Breaking News

নজরুল-রত্ন পুরস্কার কবি ফারুক আহমেদ-এর হাতে তুলে দিলেন সাহিত্যিক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়

টুডে নিউজ সার্ভিসঃ  কুমুদ সাহিত্য মেলায় কোগ্রাম, মঙ্গলকোটে ‘নজরুল রত্ন’ পুরস্কার ও সংবর্ধনা প্রদান করা হয় কবি-সাহিত্যিক ফারুক আহমেদকে।

নজরুল-রত্ন পুরস্কার কবি ফারুক আহমেদ-এর হাতে তুলে দিলেন সাহিত্যিক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। 

পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক আর কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করে প্রতি বছর আয়োজিত হচ্ছে দু’জন কবির মধুর সম্পর্কের আলোকে বিশেষ সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ‘কুমুদ সাহিত্য মেলা’ যা প্রতিবছর বাংলার মুখ উজ্জ্বল করছে।

কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটির সম্পাদক মোল্লা জসিমউদ্দিন জানালেন, সংবর্ধনা ও পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের সম্পাদক ফারুক আহমেদ। 

কুমুদ সাহিত্য মেলায় একঝাঁক কবি সাহিত্যিক ও শিল্পী উপস্থিত ছিলেন। ৩ রা মার্চ মঙ্গলকোটের কোগ্রামে পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক এর জন্মদিন উপলক্ষে কুমুদ সাহিত্য মেলার আয়োজন করছেন মেলা কমিটি। গত দশবছর ধরে চলছে এই কুমুদ সাহিত্য মেলা। 

সাহিত্যিকদের একাংশ উপস্থিত হয়ে আয়োজন সার্থক রূপ দিলেন। ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়, ড. বিজলী সরকার, ড. ললিতা পত্রী, অমিত চক্রবর্তী, সোনালী কাজী, দীপঙ্কর সেন, অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীরা উপস্থিত ছিলেন। 

সাহিত্যিকরা মূল্যবান আলোচনা করলেন মঙ্গলকোটের কোগ্রামে পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক এর জন্মদিন উপলক্ষে কুমুদ সাহিত্য মেলায়।            

বিদ্রোহী কবিতা প্রাক শত বর্ষের মুখে কাজী নজরুল ইসলাম-এর নামে “নজরুল-রত্ন” পুরস্কার ও সংবর্ধনা প্রদান করা হল কবি ফারুক আহমেদকে। তিনি বলেন, বাংলা ও ভারতের কল্যাণে এমুহূর্তে কাজী নজরুল ইসলাম বড় প্রাসঙ্গিক তাঁর লেখা পড়তে হবে। সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতে কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে চর্চা হোক প্রতি ঘরে ঘরে। কাজী নজরুল ইসলাম-এর আর এক নাম ছিল দুঃখু মিয়া। 

এদিনে আরও কয়েকজনকে পুরস্কৃত করা হয় কুমুদ সাহিত্য রত্ন (স্নেহাশিস চক্রবর্তী), শান্তিনিকেতন রত্ন (মনিরুল হক), বাদল সরকার রত্ন (নিগমানন্দ মন্ডল), সাহিত্য রত্ন (বৈশাখী মিত্র চ্যাটার্জি), মঙ্গলকোট রত্ন (তুহিনা সুলতানা), বাচিক রত্ন (স্মৃতিকণা ভাদুড়ী), লোচনদাস রত্ন (রফিকুল ইসলাম খাঁন), হুগলি রত্ন (তন্ময় ঘোষ), নুরুল হুদা রত্ন (আব্দুর রব), পূর্বস্থলী রত্ন (দীপঙ্কর চক্রবর্তী), গলসি রত্ন (সেখ নিজাম আলম), সমীরণ  রত্ন (চন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়), যামিনী রায় রত্ন (দীপঙ্কর সমাদ্দার), অতুল্য ঘোষ রত্ন (অরবিন্দ সিংহ)। 

এদিন তিনজন সাংবাদিককে সংবর্ধনা প্রদান করা হয় উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের পক্ষ থেকে। সম্মাননা পেলেন সুদিন মন্ডল (সংবাদ সারাদিন) ভাতার, পূর্ব বর্ধমান, সুভাষ মজুমদার (তারকেশ্বর নিউজ) তারকেশ্বর, হুগলি, সুরজ প্রসাদ (নুতন ভোর) সদর বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান।

কাজী নজরুল ইসলাম-এর জন্ম ২৫ মে ১৮৯৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয় ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ সালে। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য। বাঙালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন নজরুল। 

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম পুরস্কার পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৭), একুশে পদক (১৯৭৬), পদ্মভূষণ।

বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে কাজী নজরুল ইসলাম সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই “বিদ্রোহী কবি”, তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।

নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযযিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মতো কবিতা;ধূমকেতুর মতো সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়।

মধ্যবয়সে তিনি পিক্‌স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বিদ্রোহী কাজী নজরুলের বিখ্যাত কবিতাসমূহের একটি। কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি ‘বিজলী’ পত্রিকায়। এরপর কবিতাটি মাসিক প্রবাসী (মাঘ ১৩২৮), মাসিক সাধনা (বৈশাখ ১৩২৯) ও ধূমকেতুতে (২২ আগস্ট ১৯২২) ছাপা হয়। প্রকাশিত হওয়া মাত্রই এটি ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি করে। দৃপ্ত বিদ্রোহী মানসিকতা এবং অসাধারণ শব্দবিন্যাস ও ছন্দের জন্য আজও বাঙালি মানসে কবিতাটি “চির উন্নত শির” বিরাজমান। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কবি-সাহিত্যিক ফারুক আহমেদকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় অল ইন্ডিয়া এসসি এণ্ড এসটি রেলওয়ে এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন পক্ষ থেকে। ফারুক আহমেদ বেশ কয়েটি পুরস্কারও পেয়েছেন ইতিমধ্যে। ২০১১, ২০১২ ও ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ ছোটো পত্রিকা সমন্বয় সমিতি “উদার আকাশ”কে শ্রেষ্ঠ শারদ সংখ্যা নির্বাচিত করে। ২০১২ সালে লিটল ম্যাগাজিন বিভাগে “উদার আকাশ” ‘নতুন গতি’ পুরস্কার পায়। বারাসত রবীন্দ্রভবনে কথামালা আয়োজিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উৎসব ২০১৭-র অনুষ্ঠানে ফারুক আহমেদকে ‘কথামালা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। অল ইন্ডিয়া এস সি এণ্ড এস টি রেলওয়ে এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন তাঁদের নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় ফারুক আহমেদকে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ২০১৬ সালের  ৯ সেপ্টেম্বর। নিখিল ভারত শিশুসাহিত্য সংসদ কবি ফারুক আহমেদকে ২০১৭ সালে “চর্যাপদ” পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে। মুর্শিদাবাদ জেলার ইমাম মুয়াজ্জিন সংগঠনের জেলা কমিটির পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হিসেবে ফারুক আহমেদকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে “প্রতিচ্ছবি” সাহিত্য সম্মাননা প্রদান করা হয় ফারুক আহমেদকে। 

উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ ভাঙড়ের ভূমিপুত্র। এলাকার গর্ব। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের তিনি অগ্রদূত। সাহিত্য সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে ‘কলামন্থন অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে’র পক্ষ থেকে ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ‘রোটারি সদনে’ পুরস্কৃত করা হয় “আজীবন কৃতিত্ব  সম্মাননা” দিয়ে। 

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পার্ক সার্কাস ময়দানে বৈচিত্রের মাঝে মহামিলন উৎসবে ‘পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমে’র পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় ফারুক আহমেদকে। এছাড়াও তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন সমাজকল্যাণকর কাজের জন্য। 

বাংলার স্বনামধন্য সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ ফারুক আহমেদকে স্নেহের বাঁধনে বেঁধেছেন। তাঁর প্রতিটি বিশেষ সংখ্যা সস্নেহে উদ্বোধন করেছেন ও মূল্যবান পরামর্শ দান করেছেন মহাশ্বেতা দেবী, শঙ্খ ঘোষ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আবুল বাশার, জয় গোস্বামী, কল্যাণী কাজী,কবীর সুমন, নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবীর, সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নূপুর কাজী, মোস্তাক হোসেন, সুনন্দ সান্যাল প্রমুখ সাহিত্যিক।

স্নেহের বাঁধনে বেঁধেছেন সাহিত্যের আর এক পৃষ্ঠপোষক ও উদ্যোগপতি মোস্তাক হোসেন।

সাহিত্যের পৌরোহিত্য করার সাথে-সাথে একজন সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে সমকালীন সময়ে ঘটে যাওয়া নানান অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেমন জোরালো কলম ধরেছেন তেমনি জোরালো কন্ঠস্বরে প্রতিবাদও করেছেন। এমনকি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের মিছিলে পাও মিলিয়েছেন। ২০১৪ সালে আক্রান্ত আমরা-র নেতৃত্বে ও আরও কয়েকটি সংগঠন মিলে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে যে স্মারকলিপি দেওয়া হয় ফারুক আহমেদ তার অন্যতম সদস্য ছিলেন। এই ডেপুটেশনের পর আলাদা সাক্ষাৎ করে ফারুক আহমেদ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাতে “উদার আকাশ” পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা ও “উদার আকাশ” প্রকাশনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ তুলে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাতে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনী এবং দিলীপ বেঙ্গসরকার-এর হাতেও “উদার আকাশ” প্রকাশনের গ্রন্থ তুলে দিয়ে তাঁদেরকে সম্মাননা প্রদান করেছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর হাতেও “উদার আকাশ”-এর বিশেষ সংখ্যা “উদার ভারত নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ” তুলে দিয়েছিলেন। রাজ্যের অনেক মন্ত্রীগণ তার প্রকাশনার গ্রন্থ ও পত্রিকা প্রকাশ করেছেন এবং কলম ধরেছেন।

 ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় উদার আকাশ পত্রিকার বইমেলা সংখ্যা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্য সরকারের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উদার আকাশ পত্রিকা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক সুদাংশু শেখর দে, বিশিষ্ট লেখক ও অধ্যাপক অভীক মজুমদার, সাংসদ দোলা সেন, বাংলাদেশের কবি পাবলো শাহি ও ফিরোজা বেগম।

 ২০১৬ সালে বিখ্যাত তাজ হোটেলে একটি অনুষ্ঠানে ফারুক আহমেদ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন-এর। এরপর ওই সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি অমর্ত্য সেন প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের উপর গবেষণা মূলক একটি রিপোর্ট।  ড. অমর্ত্য সেন-এর প্রতিষ্ঠিত প্রতিচি ট্রাস্ট, গাইডেন্স গিল্ড এবং স্ন্যাপ সংগঠনের উদ্যোগে কলকাতার গোর্কি সদনে বই আকারে ওই রিপোর্ট প্রকাশের অনুষ্ঠানে আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম ফারুক আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 

ফারুক আহমেদ-এর সবচাইতে বড়ো গুণ তিনি নিজে লেখার চাইতে অপরকে বেশি লেখাতে ভালবাসেন। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে অনেক প্রতিভা কুঁড়ে-ঘরের অন্ধকারে বসে নীরবে সাহিত্য-সাধনায় মগ্ন আছেন। শহরের নামজাদা পত্র-পত্রিকাগুলিতে তাদের স্থান হয় না। বলা ভালো পাত্তা মেলে না। ফারুক আহমেদ তাঁদের লেখাকে “উদার আকাশ”-এর পাতায় মর্যাদার সঙ্গে তুলে ধরছেন নিরন্তর। অন্যদিকে কারও-কারও ভালো লেখার হাত, কিন্তু লিখতে চান না। এঁদের পিছনে লেগে থেকে সুন্দর লেখা বের করে আনার মতো পুণ্যের কাজ ফারুক আহমেদ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। 

      এই চিন্তা-ভাবনা থেকেই তার প্রকাশনার জগতে পা-রাখা। এ-বিষয়ে তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছায় জন্ম হয়েছে ‘উদার আকাশ” প্রকাশনের’। এখানেও ইতিমধ্যেই মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন তিনি। দুই বাংলার লেখকদের ৮১ টি বই এযাবৎ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ‘উদার আকাশ’ প্রকাশন় থেকে। প্রতিটি বইয়ের বিষয়, ছাপার মান, কাগজ ইত্যাদি যে-কোনও বড়ো প্রকাশনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ‘উদার আকাশ’ প্রকাশনের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো ‘পশ্চিমবাঙলার বাঙালি মুসলমান অন্তবিহীন সমস্যা’, – খাজিম আহমেদ, ‘জীবনশিল্পী রোকেয়া’, – ড. মীরাতুন নাহার, ‘ইসলামের ভুবন’, এবং ‘মোদীর ভারত, গান্ধীর ভারত’, – গৌতম রায়, ‘মানুষ-মাটি-মা’ ও ‘জন্মভূমিশ্চ’, – মোশারফ হোসেন, ‘নজরুল সাহিত্যের দিগ্বলয়,’ নুরুল আমিন বিশ্বাস,  ‘জলের কান্না’, – পলাশকুমার হালদার, ‘সাম্যবাদ : ভারতীয় বিক্ষণ’, আর ‘নজরুল নানা মাত্রা,’-  শেখ মকবুল ইসলাম, ‘পরিবর্তনের সন্ধানে মুর্শিদাবাদের বাঙালি মুসলমান’, – সৌমেন্দ্রকুমার গুপ্ত’ ‘মহাশ্বেতা দেবীর গল্পবিশ্ব : লৈঙ্গিক প্রতিরোধ’, শিবুকান্ত বর্মন, ‘দ্য সেকুলার ভিশন অফ কাজী নজরুল ইসলাম,’ আবুল হোসেন বিশ্বাস, ‘নজরুল সাহিত্যে দেশকাল,’ সা’আদুল ইসলাম, ‘গৌরকিশোর ঘোষ মুসলিম জীবন ও অভিমানস’, শেখ মুঈদুল ইসলাম প্রমুখ।

ফারুক আহমেদ, তিনি নিজের সম্পাদনা কাজেও তাঁর মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন। যা ইতিমধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে। তাঁর সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো ‘রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু’, ‘কংগ্রেস ও বাম-শাসনে মুসলিম ভোট-ব্যাঙ্ক’, ‘আত্মপরিচয়ের অন্বেষণ’, ‘পশ্চিমে সূর্যোদয় রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের উলটপূরাণ’, ‘প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়ন’, ‘মূল্যবোধের অবক্ষয়’ ‘ফুরফুরা শরিফের পয়গম’, সহ বেশ কয়েটি গ্রন্থ। 

আগেই বলেছি নিজে লেখার চাইতে অন্যকে লেখাতে বেশি আনন্দ পান ফারুক আহমেদ। তবুও ধীর গতিতে হলেও নিজের মৌলিক লেখালেখি ও গবেষণার কাজ নীরবে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে গুণগ্রাহীদের চাপে তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘বিশ্বপ্রেম’  প্রকাশিত হয়েছে ও তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘বিনির্মাণ’ প্রকাশিত হতে চলেছে। 

বাংলায় তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলের টক-শোতে চ্যানেলের আমন্ত্রণে উপস্থিত থেকেছেন তিনি। তাঁর মূল্যবান বক্তব্য সে তুলে ধরেছেন বাংলার ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। ২০০৭ সাল থেকে তিনি মুর্শিদাবাদ জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য প্রতিনিয়ত সামাজিক ভাবে জনমত গড়ে তুলতে আন্দোলন করছেন এবং সরকারের কাছে লিখিত ভাবে আবেদনও করেছেন।

একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামের মাটি থেকে তাঁর এই যে উড়ান, তা কেবল তাঁর একার প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরেই। বর্তমান সময়-কালে শহরের পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলে কেউই ওড়ার সাহস দেখাতে পারেনা। খুব কাছ থেকে অনেকেই দেখেছেন তাই অনেকেই বলতে পারেন কেবলই ইচ্ছে-ডানায় ভর করেই তাঁর এই উড়ান। এই মুহূর্তে ফারুক আহমেদ একাধারে জনপ্রিয় সম্পাদক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সমাজ-চিন্তাবিদ ও দক্ষ সংগঠক। 

গত ১৪ নভেম্বর ২০১৭ তাঁরই উদ্যোগে কলকাতার আইসিসিআর সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় গঙ্গা-পদ্মা সাহিত্য-সৌহার্দ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান “ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উৎসব-২০১৭।” দুই বাংলার সংস্কৃতি ও সাহিত্যি-জগতের মেলবন্ধনের মাধ্যমে দুই বাংলা একত্রিত থাকবে আজীবন, ফারুক আহমেদ’দের এই কামনা একদিন যথার্থ হয়ে উঠবে, দল-মত-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে, যেদিন থাকবে না কোনও লুকনো বিদ্বেষ, ভারতবাসী হিসেবে আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছি। সেই সুদিন, –যা অনিবার্য, এবং একদিন আসবেই।  

ফারুক আহমেদ-এর পিতা মোহাম্মদ আবেদ আলি ও মা ফজিলা বেগম, স্ত্রী মৌসুমী বিশ্বাস, কন্যা রাইসা নূর, মূল্যবান দীপ্তিময়ী তারার অনুপ্রেরণাতেই সাহিত্য আকাশে বিরল প্রতিভাদের মধ্যে জ্বলজ্বল করছেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে।

About Burdwan Today

Check Also

মায়ের ঘরে আগুন লাগানোর অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে

জ্যোতির্ময় মণ্ডল, মন্তেশ্বরঃ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মাকে মারধর ও মায়ের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগে ছেলেকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *