জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ বাংলায় বাস করে বাঙালিরা নিজেদের গৌরবময় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ভুলতে চাইলেও বাংলার বাইরে অন্য রাজ্যে বা বিদেশে বসবাসকারী বাঙালিরা আঁকড়ে ধরে থাকতে চায় নিজেদের ঐতিহ্যকে। আবার তারই এক ঝলক নমুনা দেখা গেল উত্তরপ্রদেশের কানপুরের বাঙালিদের মধ্যে। সদ্য সমাপ্ত দু’দিন ব্যাপী ‘বাংলা মেলা’-য় মেতে উঠল সেখানকার বাঙালিরা।
কানপুরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উৎসারণ’-এর উদ্যোগে ‘শিখর ছুঁয়েও শেকড়’ এর টানে গত ২০ শে এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের কানপুর মতিঝিলের ‘লাজপত ভবন’-এ শুরু হয় দুই দিনব্যাপী ‘বাংলা মেলা’। একইসঙ্গে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড আয়োজিত ‘বইমেলা’-রও উদ্বোধন করা হয়।
প্রদীপ প্রজ্বলিত করে এই উৎসবের শুভ সূচনা করেন লেখক হিমাদ্রি কিশোর দাস গুপ্ত, সৈয়দ হাসমত জালাল, ভারতীয় দাবা ফেডারেশনের সভাপতি সঞ্জয় কাপুর, প্রাক্তন আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সঞ্জীব পাঠক প্রমুখ।
দুই দিনব্যাপী ‘বাংলা মেলা’ উৎসবের প্রথম দিনে বাংলার শিল্পীদের পরিবেশিত বাংলা গান সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৃত্য উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে।
কলকাতার ওড়িশি নৃত্যদল অভিরূপ সেন গুপ্তার গ্রুপ পরিবেশিত ‘আমার বাংলা’ নৃত্যনাট্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। তারা তাদের নাচের মাধ্যমে বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বাংলা চলচ্চিত্রের এক ঝলক তুলে ধরে। বাংলার শিল্পীদের পরিবেশিত ‘বাংলার মাটিতে জন্ম আমার’, ‘ সুন্দরী কমলা’, ‘টাপা তিন্নি’ গানের তালে উপস্থিত শ্রোতাদের নাচতে দেখা যায়। এই দলে ছিলেন অনিতা, পূজা, শ্রেয়সী, সাঁচি, আকাশ, অহনা, হর্ষিতা প্রমুখ।
বাংলার বাউল সম্রাট কার্তিক দাস বাউল পরিবেশিত বাউল সঙ্গীত শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। একসময় শিল্পীর সঙ্গে তারাও নাচতে শুরু করে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পী অর্ণব দত্ত অংশগ্রহণ করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মৃদুল ঘোষ বিশ্বাস।
মেলার পাশাপাশি এখানে জামাকাপড়, গহনা, শিশুদের দোলনা, খাবার সামগ্রী ইত্যাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের স্টল স্থাপন করা হয়। দু’দিনই এইসব স্টলে যথেষ্ট ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বাঙালি লেখক হিমাদি কিশোর দাস গুপ্তকে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়।
মেলা পরিচালনায় সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সংস্থার সভাপতি শুভাশীষ গুপ্ত, অমিতাভ বসু, অমিতাভ চন্দ্র, পুলক ভট্টাচার্য, প্রবীর ভাওয়াল, অমিতাভ বসু, কেশব চক্রবর্তী, শতাব্দী বসু , সোমা ঘোষ বিশ্বাস , লীনা বসু , শান্তা মুখার্জ্জী, সুমিত মুখার্জ্জী, সত্যজিৎ মুখার্জ্জী সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক স্নেহাংশু ঘোষ, সুজিত বড়ুয়া পৃষ্ঠপোষক প্রবীর সরকার প্রমুখ।
মৃদুল বাবু বললেন – কর্মসূত্রে আমরা সপরিবারে বাংলার বাইরে থাকি। বিভিন্ন কারণে সবসময় রাজ্যে ফিরে যেতে পারিনা। আমাদের সন্তানদের সঙ্গে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। স্থানীয়দেরও আমরা প্রচুর সমর্থন ও সহযোগিতা পাই।
Social