েছেন স্কুল শিক্ষা দপ্তরের উপসচিব।
মূলতঃ এসএসসি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মে প্যানেল বাতিল হওয়ার ফলে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থায় বা স্কুলগুলির পঠন পাঠনের ক্ষেত্রে যে অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে তাকে সামাল দিতেই বদলি সংক্রান্ত পুরনো নির্দেশিকা প্রত্যাহার করল রাজ্য বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে চাকরি হারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি ও বেতনের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এমনকি যোগ্য চাকরিহারাদের চাকরি বহাল রাখতে উপযুক্ত আইনি পথে লড়াইয়ের আশ্বাসও দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবুও যতক্ষণ পর্যন্ত অনিশ্চয়তার মেঘ না কাটছে ততক্ষণ পর্যন্ত অধিকাংশ চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা বা শিক্ষা কর্মীরা স্কুলমুখী হতে নারাজ। এমনকি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে যারা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক তারাও নিজেদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ফের সরব হয়ে আন্দোলনমুখী হয়েছেন এবং প্রয়োজনে প্লাস বয়কটের হুমকি দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। শুধু শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পড়ুয়াদের পঠন-পাঠন ব্যাহত হচ্ছে তাই নয় শিক্ষা কর্মীর অভাবে বহু স্কুলে প্রধান শিক্ষককেই ঘন্টা বাজানোর দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারি মাসি শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের দাবি মেনে বদলি সংক্রান্ত যে নির্দেশিকা জারি করেছিল কোন শিক্ষা দপ্তর তা আপাতত প্রত্যাহার করতে হল। রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ইতিমধ্যেই যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে আশ্বাস দিয়েছেন একই সঙ্গে চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকাদের কূলে ফিরে কাজে যোগ দিতে আবেদন করেছেন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও শিক্ষক শিক্ষিকাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে এবং সার্বিকভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশে থেকে তাদের ন্যায্য অধিকার পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এবং যার যার কর্মস্থলে ফিরে কাজে যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষিকারায় এখনো মানসিকভাবে নিজেদের স্কুলে গিয়ে পঠন-পাঠনের কাজে যোগ দিতে ভরসা পাচ্ছেন না। কিছু ‘ ইচ্ছুক’ শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মী কাজে যোগ দিলেও এখনো অধিকাংশই তাদের কর্মস্থলে যাওয়ার পরিবর্তে আন্দোলনকে বেছে নিয়ে রাস্তায় থাকার সিদ্ধান্তে অটল। এই পরিস্থিতিতে পুরনো নির্দেশিকা বাতিল করে কিছুটা হলেও অচলাবস্থা সামলানোর চেষ্টা স্কুল শিক্ষা দপ্তরের বলে মনে করছেন স্কুল শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা।