সাধকশ্রেষ্ঠ শ্রীবামাক্ষ্যার শেষের সেই দিনটি

Burdwan Today
4 Min Read

 টুডে নিউজ সার্ভিসঃ বামাক্ষ্যাপা বাবার তখন বয়স হয়েছে প্রায় ৭৪ বছর। শরীরের মাংস পিণ্ড ঝুলে গিয়েছে। বসে থাকলে উঠতে অসুবিধা হয়। নগেন বাগচি বসিয়ে উঠিয়ে দিতেন। 

হঠাৎ একদিন ক্ষ্যাপাবাবা রাত্রিতে নগেনকে বললেন “ডাক এসেছে লগেন, ডাক এসেছে”। “ওরা আমাকে ডাকছেন”। নগেন ক্ষ্যাপাবাবাকে বললেন কি সব উল্টো পাল্টা বকছ বাবা। চুপ করো তো ! তুমি এখন শুয়ে পড়। এখন গভীর রাত। মায়ের মঙ্গল আরতির এখন অনেক দেরি। এই বলে ক্ষ্যাপা বাবাকে শুইয়ে দিলেন এবং পাশের বিছানায় নগেন শুয়ে পড়লেন। নগেনের আর ঘুম আসে না। কেননা নগেন বুঝতে পারলেন ক্ষ্যাপা বাবা আর এ জগতে থাকবেন না। 

রাত্রি পোহাল। ঊষাকাল হঠাৎ ক্ষ্যাপাবাবা ওই ভোর বেলায় নগেনকে বললেন, “লগেন আমাকে নদীর ঘাটে নিয়ে চল্ — আমি চান করব”। নগেন বললেন ক্ষ্যাপাবাবা তোমার শরীর ভাল নাই, এত ভোরে তুমি দ্বারকা নদীর জলে চান করবে ! “হ্যাঁ করব শালা ! তাতে তোর কি রে শালা ?” নাদসিদ্ধ ক্ষ্যাপার হুঙ্কারে যেন মহাশ্মশান কেঁপে গেল। পাখিরা সব জেগে গেল। নগেন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ক্ষ্যাপা বাবাকে দ্বারকা নদীর ঘাটে নিয়ে গেলেন। 

ত্রিকালদর্শী নাদসিদ্ধ তন্ত্রসম্রাট বীরাচারী বামাচারী ক্ষ্যাপাবাবাকে নগেন নদীতে নিয়ে গেলেন। ক্ষ্যাপাবাবা নদীতে খুব করে ডুব দিতে লাগলেন। যতবার ডুবলেন ততবার তারা মায়ের নাম ধরেন “জয় জয় তারা” “জয় জয় তারা”। চান করে ক্ষ্যাপা বাবা নদীর ঘাট থেকে অনেক পরে উঠলেন। নগেন বামাক্ষ্যাপাকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষ্যাপা ঝোপড়ায় নিয়ে গেলেন। 

ক্ষ্যাপাবাবা ঝোপড়া থেকে বেড়িয়ে শিমূলতলায় গেলেন। সেখানে মায়ের ব্রহ্ম শিলার চরণে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে অনেক কান্নাকাটি করে মায়ের সঙ্গে অনেক লীলা করলেন। এদিকে মন্দিরে মঙ্গল আরতির ঘন্টা-কাঁসরের আওয়াজ আসিল। মা তারা মা তারা — জয় জয় তারা — জয় জয় তারা নামে ক্ষ্যাপাবাবা মহাশ্মশান নিনাদে কাঁপাতে শুরু করলেন। কে বলবে ক্ষ্যাপাবাবার বয়স হয়েছে। 

মঙ্গল আরতির ঘন্টা শেষ হল। ক্ষ্যাপাবাবা নগেনকে ডেকে বললেন, “লগেন এই দ্যাখ শালা এইখানে আমার সমাধি দিবি। আমার বড়মার সঙ্গে এই কথা হল”। এই বলে ক্ষ্যাপাবাবা লগেনকে বললেন, “তোল শালা তোল”। নগেন ক্ষ্যাপাবাবাকে দুই বাহুতে ধরে তুলে দাঁড় করালেন। ক্ষ্যাপাবাবা ও নগেন ‘ক্ষ্যাপা-ঝোপড়া’ চলে গেলেন। 

ক্ষ্যাপাবাবা লগেনকে বললেন, “শালা গাঁজা সাজ”। নন্দা ততক্ষণে ক্ষ্যাপা-ঝোপড়াতে এসেছেন। নন্দা সারাদিন ক্ষ্যাপা-ঝোপড়াতে কাটিয়ে রাত্রিতে বেশীর ভাগ দিন নদীর ওপারে বাড়িতে চলে যেতেন। নন্দা এসেছে। গাঁজা সাজতে সাজতে নগেন নন্দাকে সব কথা খুলে বললেন। নন্দা সব শুনে হাও মাও করে কাঁদতে লাগলেন। ক্ষ্যাপাবাবা নন্দার কাঁদার শব্দ শুনতে পেয়েছেন। লগনা, ও শালা লগনা, লন্দা শালা কাঁদছে ক্যানেরে ? ও কিছু নয় বাবা বলে নগেন ক্ষ্যাপাবাবাকে বাক্ মানালেন। 

সারাদিন গেল। দুপুরে সামান্য মায়ের ভোগ খেয়ে ছিলেন ক্ষ্যাপাবাবা। সন্ধ্যা বেলায় মায়ের আরতি হয়ে গেল। আরতির প্রসাদ লুচি, চিড়ে, মুড়কি ক্ষ্যাপা খুব সামান্য খেয়ে নগেন ও নন্দাকে খেতে বললেন। তারা প্রসাদ নিলেন। তারপর ক্ষ্যাপাবাবা তন্ত্রের ক্রিয়া শুরু করলেন। মাঝে গ্যাঁজা সেবনও করলেন। তন্ত্রক্রিয়া করার পর উত্তর দিকে মুখ করে ওই যে জয় জয় তারা — জয় জয় তারা রব ধরলেন, ওই নাম ধরেই রইলেন। 

গভীর রাত্রে আনুমানিক ১-০৫ মিনিট নাগাদ ক্ষ্যাপা বাবার ব্রহ্মতালু ফট্ করে ফেটে গেল। ব্রহ্মতালু বেয়ে সামান্য রক্ত গা বেয়ে ভূমিতে পড়ল। বামাক্ষ্যাপার নাদ বন্ধ হয়ে গেল। 

শ্রীশ্রী বামাক্ষ্যাপা বাবা বাংলা ১৩১৮ সনের ২রা শ্রাবণ আষাঢ়ে কৃষ্ণাষ্টমী তিথিতে রাত্রি আনুমানিক ১-০৫ মিনিট নাগাদ ইহলোক ত্যাগ করে শিব লোকে অর্থাৎ মনুষ্য কায়া ত্যাগ করে সুক্ষ্ম শরীরে বিরাজমান হলেন।

সংগৃহীত।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *