Breaking News

বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের স্মরণে ৩ দিনের ইতিহাস মেলা

টুডে নিউজ সার্ভিস, বর্ধমানঃ পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের ওয়ারি গ্রামে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের ১১৫ তম জন্মদিন উপলক্ষে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত স্মরণে ইতিহাস মেলা ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয় সোমবার। ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় চরিত্র, বটুকেশ্বর দত্ত-যাঁর সাহসিকতা এবং ত্যাগ জাতির স্বাধীনতার সংগ্রামে অমূল্য অবদান রেখেছে, তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতিতে তিন দিন ব্যাপী ইতিহাস মেলার আয়োজন করা হয়।

১৯৯০ সালের ১৮ নভেম্বর পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের,ওয়ারি গ্রামে জন্মগ্রহণকারী বটুকেশ্বর দত্ত ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে, এক সময় তাঁর সহযোদ্ধা ভগৎ সিংয়ের সাথে মিলে, দিল্লির কেন্দ্রীয় সংসদ ভবনে বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন। এই ঘটনা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। তাঁদের লক্ষ্য ছিল কোনো প্রাণঘাতী হামলা করা নয়, বরং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশে প্রতিবাদ ছড়িয়ে দেওয়া।

বটুকেশ্বর দত্তের জীবন ছিল এক নিঃস্বার্থ সংগ্রামের গল্প। শৈশব থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, তিনি বিপ্লবী সংগঠন হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেন এবং ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদদের সাথে যুক্ত হয়ে স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশ নেন। এর পাশাপাশি, বিপ্লবী চেতনা ছড়িয়ে দিতে তিনি বোমা তৈরির কাজে দক্ষতা অর্জন করেন। ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল, সংসদ ভবনে বোমা নিক্ষেপের পর তাঁরা স্লোগান দিয়েছিলেন “ইনকিলাব জিন্দাবাদ”, যা পরবর্তীতে জাতীয় স্লোগান হিসেবে পরিচিত হয়।

এদিকে, স্বাধীনতা সংগ্রামের পর বটুকেশ্বর দত্তের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান যথাযথভাবে দেওয়া হয়নি, যা দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর জীবনের অমূল্য ত্যাগের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের মতো। তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় কঠিন পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করেছিলেন। ১৯৬৪ সালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় যখন তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি, তখন তার সহযোদ্ধা চমনলাল আজাদ এক প্রতিবাদী চিঠি লিখে পাঞ্জাব সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যার ফল স্বরূপ তাঁকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়। এরপর ১৯৬৫ সালের ২০ মে তিনি পরলোক গমন করেন।

বটুকেশ্বর দত্তের স্মৃতি রক্ষায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও, বর্ধমান রেলস্টেশনের নাম তাঁর নামে রাখার প্রস্তাব আজও বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও তাঁর বসতবাড়ি সরকারের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণ করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে, কিন্তু তাঁর জীবনের প্রতি রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা ও মর্যাদা এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

সোমবার ১৮ নভেম্বর ইতিহাস মেলায় যোগ দেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানী এ(আইএ এস), পিও.কাম.ডি ডব্লিউ. ও. ব্যাক ওয়ার্ড ক্লাসেস কৃষ্ণেন্দু কুমার মন্ডল, বর্ধমান সদর দক্ষিণ মহকুমা শাসক বুদ্ধদেব পান,  খণ্ডঘোষ ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অভিক কুমার ব্যানার্জি, খণ্ডঘোষ থানার অফিসার ইনচার্জ পঙ্কজ নস্কর, গবেষক ডক্টর রমজান আলি,গাছ মাস্টার খ্যাত অরূপ চৌধুরী সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। পাশাপাশি, সাহিত্যিক ড. রমণান আলীর লেখা ‘ফাঁসির ফাঁদ’ বইটি উন্মোচন করা হয়। মেলায় অংশগ্রহণকারী স্থানীয় মানুষরা দাবি করেন, খণ্ডঘোষ থানার অন্তর্গত বোয়াইচণ্ডী রেলস্টেশনের নাম বটুকেশ্বর দত্তর নামে নামকরণ করা হোক, যা এখনো কার্যকর হয়নি।

বটুকেশ্বর দত্তের জীবন ও তার বিপ্লবী চেতনার স্মৃতি আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, শাসকের বিরুদ্ধে একান্ত দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হয়। তার অবদান আমরা কখনো ভুলতে পারব না।

About Prabir Mondal

Check Also

লটারির দুর্নীতিতে কলকাতা এবং শহরতলির একাধিক জায়গায় ইডি হানা

টুডে নিউজ সার্ভিসঃ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালে যে তথ্য প্রকাশ করে তাতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *