Breaking News

রাত পোহালেই ভোট উৎসবের ফলাফল! ঠিক তার আগে বুথ ফেরত সমীক্ষা

বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, নদীয়াঃ দীর্ঘদিন করোনাকালে কর্মহীন পরিস্থিতির মধ্যেও অকাল নির্বাচন। কি কারনে! এই নিয়ে বাকবিতন্ডা জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা। আর তাই নিয়ে রাজ্যের আর চারটি বিধানসভার মত শান্তিপুরেও রাজনৈতিক কর্মী সমর্থকদের মধ্যে মহোৎসব লেগেছিল দীর্ঘ এক মাস ধরে। তবে সাধারণ মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি। কংগ্রেস সিপিএম তৃণমূল বিজেপি মূলত এই চার প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছিল এবারের উপনির্বাচনে। প্রত্যেকেই যুবক এবং ভূমিপুত্র। বাংলাদেশ প্রসঙ্গ, নির্বাচনের আবশ্যকতা, শাসকদলের সফলতা বিফলতা, এক দল ত্যাগ করে নতুন দলে যোগদান অথবা প্রত্যাবর্তন এ ধরনের নানা বিষয়ে রাজনৈতিক  চাপানউতরের এর মধ্যেই স্টার প্রচারকরা কনভয় নিয়ে হাজির শান্তিপুরে। জেলা এবং রাজ্যের নেতৃত্ব কখনো গ্রামের মেঠো পথে হেঁটেছেন কখনোবা শহরে পথচলতি দের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন নির্বাচনের স্বার্থে। দু-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট নির্বিঘ্নে সমাপ্ত হয়েছে, উপনির্বাচন হলেও ভোট পোল হয়েছে যথেষ্ট পরিমান ৭৯%। রাজ্যে ক্ষমতায় বিপক্ষে সায় দেওয়া শান্তিপুর ২০১৪ সালে দীর্ঘ চার বার জাতীয় কংগ্রেসের নেতা অজয় দে তৃণমূলে যোগদানের  পর উপ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এবছর জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী দলের খুব ঘনিষ্ঠ না হলেও, গোষ্ঠী কোন্দল এড়াতে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কিশোর গোস্বামী কে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল। কংগ্রেসের রাজু পাল এবং সিপিআইএমের সৌমেন মাহাতো আলাদাভাবেই প্রার্থী ছিল এই উপনির্বাচনে। খুব বেশি জনপ্রতিনিধি না থাকলেও বিজেপির নিরঞ্জন বিশ্বাস দলের পুরোনো কর্মী হিসেবেই টিকিট পেয়ে  মান পেয়েছে এবার। জগন্নাথ সরকারের সাংসদ পদ বহাল রেখে বিধায়ক পদে ইস্তফার কারণেই এই উপনির্বাচন প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর তা সাধারণ মানুষকে ঠিকমত পৌঁছাতে না পারায় বিজেপি বেশ খানিকটা ব্যাকফুটে ছিল প্রথমদিকে, তবে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তিন দিনে আটটি কর্মীসভা করার পর এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ধর্মীয় মেরুকরণ গ্রামে বেশ খানিকটা প্রভাব পড়েছে তা বোঝা গেলো। নির্বাচনে গ্রামে বেশ কিছু জায়গায় তৃণমূল-বিজেপি গন্ডগোলে। আবেগের দিক থেকে সমীর মাহাতো অন্য তিন প্রার্থীর থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও, ২০১৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটের জেতা বিধায়ক তৃণমূলের যাওয়ার পর অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সিপিআইএম যা এত স্বল্প সময়ের মধ্যে মেরামত করার সময় পাননি, অন্যদিকে অর্থাভাব এবং জেলা নেতৃত্বের নিরুপায় ভাবে দায়সারা প্রচার অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিলো শেষদিকে। কংগ্রেস প্রার্থী রাজুপালের আবেগ ছাড়া কোন কিছুই মূলধন ছিল না তবুও নিজের দলের প্রতীক চিহ্ন আগামীর জন্য টিকিয়ে রাখার সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।

 উপনির্বাচনে শাসক দলের প্রার্থীর পালে হাওয়া থাকে অনেকটাই তাই ব্রজ কিশোর গোস্বামী গোঁড়া হিন্দুত্ব ছেড়ে অনেকটাই সেক্যুলার হওয়ার চেষ্টা করেছেন সংখ্যালঘু ভোট জোগাড়ের তাগিদে। সামাজিক  এবং রাজনৈতিক পরিচিতি কম থাকার কারণে এবং স্থানীয় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতে কৃষ্ণনগরের সংসদ  মহুয়া মৈত্র বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছিলেন শান্তিপুরে। তবে শহরের বেশ কিছু প্রাক্তন কাউন্সিলর এবং গ্রামাঞ্চলের পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কারণে হয়তো এ ধরণের জনপ্রতিনিধির উপর নির্ভর না করে সরকারি প্রকল্প এবং মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে ভোট দেওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। প্রায় সকল জেলা নেতৃত্ব প্রচারে আসলেও সমন্বয়ের অভাব লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে অজয় দেব পরে শান্তিপুরে ডানপন্থী রাজনৈতিক অভিভাবক শংকর সিংয়ের অনুপস্থিতি চিন্তা ধরিয়েছে তৃণমূলের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের।

সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে কথা বলে বোঝা গেছে সাংসদের অনুপস্থিতি স্থানীয় বেশকিছু নেতৃত্বর তৃণমূলে যোগদান দুর্বল বিজেপি এবং ক্রমশ সবল হয়ে ওঠা সিপিআইএমের ভোট বিভাজনে তৃণমূল প্রার্থীর পাল্লা ভারী হতে চলেছে। ২৪ টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট শহরে সিপিআইএমের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা হলেও ছটি গ্রাম পঞ্চায়েতে লোরাই হতে চলেছে বিজেপির সাথে। ফলে ২, ৫৪ , ৮৯৩ জন ভোটারের রায় প্রকাশিত হতে চলেছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং সমাজের সর্বস্তরে ১০০ জনের সাথে কথা বলে সম্ভাব্য জয়ী হিসেবে অনুমান করা হয়েছে তৃণমূলের ব্রজকিশোর গোস্বামী পেতে পারেন ১ লক্ষ ৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ ১৫ হাজার ভোট। দ্বিতীয় স্থান হিসেবে বিজেপি পেতে পারে ৮০ থেকে ৯০ হাজার ভোট। সিপিআইএম এর সৌমেন মাহাতো পেতে পারেন ৪০ থেকে ৫০ হাজার ভোট। কংগ্রেসের ভোট পাঁচ হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। তবে জয়ের ব্যবধান ১০ থেকে ১৫ হাজারের বেশি হবে না বলেই বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী অনুমান করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন ইস্যু এবং আবেগ অনেক সময় বদলে দিতে পারে অংকের হিসাব। তাই সঠিক তথ্য পেতে অপেক্ষা করতে হবে কাল সকাল পর্যন্ত।

About Burdwan Today

Check Also

কার্তিক লড়াইকে ঘিরে জমজমাট কাটোয়া

রাহুল রায়, কাটোয়াঃ পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের সকলের কাছে সব থেকে বড় পুজো হল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *