টুডে নিউজ সার্ভিসঃ তৃণমূল কংগ্রেসের একুশে জুলাই। কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করেছেন শহর কলকাতার ধর্মতলার প্রাণকেন্দ্রে। আর এই হাইভোল্টেজ সমাবেশ হচ্ছে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্য পাওয়ার পর। একই মঞ্চে এদিন দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অখিলেশ যাদবকে। এখান থেকেই মানুষকে বার্তা দিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে। শহিদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রেখে বলেন –
বাংলায় আসার জন্য অখিলেশ যাদব-কে ধন্যবাদ। দিল্লির সরকার বেশি দিন টিকবে না। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশে খেলা দেখিয়েছে। বিজেপির তো সরে যাওয়া উচিত ছিল নির্বাচন কমিশনের একতরফা আচরণের পরেও লোকসভা নির্বাচনে, বিধানসভা উপনির্বাচনে মানুষ আমাদের পাশে থেকেছেন। এজেন্সির ধমকানি-চমকানির পরেও বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতে এসেছি, তাতে স্যালুট জানাই বাংলার মানুষকে। যাঁরা আমাদের সমর্থন দেননি, আগামী দিন তাঁদের কাছে সমর্থন আশা করব। সাধারণ মানুষ ছাড়া তৃণমূল পথ চলতে পারে না। আমরা যত জিতব, আমাদের তত নরম হতে হবে। যত জিতব, তত আমাদের দায়িত্ব বাড়বে। উত্তরবঙ্গে আমাদের রেজাল্ট খারাপ হয়েছে, আশা করব ভবিষ্যতে তারা আমাদের সমর্থন করবে আমরা একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা লোকসভায় ৩৮ শতাংশ নির্বাচিত মহিলা প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিয়েছি। তাঁরা আমাদের সম্পদ। একটা পার্টির সম্পদ সবাইকে নিয়ে চলা আমরা দায়িত্বে আসার আগে দারিদ্রসীমার নীচে ছিলেন ৫৭.৬ শতাংশ মানুষ। আমাদের জমানায় তা ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে।
আমি দলে বিত্তবান লোক চাই না। বিবেকবান লোক চাই। কেন জানেন? পয়সা আসে, চলে যায়। কিন্তু সেবার কোনো বিকল্প নেই যেন কারও বিরুদ্ধে দল কোনও অভিযোগ না পায়। অভিযোগ পেলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব। আমি চাই আপনারা গরিব থাকুন। তার মানে ঘরে যা আছে, সেটা খেয়ে বেঁচে থাকুন। লোভ করার দরকার নেই অন্যায় করলে আমি দলের কাউকে ছাড়ি না। গ্রেফতার করি। অন্যায় করবেন না, অন্যায় সহ্য করবেন না। আমি পরিষ্কার বলছি, মা-বোনেদের সম্মান দেবেন আমরা বাংলার অস্তিত্ব রক্ষা করব। বাংলাই দেশের অস্তিত্ব রক্ষা করবে বিজেপি আন্দোলনে পারে না। আমার কাছে ১০ লক্ষ সরকারি চাকরি তৈরি আছে। কিন্তু আমি কিছু করতে গেলে আদালতে ছোটে তারা। কখনও বলছে ২৬ হাজারের চাকরি খাই, কখনও বলছে ৪২ হাজারের চাকরি খাই, কখনও বলছে ওবিসি উঠিয়ে দাও। উঠবে না। আমরা আইনি লড়াই করছি, করে যাব আমরা দুর্নীতির কাছে মাথা নত করব না। এটা আজকে শপথ নিন। আমরা লড়াই করব।’’
তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টি গায়ে লাগল তো? এ তো স্নান করলে ধুয়ে যাবে, কিন্তু নোংরা গায়ে লাগলে সেটা ধোয়া যায় না। কেউ যেন আপনাকে লোভী বানাতে না পারে। আমাদের শপথ নিতে হবে, দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস নয়। যাঁরা নির্বাচিত হয়ে মানুষের সেবা করবেন না, তাঁদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখব না তৃণমূল করতে গেলে সকলকে নিয়ে চলতে হবে। যেখানে যেখানে জিতেছেন, সেখানে সেখানে গিয়ে মানুষকে ধন্যবাদ জানাবেন। মানুষের জন্য কাজ করবেন। যেখানে যেখানে আমরা জিতিনি, সেখানকার মানুষের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন। মনে রাখবেন গাড়িতে ঘোরার চেয়ে পায়ে হেঁটে ঘোরা ভাল। তাতে শরীর-মন ভাল থাকে। বড় গাড়িতে ঘোরার থেকে স্কুটার, সাইকেলে ঘোরা ভালো বাংলাদেশে যদি পড়াশোনার সূত্রে কেউ গিয়ে থাকেন, কেউ যদি চিকিৎসার জন্য গিয়ে আটকে পড়েন, কোনও রকমের সহযোগিতার দরকার হলে আমরা পাশে আছি।’’ তার পরই তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বলব না, ওটা আলাদা দেশ। যা বলবে, ভারত সরকার বলবে। আমি এটুকু বলতে পারি, যদি অসহায় মানুষ বাংলার দরজায় খটখট করে তবে আমরা আশ্রয় নিশ্চয়ই দেব। রাষ্ট্রপুঞ্জের একটা নির্দেশ আছে, কেউ যদি শরণার্থী হন, তবে তার পাশের এলাকা সম্মান জানাবে। বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যেন কোনো প্ররোচনায় পা না-দিই, আমরা যেন উত্তেজনায় না-জড়াই। যারই রক্ত ঝরুক, তাদের সঙ্গে আমাদের সহমর্মিতা আছে। আমরাও খবর রাখছি। ছাত্রছাত্রীদের তাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে। আমার কিছু বলার নেই।
Social