এ সোনা ইডি নিয়ে যাবে না…

Burdwan Today
3 Min Read

   

টুডে নিউজ সার্ভিসঃ অচিন্ত্য ভারোত্তলন করলো আসলে বাংলার। হেঁট হয়ে যাওয়া মাথা উচুঁ করে তাকাতে সাহস যোগালো ফের। অচিন্ত্য শিউলি কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতলেন। বাংলার প্রথম অ্যাথলিট হিসেবে গেমসে সোনা জিতে রেকর্ড হাওড়ার অচিন্ত্যর। ভারোত্তলন ৭৩ কেজি বিভাগে জিতেছেন সোনা। যে সোনার প্রতি ভরির হিসেব আছে অচিন্ত্যর কাছে। যে সোনা জিততে সিনেমার চিত্রনাট্যকে হার মানিয়ে দিয়েছে শিউলি পরিবার। যে সোনা জিততে হয়েছে অনেকগুলো ঝড় ঝাপটা সামলে। যে সোনা ইডি নিয়ে যেতে পারবে না কোনোদিন। যে সোনা লুকিয়ে রাখার প্রয়োজন পড়বে না। আর লুকিয়ে রাখবেও বা কোথায়?

হাওড়ার দেউলপুরে অচিন্ত্যর মাটির দেওয়ালের বাড়িতে টিনের ছাদ। মা জরির কাজ করে সংসার চালান কোনওক্রমে। সাপ্তাহিক রোজগার পাঁচশো টাকা। তা-ও নিয়মিত নয় সেই কাজ। দাদা অলক দমকল দফতরের অস্থায়ী কর্মী। কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপের দু’টি বিভাগে জোড়া সোনা, যুব এশিয়ান চ্যাম্পিনশিপে রুপো, বাংলার হয়ে জেতা তিনটি সোনা-সহ আটটি পদক ঝুলছে ঘরের কোণের পেরেকে। আলমারি নেই পদক সাজিয়ে রাখার।

প্রত্যেক ভাইয়ের একটা দারুণ সাফল্যে অনেকে ভূমিকা বোধহয় দাদার থাকে। শচীন হোক বা সৌরভ। এক্ষেত্রে অচিন্ত্য। ভাইয়ের খেলার খরচ চালাতে গিয়ে একসময় ছাড়তে হয় দাদার খেলা। খেলা চালানোর জন্য প্রোটিন খাবার মিলত না। তাও লড়ে গেছে দুই ভাই মিলে। সোনার মেডেল চাই। বাবার শেষকৃত্য করেছিলেন দুই ভাই ধার করে, ধান বয়ে মিলত ঘুগনি-ডিম। সেই খেয়ে ওঠাও ওজন।

পার্থ-অর্পিতার ৫০ কোটি টাকায় ঠিক কত প্লেট ডিম ঘুগনি মেলে? কতগুলো পদক সাজিয়ে রাখার আলমারি কেনা যায়? কতগুলো মানুষের ঠিক শেষকৃত্য সম্পন্ন করার টাকা আসে? অর্পিতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচ কেজি সোনা গলিয়ে ঠিক কতগুলো সোনার মেডেল বানানো যায়? এই সম্মান মেলে? থুতু ছেটানো বন্ধ হয়? 

অচিন্ত্য বোধহয় আসলে উত্তোলন করল বাঙালিদের। সারা গায়ে আলকাতরা মাথা, মাথা হেঁট হয়ে যাওয়া আমাদের। এক টানে মাথার উপরে তুলে দেখালো ঠিক কতটা প্রদীপের নিচে অন্ধকার রাখা বাংলার ক্রীড়াবিদদের ভাগ্যে। কাদের টাকা পাওয়ার কথা আর কারা লুটেপুটে খাচ্ছে। অচিন্ত্য নিশ্চিত থাকতে পারে। তার এই সোনা পৃথিবীর কোন এজেন্সি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যেতে পারবে না। টিনের ছাদ, মাটির দেওয়ালের এক কোনে ঝোলানো থাকবে এই সোনার পদক। সসম্মানে। 

এই পদকের জন্য চুরির টাকায় গোটা ফ্ল্যাট প্রয়োজন নেই। চার পাঁচটা বাগানবাড়িতে দরকার নেই। দরকার অদম্য জেদ। যেই জেদ আমরা রোজ দেখছি চাকরিপ্রার্থী আন্দোলনকারিদের মধ্যে। চোয়াল শক্ত করে রোজ অপমান, অবজ্ঞা, শ্লেষ, পুলিশের  চোখ রাঙানি বহন করে চলেছে। দিনের শেষে ওরাও ফিরে যায় অচিন্ত্যর মত কোন টিনের চালে। একটা সোনার মেডেল না হোক, একটা নিয়োগের আশায়। ওটাই ওদের সোনার মেডেল। ওদের স্বপ্ন দেখতে আজও ভালো লাগে। শান্তিতে ঘুম হয়। খাটের নিচে ওদের টাকার পাহাড় যে নেই।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *