Breaking News

আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতাল দেশের মধ্যে মডেল গ্ৰামীণ হাসপাতালের শিরোপা পেতে চলেছে

অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়াঃ  আগামী দিনে দেশের মধ্যে মডেল গ্ৰামীণ হাসপাতাল এর শিরোপা পেতে চলেছে “আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতাল।” ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের স্বপ্নপ্রসূত আমতা প্রাথমিক হাসপাতাল বিগত বাম শাসনের সময় থেকে দুর্ণীতির আখড়া হয়ে উঠেছিল। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে খাতা-কলমে ৪ জন চিকিৎসক থাকলেও তাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাওয়া যেত না। চিকিৎসকরা ব্যস্ত থাকতো স্থানীয় কোনো পলিক্লিনিকে, নাসিং হোমে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পুকুরের মাছ চাষ করে সেই মাছ দুষ্কৃতকারীরা বিক্রি করত। স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে কোনো টাকা দিত না। স্বাস্ব্য কেন্দ্র জঞ্জাল ও আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।পশু যন্তুরাও ঢুকতে ভয় পেত। কোনো বেড ছিল না এই হাসপাতালে। শরীর খারাপ হলে রোগী ও রোগীর আত্নীয় স্বজনেরা এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসতে ভয় পেত। ৪ একর নিয়ে গঠিত এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধিকাংশ জায়গা দখল হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যা নামলে শিয়ালের ডাক শোনা যেত। সময়ে সময়ে তাদের দেখাও মিলতো। পোড়ো ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছিল।  জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। চোলাই মদের ঠেক ও দুষ্কৃতীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। হাসপাতাল হয়ে গিয়েছিল অটো- টোটো, রিক্সা স্ট্যান্ড।

এই গ্ৰামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল আমতা, জয়পুর, উদয়নারায়ণপুর সহ পার্শ্ববর্তী জেলা হুগলিবাসীরা। 

আমতাবাসীদের অভিযোগ বাম শাসনের সময় ই এই আমতা থেকে স্বাস্থ্য দফতরের রাষ্ট্র মন্ত্রী হয়েছিলেন প্রত্যুষ মুখার্জি। তিনি এই হাসপাতালের উন্নতির জন্য কোনো চেষ্টা করেন নি‌।

২০১১ সালে বিধান সভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য ডাঃ নির্মল মাজী উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েই আমতাবাসীদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি বিধায়ক হলে আমতা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেহাল দশা ফিরিয়ে দেবেন। ২০১১, ২০১৬, ২০২১ সালে এই উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্র থেকে পরপরই ৩ বার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে ৩ বারই বিধায়ক হন। ২০১১ সালে এই উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হিসাবে জয়ী হয়ে ডাঃ নির্মল মাজী জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে আমতা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের হাল ফেরানোর জন্য সচেষ্ট হন। তিনি এই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গা পরিমাপ করে জবর দখল হওয়া জায়গা উদ্ধার করে চর্তুসীমায় সুদৃশ্য ২ টি প্রবেশ তোরণ তৈরী সহ প্রাচীর নির্মাণ করেন।স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পুকুরটি দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে পুকুরের চার পাশে পার্ক তৈরী করেন। পুকুরে মাছ চাষ করে তার বিক্রিত অর্থ হাসপাতাল উন্নয়নে কাজে লাগান। জরাজীর্ণ বিল্ডিং গুলির আমূল সংস্কার সহ নতুন বিল্ডিং তৈরী করেন। ধাপে ধাপে ১০,৪০,৮০,১২০,১৪০ বেডের করেন। এরপর আমতা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে উন্নিত করে আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতালে উন্নিত করেন। তৈরী হয় দ্বিতল বিল্ডিং। নানান চিকিৎসা পরিষেবা শুরু হয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে। বর্তমানে এই গ্ৰামীণ হাসপাতালে ৩৫০ টি বেড আছে।  

বর্তমানে এই গ্ৰামীণ হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা ও হাসপাতালের পরিকাঠামোয় জনগণ সন্তুষ্ট। হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা ও। হাসপাতালের পরিকাঠামো সম্পর্কে জনগণের বক্তব্য, ‘ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের স্বপ্নের আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতাল সত্যিই পরিপূর্ণতা পাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্রের বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজীর এই উদ্যোগের জন্য আপামর জনগণ বিধায়কের প্রসংসা করেছেন।

ডাঃ নির্মল মাজী এই গ্ৰামীণ হাসপাতাল কে রাজ্য তথা দেশের মধ্যে মডেল গ্ৰামীণ হাসপাতাল করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় তৈরী করছেন আলাদা করে ৮ তলা বিল্ডিং। এই গ্ৰামীণ হাসপাতালে আগামী দিনে কলকাতার বড় বড় হাসপাতালের মতো সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে। এই এলাকার মানুষদের আর উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার জন্য আর কলকাতায় যেতে হবে না। আগামী এই গ্ৰামীণ হাসপাতাল হবে দেশের মধ্যে মডেল গ্ৰামীণ হাসপাতাল। আগামী দিনে এই হাসপাতালে যে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে তা হল, ট্রমা কেয়ার ইউনিট, ব্রাণ ইউনিট, আই-সি-ইউ, এস-এন-সি-ইউনিট, চোখের অপারেশন, উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা সংক্রান্ত নানান পরীক্ষা – নীরিক্ষা কেন্দ্র। বর্তমানে ১০০ টি নানান পরীক্ষা – নীরিক্ষা হচ্ছে। এছাড়াও হচ্ছে নাসিং স্কুল,নাসিং কলেজ, চিকিৎসক,নার্স – স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য কোয়ার্টার।

আট তলা বিল্ডিং এর ৪ তলার নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে। আট তলা বিল্ডিং এর কাজ শেষ হলে তা হবে ৫০০ শয্যার। পশ্চিমবঙ্গে এত বড় গ্ৰামীণ হাসপাতাল আর কোথাও নেই। আট তলা বিল্ডিংয়ের ৪ তলা বিল্ডিং এর কাজ শেষ হওয়ায়  তা পরিদর্শনে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতরে  প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নারায়ণ স্বরূপ নিগম। সঙ্গে ছিলেন হাওড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাই চন্দ্র মন্ডল, উলুবেড়িয়া মহকুমা শাসক শমীক ঘোষ,আমতা ১ নং ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক আদৃতা সমাদ্দার, আমতা ১নং ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আকাশ মজুমদার। আমতা গ্ৰামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন নারায়ণ স্বরূপ নিগম। তিনি বলেন,  “খুব শীঘ্রই ৪ তলা বিল্ডিংয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা শুরু করে দেওয়া হবে। তারপর বাকি ৪ তলার বিল্ডিং কাজ সম্পন্ন হলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা হবে।” তিনি আরও বলেন, ‘আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতালে সম্পুর্ণভাবে  আধুনিক পরিকাঠামোয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা ও নানান রোগের লক্ষণ নির্নয় এর জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন মেশিন দ্বারা সম্পুর্ণভাবে হাসপাতালের সমস্ত পরিষেবা চালু হয়ে গেলে, ‘আমতা গ্ৰামীণ  হাসপাতাল ‘ দেশের মধ্যে   ‘ মডেল গ্ৰামীণ হাসপাতাল’-এর শিরোপা অর্জন করবে।”

             

About Burdwan Today

Check Also

রাজা রামমোহন রায়ের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন

টুডে নিউজ সার্ভিস, কালনাঃ কালনার রামমোহন রায় ছাত্রী নিবাসে মঙ্গলবার উন্মোচন হলো রাজা রামমোহন রায়ের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *