চাকরি দেওয়ার নামে দলের নেতার কাছেই প্রতারণার শিকার, সব হারিয়ে আত্মঘাতী তৃণমূল নেতা

Prabir Mondal
3 Min Read

দেবনাথ মোদক, বাঁকুড়াঃ হাতে তিন চারটে চাকরি রয়েছে। কিন্তু তার জন্য দিতে হবে মোটা অঙ্কের টাকা। অভিযোগ, ২০১৭ সালে দলেরই পঞ্চায়েত প্রধানকে এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা, যিনি পরে পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পদেও বসেছিলেন। প্রস্তাব শুনে নিজের ছেলে ও দুই আত্মীয়ের চাকরির জন্য ২০ লক্ষ টাকা তুলেও দিয়েছিলেন তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধান। কিন্তু চাকরি মেলেনি, মেলেনি দেওয়া টাকাও।

উল্টে টাকা চাওয়ায় নিয়মিত মিলত হুমকি। সেই মানসিক অবসাদে এবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন বর্তমানে প্রাক্তন ওই পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী। বাঁকুড়ার কোতুলপুরের এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হতেই বেপাত্তা অভিযুক্ত প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্থানীয় ব্লক তৃনমূল নেতৃত্ব।

জানা গিয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের দখলে থাকা বাঁকুড়ার কোতুলপুর ব্লকের দেশড়া কোয়ালপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন রূপা মণ্ডল। রাজনৈতিক সূত্রেই আলাপ ছিল ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তৃণমূল পরিচালিত কোতুলপুর পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অভিযোগ ২০১৭ সালে সন্দীপ তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধানকে জানান, দলের প্রভাবশালীদের সঙ্গে তাঁর বিশেষ যোগ থাকায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ সি ও ডি পদে তিন থেকে চার জনের চাকরি তিনি করে দিতে পারবেন। তবে তার জন্য লাগবে মোটা অঙ্কের টাকা।

সন্দীপের দেওয়া টোপে নিজের ছেলে ও দুই আত্মীয়ের চাকরির জন্য তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধান রূপা ও তাঁর স্বামী ধর্মদাস মোট ২০ লক্ষ টাকা সন্দীপের হাতে তুলে দেন বলে অভিযোগ। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জনপ্রতিনিধির পদ হারান রূপা। তবে ওই বছরই কোতুলপুর পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পদে বসেন সন্দীপ। কার্যতঃ তখন থেকেই চাকরি পাওয়ার আশা হারাতে থাকেন রূপা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হলে চাকরি পাওয়ার আশা পুরোপুরি হারান রূপা। এরপর থেকেই দেওয়া ২০ লক্ষ টাকা সন্দীপের কাছে ফেরত চান রূপা ও তাঁর স্বামী। সন্দীপ প্রথমে ওই টাকা ফেরত দিয়ে দেবে বললেও, পরবর্তীতে পাল্টা ধর্মদাসকেও হুমকি দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ।


এতেই মানসিক অবসাদে ভূগতে শুরু করেন ধর্মদাস মণ্ডল। রবিবার দুপুরে আচমকাই তিনি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। স্ত্রী রূপা মণ্ডল তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের কাছে ধার করে এবং ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে সন্দীপকে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা তাঁরা দিয়েছিলেন। সন্দীপ সেই টাকা ফেরত না দেওয়ায় নিজের জমি বিক্রি করতে হয়েছে। আর তাতেই স্বামী ধর্মদাস মানসিক অবসাদে চলে যান।

কোতুলপুর থানায় সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান মৃত ধর্মদাস মন্ডলের ছেলে। আর তারপর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যায় অভিযুক্ত।

পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষের এমন কীর্তিতে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পড়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে কোতুলপুর ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের সাফাই বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। অভিযোগ সত্য হলে প্রশাসনের পাশাপাশি দলও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। জেলা নেতৃত্বের দাবি, দল কোনওরকম দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *