অরুণাভ দত্ত, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ থানার গোপালগঞ্জে ধাদলপাড়া (শিববাড়ী) গ্রামে বিরাজিতা দেবী মা বিদ্ধেশ্বরী হলো সতীমাতার ৫১তম পীঠস্থানের মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গোপালগঞ্জে ধাদলপাড়া (শিববাড়ী) গ্রাম সতীমাতার ৫১তম পীঠস্থানের মধ্যে অন্যতম, বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লিখিত আত্রেয়ী নদীর পূর্বাপাড়ে অবস্থিত শ্রী শ্রী দেবী বিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের এবং বাবা ভোলানাথের ভৈরব রূপে শ্রী শ্রী বাবা রামেশ্বর ও শ্রী শ্রী বাবা বাণেশ্বরের মন্দির, এই স্থানটি বাণেশ্বর ধাম নামে ভক্তদের কাছে বিশেষ পরিচিত। শ্রী শ্রী দেবী বিদ্ধেশ্বরী ও শ্রী শ্রী বাবা রামেশ্বরের মন্দিরের পাশেই পঞ্চমুন্ডির আসন ও প্রাচীন শ্মশান আছে। ভক্তদের কাছ থেকে শোনা যায় এখানে সতীর বাঁ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল পতিত হয়েছিল। গোপালগঞ্জে ধাদলপাড়া (শিববাড়ী) গ্রামে একটি বহুপ্রাচীন গাছের গর্ভে শ্রী শ্রী মাতা বিদ্ধেশ্বরীর বেদী, প্রাচীন নিদর্শন গুলির মধ্যে অন্যতম হলো শ্রী শ্রী বাবা রামেশ্বর মন্দিরের চূড়া (যার উপর ছোট্ট মন্দির নির্মিত হয়েছে)। বহুকাল ধরে দেবী এখানে বিদ্ধেশ্বরী রূপে বিরাজিতা আর ভৈরব হলেন রামেশ্বর। স্থানীয় বাসীন্দাদের কাছে মা বিদ্ধেশ্বরী নামেই পরিচিতা। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ থানায় মন্দিরটি অবস্থিত। শ্রী শ্রী দেবী বিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দিরকে কেন্দ্র করে ভক্তদের কাছ থেকে বহু জনশ্রুতি শোনা যায়।
শ্রী শ্রী বাবা রামেশ্বর ও শ্রী শ্রী মাতা বিদ্ধেশ্বরী ও শ্রী শ্রী বাণেশ্বর ধাম ট্রাস্ট কমিটির সদস্যরা ২০২২ সালের ১৪ই জানুয়ারী শ্রীশ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির সংস্কারের কাজ শুরু করলে প্রথমে শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মায়ের মন্দিরের দরজার উপরের অংশ বেরিয়ে আসে, শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দিরের দরজা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। মাটির নিচে শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির সংস্কার করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে দরজার উপরের লীনটন এবং বহু প্রাচীন নিদর্শন, প্রাচীন নিদর্শনগুলির মধ্যে ছিল শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার মালা ও শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দিরের ভেতরের প্রাচীন নিদর্শন, এর দুইদিন পরে ১৬ জানুয়ারি শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দিরের সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় একটি বিষধর সাপ মায়ের স্থান পাহারা দিচ্ছে, ঐদিনই শ্রীশ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দিরের গর্ভগৃহ সংস্কারের কাজ শুরু করার মুহূর্তে বিভিন্ন সুড়ঙ্গ পথ বেরিয়ে আসে। এর পরের দিনই ১৭ জানুয়ারী শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দিরে মায়ের পাহারাদার ঐ বিষধর সাপটি বিদ্ধেশ্বরী মাতার ভক্তদের দায়িত্ব দিয়ে মায়ের স্থান ছেড়ে চলে যায়। ৩০ জানুয়ারি শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির সংস্কার কাজ শুরু করার মুহূর্তে শ্রী শ্রী রামেশ্বর বাবার গলার মালা বেরিয়ে আসে। ১ ফেব্রুয়ারী শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির সংস্কারের কাজের পাশাপাশি শ্রী শ্রী রামেশ্বর ও বিদ্ধেশ্বরী পুজোতে মহাযজ্ঞের প্লাটফর্ম নির্মাণ শুরু হয়, পরের দিন ২ ফেব্রুয়ারী শ্রীশ্রী রামেশ্বর বাবাকে ধর্মীয় নিয়ম রীতি মেনে স্নান করানো হয়। ৫ ফেব্রুয়ারী প্রাচীনকালের শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার শিলার চারদিকের পাশাপাশি শিলার নিচের অংশ (তালু) ও শিলার সামনের অংশ পরিস্কার করার পরে চোখ মুখ, নখ ও তালু বেরিয়ে আসার পর শিলার পিছনের অংশ (যেখানে ভগবান বিষ্ণু চক্র দিয়ে কেটেছিল) এবং শিলার চার কোনের অংশ বেরিয়ে আসে। ঠিক পুজোর ১৪ দিন আগে চাঁদগঞ্জের নিষ্ঠাবান পুরোহিত স্বপন চক্রবর্তী স্বপ্নে পেলেন শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার স্বরূপ এবং বীজমন্ত্র এবং তিনি নিজের হাতে শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতাকে প্রস্তুত করলেন। ঠিক পুজোর ২১ দিন আগে কামাক্ষা থেকে একজন সাধক এসে শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতার পুজো কিভাবে হবে তার কিছু বিধান এবং পঞ্চমুন্ডির আসন শুদ্ধির পাশাপাশি পুজোর আরও কিছু বিষয় সম্পর্কে বলে দিয়ে যান। প্রধান পুরোহিত স্বপন চক্রবর্তী, সঙ্গে যাদবপুরের এক মহিলা এবং ওনার স্বামী শ্রী শ্রী মাতা বিদ্ধেশ্বরীর প্রথম পুজোর স্বপ্নাদেশ পান। গতবছর ২০২২ সালের মাঘী পূর্ণিমায় শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরী মাতা ও শ্রী শ্রী বাবা রামেশ্বরের পুজোর সাথে সাথে ৭২ ঘন্টা ব্যাপী যজ্ঞানুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী শোভনদের চট্টোপাধ্যায় শ্রী শ্রী বাবা রামেশ্বর ও শ্রী শ্রী বিদ্ধেশ্বরীর পুনরায় স্থাপন ও পুজো উদ্ঘাটন করেন, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ভূমিপুত্র তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অন্যান্য বিধায়কদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পুজোতে আসেন।
দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে ও কার্ত্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজাতে বিদ্ধেশ্বরী মাতা ও বাবা রামেশ্বরের বিশেষ পূজা হয়। স্থানীয় মহিলারা বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে মঙ্গলচন্ডী ও বিপদতারিনী পূজাও করে থাকেন। এছাড়াও প্রতিদিন দেবীর নিত্যপূজা হয়।
গতবছরের মতো এবছরও মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে ৪ ফেব্রুয়ারী শনিবার থেকে পাঁচদিনব্যাপী পুজো , মহাযজ্ঞানুষ্ঠান ও মেলা হবে।
যাতায়াত : কলকাতা থেকে ট্রেনে করে বালুরঘাট স্টেশন। তারপর বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে এক ঘন্টার পথ গোপালগঞ্জ, গোপালগঞ্জ থেকে টোটোতে করে ধাদলপাড়া (শিববাড়ী) গ্রামেই শ্রী শ্রী দেবী বিদ্ধেশ্বরী ও শ্রী শ্রী বাবা রামেশ্বরের মন্দির।
Social