টুডে নিউজ সার্ভিস, বর্ধমানঃ মায়ের মৃতদেহের সামনে মেয়ের বিয়ে, শ্মশানেই সিঁদুর দান। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা শ্মশান ঘাটে। মায়ের মৃতদেহের সামনেই বিয়ে করলেন মেয়ে। গৃহবধূর ইচ্ছে ছিল একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেখার। মেয়ের বিয়ে নিয়ে ও তিনি চিন্তায় থাকতেন। এদিন মায়ের মৃত্যুর পর, মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতেই শ্মশানেই বিয়ে করেন মেয়ে। কান্না ভেজা চোখের জলে মায়ের মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে বরের গলায় মালা পরান কন্যা। আনন্দের বদলে উলু ধ্বনির বদলে এসে আছে কান্নার শব্দ। কনে যাত্রী তথা শ্মশান বন্ধুদের চোখে জল গড়িয়ে পড়ে। এমনই এক ঘটনার সাক্ষী রইল গুসকরা রটন্তী কালী মন্দিরের পাশে শ্মশান ঘাট। জানা গিয়েছে গুসকরা ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিবেকানন্দ পল্লীতে থাকতেন নীলিমা মুখোপাধ্যায়। বুধবার তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। নীলিমার স্বামী ভবানী মুখোপাধ্যায় পেশায় ব্যবসায়ী। ওষুধের দোকান রয়েছে তার। ওই দম্পতির একমাত্র সন্তান পল্লবী মুখোপাধ্যায় স্নাতক পাস করার পর কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। বুধবার ভবানী বাবু যখন বাড়ির বাইরে ছিলেন সেই সময় নীলিমা দেবী খালি বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। গত কয়েক মাস ধরে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠায়। ময়নাতদন্তের শেষে রটন্তী কালী শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মায়ের হঠাৎ মৃত্যুর খবর পেয়ে কলকাতা থেকে তৈরি করি বাড়ি যান মেয়ে পল্লবী। মায়ের দেহ আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তরুণী। মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে দাহর আগে শ্মশানে দেহকে সামনে রেখে প্রেমিকের গলায় মালা পরান তরুণী। এক অদ্ভুত দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন সকলে একদিকে নতুন জীবনের প্রবেশ অপরদিকে মায়ের মৃত্যুর শোক।
প্রেমিক যখন ওই তরুণীর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন সেই সময় পল্লবীকে দেখা যায় মায়ের মরদের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদতে। শ্মশানে উপস্থিত সকলের সেই দৃশ্য মোবাইল বন্দী করেন। অতি শোকের মধ্যে এক টুকরো আনন্দ উপস্থিত হলেও তা খনিকে ম্লান হয়ে যায়। পরিবার সূত্রে জানা গেছে ভাতারের বেরয়া গ্রামের বাসিন্দা জয়দীপ অধিকারীর সঙ্গে পল্লবীর বেশ কয়েক বছরের সম্পর্ক। দুই পরিবারের সম্মতিতে কয়েক দিনের মধ্যে তাদের বিবাহ হওয়ার কথা ছিল। পল্লবীর মা চেয়েছিলেন অতি দ্রুত মেয়ের বিয়ে দিতে। কিন্তু তার মধ্যেই ঘটে গেল এক বড় অঘটন। জয় দেবের বাবা মলাই অধিকারী জানান ছেলের বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎ এবং ঘটনা ঘটে গেল। কিছুদিন পর ছেলে বিয়ে উপলক্ষে অনুষ্ঠান করব ঠিক করেছিলাম কিন্তু সব কেমন যেন ওলট-পালট হয়ে গেল। শ্মশানেই বাজলো যেন সানাই এর বিষাদ সুর।
Social