টুডে নিউজ সার্ভিসঃ ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে যে তাণ্ডব শুরু হয়েছে তার মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নে নির্দেশ দিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। মুর্শিদাবাদের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক এই আবেদনে হাইকোর্টে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার ছুটির দিনেও এই বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে হাইকোর্টে শুনানি হয়। বিরোধী দলনেতার আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজ্যের বক্তব্য জানতে চাই হাইকোর্ট। রাজ্যের তরফে অবশ্য হাইকোর্টে যুক্তি দেখানো হয় যে ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে এই অশান্তি মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সেই মোতাবেক রাজ্য পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা কোথায়? সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয় এবং রাজ্য পুলিশ আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যথেষ্ট দক্ষ।
যদিও আন্দোলনের তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই কথা উল্লেখ করে বিচারপতি সেন রাজ্যের কাছে জানতে চান যেহেতু মুর্শিদাবাদ জেলাতেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পর্যাপ্ততা রয়েছে। তাহলে সেক্ষেত্রে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাহায্য নিতে অসুবিধা কোথায়? অতীতে ভোট পরবর্তী হিংসা সংক্রান্ত মামলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল সে কোথাও রাজ্যের আইনজীবীকে স্মরণ করিয়ে দেয় আদালত। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ দক্ষ না অদক্ষ সেটা বড় প্রশ্ন নয় কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনের সুরক্ষা ও সরকারি সম্পত্তি বা সাধারণ মানুষের সম্পত্তি রক্ষায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পুলিশকে সাহায্য করতে পারে। সেক্ষেত্রে পুরুষের অদক্ষতা নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠতে পারে না। রাজ্য সরকারের আইনজীবী অর্ক নাগ তখন সাময়িক সময় চেয়ে নেন। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের আইনজীবীকে আধঘন্টা সময় দেন। ফিলাসে এসে রাজ্যের আইনজীবী জানান কেন্দ্রীয় বাহিনী শুধু পুলিশকে সাহায্য করার জন্য কাজ করতে পারে।
উল্লেখযোগ্য, সম্প্রতি রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর কিছু মন্তব্য তুলে ধরে আদালতকে শুভেন্দু অধিকারী-র আইনজীবী জানান, এই ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্যই রাজ্যের পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হচ্ছে। রাজ্যের মন্ত্রী যদি এ ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখেন সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সদ ইচ্ছার উপর মানুষের কতটা ভরসা থাকতে পারে? যদিও রাজ্য পুলিশের দক্ষতা বা অদক্ষতার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন না তুলে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ শুধুমাত্র মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি আরও বেশি তৎপরতার জন্য মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয়।
প্রসঙ্গত, শুধু মুর্শিদাবাদ নয় উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি ও আরও কয়েকটি জেলায় এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করে সব জায়গাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিক হাইকোর্ট বলে আবেদন জানান বিরোধী দলনেতার আইনজীবী। তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলায় যেহেতু ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদে সবচেয়ে বেশি অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তাই আপাতত মুর্শিদাবাদের জন্যই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।