Breaking News

অনবদ্য গল্পগ্রন্থ মো: আবেদ আলির অন্য গাঁয়ের আখ্যান


একরামূল হক শেখঃ
‘আগে দেখা গেল আঙ্গা উনি, এখন দেখা গেছে ভাসুর।’ ডাক্তারবাবু কিছুই বুঝতে পারছেন না। রেগে গিয়ে বললেন, কি হয়েছে আপনার?

তখন ডাকা হল দিলদার মিয়াকে। তিনি এসে সব শুনে বললেন, ‘ও বুঝেছি। আগে দেখা গেছে আঙ্গা উনি, মানে প্রথমে সাদা আমাসা হয়েছে। স্বামীর নাম ধরতে নেই। স্বামী সাদাবাবু। তাই নাম না ধরে আঙ্গা উনি। পরে দেখা গেছে ভাসুর। মানে লাল আমাসা। ভাসুর লালবাবু। ভাসুরের নাম ধরা মহাপাপ। তাই কি করে ভাসুরের নাম ধরে ছোটবউ।’ গ্রাম্য বধূর গল্প উল্লেখ আছে। 

‘মাদারের মা শুধু দেখছে, একটা অল্প ফাঁকা জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তাঁর মনে হল, পয়সা খরচ করে এই দেখতে আসে মানুষ, ধোঁয়া দেখে মানুষ কি যে আনন্দ পাচ্ছে, বুঝতে পারল না মাদারের মা। হাফটাইম হল, আলো জ্বলে উঠল। মাদারের শাশুড়ি পিছনে তাকিয়ে দেখল, তাঁর বেয়ান উল্টোদিকে মুখ করে বসে আছে। সবাই বাইরে বেরিয়ে মটকড়াই (চিনেবাদাম) কিনে ভিতরে ঢুকবে ভাবছে। ঠিক সেই সময় মাদারের মা বলল, ‘আমি আর দেখব না। ছি ছি এই সব আবার পয়সা খরচ করে দেখে। শুধু ধোঁয়ার আগুন বেরোচ্ছে।’ বেয়ান বলল, তুমি কোনদিকে তাকিয়ে ছিলে বেয়ান? মাদারের মা বলল, ওই যে ফোকরের মধ্য দিয়ে শুধু ধোঁয়া আর আগুন আসছে। বেয়ান ও সবাই হো হো করে হেসে উঠল। জোর করে মাদারের মাকে হলের ভিতর ঢোকালো তাঁর বেয়ান। আর বলল, তুমি যে কোন যুগের মানুষ বুঝি না। বসো আমার পাশে, আর সামনের দিকে সাদা কাপড়ের দিকে তাকাও।’ গল্প ‘মাদারের মা’ থেকে কিছু অংশ। 

মোঃ আবেদ আলির-র এই আখ্যানগুলিতে জটিলতার অঙ্কুর থাকলেও সেই জটিলতার কাছাকাছি পৌঁছাতে পাঠককে জটিল পথ অবলম্বন করতে হবে না। লেখকের সহজ বর্ণনার কৌশলীপনাতে তা সরল হয়ে উঠেছে। কিশোর থেকে বয়স্ক, সর্বস্তরীয় মানুষ এই গ্রন্থের প্রতিটি গল্পকে অনুভব করতে পারবেন। ভূমিকাতে মুক্তোর সন্ধান দিয়েছেন ড. আমিনা খাতুন, বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়।

গল্পগুলির ফর্ম আলাদা আলাদা, ভাষারীতিও কমবেশি স্বাতন্ত্রে ভাস্বর। এই স্বাতন্ত্রের রস গ্রহণ বা আস্বাদনের স্বার্থকতা প্রশ্নে কথা ওঠার অবকাশ রয়েছে। তথাকথিত ইন্টেলেকচুয়াল পাঠক হয়তো তেমন খুশি হবেন না। তাদের এই অখুশি হওয়াকে অস্বীকার না করেও বলা যায় শাশ্বত যে সত্য ও সুন্দরের লক্ষ্যে একজন সাহিত্যিক পথ চলেন গল্পকার সেই নিখাদ সৌন্দর্যকেই ছুঁতে চেয়েছেন বিশেষ করে। আর তার জন্য প্রয়োজনে গল্পের শরীর থেকে খসিয়ে নেওয়া হয়েছে অর্ধসত্য বা ছদ্ম সত্যের অনেক আবরণ। দ্বিতীয় ভূমিকাতে লিখেছেন ড. সাইফুল্লাহ, বাংলা বিভাগ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা।

মোঃ আবেদ আলি-র জন্ম ২৬ অক্টোবর ১৯৫০। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড় থানার নাটাপুকুর গ্রামে। পাঁচ বছর বয়সেই মাতৃহীন মোঃ আবেদ আলি নানা ও নানির আদর যত্নে এবং নিজ প্রচেষ্টায় পড়াশোনা করেছেন। গ্রামীণ ডাক্তার তিনি খুব কাছ থেকে গ্রাম্য মানুষের অজ্ঞতা, সংস্কার ও বিশ্বাস দেখেছেন। এবং এরই মধ্যে তিনি পেয়েছেন নানা অমুল্য রতন। শাশ্বত সত্য, গ্রাম্য সহজ, সরলতা, আত্মীয়তা, পারবারিক বন্ধনের নানা বাস্তবতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাঁর গল্পে। বর্ণনায় মৃদু হাস্য-রস, স্বাদু গদ্যের বাংলা ও গ্রাম্য ভাষার সমৃদ্ধ বর্ণনায় মোঃ আবেদ আলির গল্প আমার মতো গল্পের না-পাঠককেও পুরো বইটি পড়িয়েই ছাড়ে। তিনি বেশি বেশি লিখুন, এটুকুই প্রত্যাশা। সংগ্রহ-যোগ্য গল্পের বই ‘অন্য গায়ের আখ্যান’ পাঠ নিলে অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে মন।

[ অন্য গাঁয়ের আখ্যান, মো: আবেদ আলি, উদার আকাশ, ঘটকপুকুর, ডাক বি গোবিন্দপুর, ভাঙড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পিন ৭৪৩৫০২, মূল্য ৭০/- ফোন: ৯৭৩৩৯৭৪৪৯৮]

About Burdwan Today

Check Also

জ্বালানি গুলে পা দেওয়ায় অপমান! আত্মঘাতী ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া

টুডে নিউজ সার্ভিস, দুর্গাপুরঃ আর সপ্তম শ্রেণীতে ওঠা হলো না! ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *