টুডে নিউজ সার্ভিস, বর্ধমানঃ স্কুল চলাকালীন স্কুলের মধ্যে এক ছাত্রকে সাপে কাটে অথচ গুরুত্ব দেয়নি শিক্ষকরা। হাসপাতালে নিয়ে যেতে বিলম্ব হওয়ায় মৃত্যু হল ঐ স্কুল ছাত্রর। সাপে কাটার পর শিক্ষকরা চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না করেই ক্ষতস্থানে বরফ ও ডেটল লাগিয়ে দায় সাড়ে বলে পরিবারের অভিযোগ। পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার কোশিপুর গ্রাম ইউনিয়ন ইনস্টিটিউটের ঘটনা ।
এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় চত্বরে তুমুল বিক্ষোভে ফেটে পড়ে মৃতের আত্মীয় পরিজন থেকে শুরু করে গ্রামবাসীরা। ভাঙচুর করা হাই স্কুল চত্বর কাটোয়া বোলপুর রাস্তা অবরোধ করা হয় এবং প্রধান শিক্ষকের ঘেরাও করে রাখার হয়েছে বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম ইন্দ্রজিৎ মাঝি। কোশিগ্রামের পশ্চিম পাড়ায় বাড়ি। স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। ছাত্রের বাবা কার্তিক মাঝি জনমজুরি করেন। গত মঙ্গলবার স্কুলের তৃতীয় ক্লাসের পর জল খেতে যায় ইন্দ্রজিৎ। তখনই ঘাসের আড়াল থেকে কিছু একটা কামড় বসায় পায়ে। ঘটনার পরেও ক্লাস করে ইন্দ্রজিৎ। ছুটির পর বাড়িতে যায়। পরিবার সূত্রে খবর বাড়িতে ফিরে খাওয়া দাওয়া করে। বিকেল চারটে নাগাদ গ্রামেই টিউশন পড়তে চলে যায়। কিন্তু টিউশন পড়তে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গৃহশিক্ষক তখন তাকে বাড়িতে দিয়ে চলে যান। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন বাড়িতে ফেরার পর থেকেই আর কথা বলতে পারছিল না ইন্দ্রজিৎ। বাড়ির লোকজন মাথায় জল ঢালেন। চোখে মুখে জল দিয়েও হুঁশ ফেরেনি। মঙ্গলবার বিকেলে ইন্দ্রজিৎকে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বুধবার দেহটির ময়নাতদন্ত করানো হয়।
বুধবার ছিল মহালয়ার ছুটি। বৃহস্পতিবার স্কুল খুলতেই মৃত ছাত্রের ছবি হাতে গ্রামবাসীরা স্কুলের সামনে জড়ো হন। তাদের সঙ্গে সামিল হয় বেশকিছু পড়ুয়া। সবে তখন স্কুলে প্রার্থনা শেষ হয়েছে। শুরু হয় বিক্ষোভ। ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা প্রধানশিক্ষকের ঘরে ভাঙচুর শুরু করেন। তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। এর পর কাটোয়া বোলপুর রোড অবরোধ শুরু করেন স্থানীয়রা। মৃত ছাত্রের বাবা কার্তিক মাঝি বলেন, “আমার ছেলে খেলার সময় স্কুলের ভিতর যখন কিছু একটা ওর পায়ে কামড়ায় তৎক্ষণাৎ ছেলে প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছিল। প্রধান শিক্ষক ভেবেছিলেন খেলতে গিয়ে পড়ে গিয়ে ছিঁড়ে গিয়েছে। একটু বরফ ঘষে ডেটল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্কুল থেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বাড়িতেও জানানো হয়নি। তাই চিকিৎসা করানোর সময় পর্যন্ত পেলাম না। ছেলেটাকে হারাতে হল প্রধান শিক্ষকের গাফিলতির কারণে।”
যদিও স্কুলের প্রধান শিক্ষক পূর্ণেন্দু বন্দোপাধ্যায় দাবি করেছেন, “ওই ছাত্রকে যে স্কুলে সাপে কামড়েছিল তা আমরা জানতামই না। আমাকে কেউ বলেনি। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করে দেখেছি ওদিন ওরকম ঘটনার কথা কেউ জানতেন না। যদি জানতাম নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিতাম।” প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবি পথ অবরোধ শুরু হলে পুলিশ স্থানীয়দের বুঝিয়ে অবরোধ তোলে। এরপর প্রধান শিক্ষককে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।