টুডে নিউজ সার্ভিসঃ শুক্রবার ১ জুলাই, ২০২২ রথযাত্রা। ঐতিহ্যে পুরীর পরেই মাহেশের স্থান। পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে পুরানো ও বড় রথযাত্রা উৎসব এটি। পুরীর পরেই মাহেশের রথযাত্রার স্থান। ভারতের ২য় বৃহত্তম। বিশ্বের ২য় প্রাচীনতম। প্রতিবছর দু’লক্ষ ভক্ত আসেন। এই পরম্পরা চলে আসছে ১৩৯৬ সাল থেকে। মাহেশকে বলে ‘নব নীলাচল’।
কথিত জগন্নাথের ভক্ত শ্রীচৈতন্য পুরীর পথে মাহেশ মন্দির দর্শনে এসে অচৈতন্য হয়ে সমাধিতে যান। তারপরে এই জায়গার নাম হয় নব নীলাচল। জনশ্রুতি ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী সাধুকে পুরীর জগন্নাথকে ভোগ দিতে দেওয়া হয়নি। মনমরা সাধু আমৃত্যু অনশনে বসেন। স্বপ্নে জগন্নাথ অনশন তুলে ভক্তের হাতে ভোগ খেতে চান। জগন্নাথদেব ধ্রুবানন্দকে মাহেশে যেতে বলেন। আশ্বাস দেন বিগ্রহ তৈরির জন্য নদীতে নিমকাঠ পাঠাবেন। মাহেশে ফিরে গঙ্গা তীরে শুরু করেন সাধনা। ঝড়বৃষ্টির রাতে নিমকাঠ পেয়ে বলরাম, জগন্নাথ ও শুভদ্রার মূর্তি তৈরি করে মন্দির স্থাপন করেন। এখন মন্দিরের নতুন পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। রথযাত্রা চলছে ১৩৯৬ সাল থেকেই। ১৮৮৫ সাল থেকে ব্যবহার হচ্ছে এখনকার রথটি। রথযাত্রা শুরু করেন চৈতন্য শিষ্য কমলাকর পিপলাই। পরে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হন। ১৭৯৭ সালে মন্দিরে কাঠের রথ দান করেন কৃষ্ণরাম বসু। ঐ রথ সহ আরো দুটি রথ পুড়ে যায়। ১৮৮৫ সালের রথে ১২টি চাকা, চারতলা এই রথ ৫০ ফুট উচ্চ। ওজন ১২৫ টন। স্নানযাত্রার পরে ‘অঙ্গরাগ’ উৎসব ও রংয়ের পর হয় ‘নবযৌবন উৎসব’। রথে সকলেই বিগ্রহ স্পর্শ করতে বা ফুল মালা দিতে পারেন। প্রভুকে পছন্দের মিষ্টি দেওয়া হয়। জনশ্রুতি জগন্নাথদেব মাহেশে আসেন মিষ্টি খেতে। তরুণের বেশে মন্দিরের কাছে মহেশ চন্দ্র দত্তের দোকানে ঢুকে বেশ কয়েকটি’গুটখে সন্দেশ’ খেয়ে ফেলেন। তাঁর টাকা না থাকায় নিজের সোনার বালাটি দাম মেটাতে দিয়ে দেন। পরদিন পুরোহিত দেখেন ঠাকুরের বালাটি নেই। খোঁজা শুরু হলে বিষয়টি জানা যায়। এখনও ভক্তরা মাহেশে দর্শনে এলে এই দোকানের গুটখে সন্দেশ কিনে ভোগ দেন।
বিশ্বে পুরীর রথের পর মাহেশের রথের স্থান। ৬২৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাহেশের রথ। আগে কাঠের রথ থাকলেও বর্তমানের লোহার রথটি ১৮৮৫ সালে কৃষ্ণ রাম বসুর বদান্যতায় দুই মিলিয়ন টাকায় বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা মার্টিন বার্ণ তৈরী করে। নবরত্ন মন্দিরের আদলে সুদৃশ্য রথ মজবুত লোহার চাকা ও লোহার ফ্রেমওয়ার্কে তৈরী। আছে হ্যান্ড ব্রেকও। লোহার ফ্রেমের উপর কারুকার্য করে কাঠ লাগিয়ে তৈরি হয়েছে বহিরঙ্গ। রঙ দিয়ে রাঙানো ছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ, চৈতন্য, নিতাই, গৌর সহ সুন্দর পেন্টিং। জীবন্ত মনে হবে কাঠের ঘোড়া ও চালককে। শিখরে সুদৃশ্য সিল্কের বিজয় পতাকা। স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র দর্শন করেছেন ঐতিহাসিক এই রথযাত্রা। লিখেছেন তাঁর অমর কাহিনী “রাধারাণী”। এক মাসের মেলা যথেষ্ট আকর্ষণীয়। জি টি রোড ধরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা দেড় কিমি দূরে মাসীর বাড়ী যান। জিটি রোড দুইপাশ এই অঞ্চলে যথেষ্ট চওড়া। এক সপ্তাহ পর উল্টোরথে জগন্নাথ ফিরেন নিজবাড়ি বা মন্দিরে।
রোডের দুধারে জমাটি মেলাতে নাগরদোলা, ম্যাজিক, পুতুল নাচ, মৃত্যুকূপ, মোটর সাইকেল খেলা, পাঁপড়, জিলিপি, খাজা, ঝাল মুড়ি, ফুচকা, আইসক্রিম, চাট মশলা, ধামা, মাটির ও কাঠের পুতুল, (কৃষ্ণনগর, অগ্রদীপ বর্ধমান) কুলো, কত কি? লক্ষীর পাঁচালি, পাঁজি, ঘরকন্নার টিপস, রান্নার বই, গানের বই, হারমোনিয়াম শিক্ষা, ম্যাজিক শিক্ষা, ডিটেকটিভ বই। মেলার আকর্ষণ উন্নত মানের চারাগাছ প্রদর্শনী ও বিক্রয়। বলাগড়, জিরাট, বাঁশবেড়িয়া, আদি সপ্তগ্রাম থেকে আসে নার্সারি। আসে কলকাতার গ্লোব নার্সারিও। চারাগাছ, ফুলগাছ, ফল মূলের গাছ, শাক সবজি বীজ মিলে। কলেজের এনএসএস ইউনিট রথে সারাদিন ক্যাম্প করে প্রাথমিক চিকিৎসা, হারানো প্রাপ্তি, নানা সেবা কাজ করে। রথের মেলার পাঁপর! তার আকর্ষণ! নাইবা বললাম।
তথ্যসূত্র ও ছবি সংগৃহীত
Social