Breaking News

ডিভিসি জল ছাড়লেই বন্যা! কেন

টুডে নিউজ সার্ভিসঃ একনাগাড়ে কয়েক দিনের বৃষ্টি আর তারপরই ডিভিসির জল ছাড়ার জেরে ঠিক পুজোর আগেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, হুগলির খানাকুল, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর প্রভৃতি এলাকায়। উল্লেখ্য, নিম্নচাপ থেকে পশ্চিমবঙ্গের দামোদর উপত্যকায় ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর ভারী বৃষ্টি হয়। তার পরে ঝাড়খণ্ডে ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর প্রবল বৃষ্টি হয়। ১৭ তারিখ থেকে বৃষ্টি কমে গেলেও দক্ষিণবঙ্গের দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী নদী দিয়ে জল বিপদসীমার উপর বইছিল। দামোদরের সঙ্গে যুক্ত শীলাবতী, কংসাবতী, দ্বারকেশ্বর নদীতেও জল ভর্তি ছিল। এই পরিস্থিতিতে ডিভিসির পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়েছে সাড়ে তিন লক্ষাধিক কিউসেক। ১৯ সেপ্টেম্বর সকালেও ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। রাজ্যে বন্যাপরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে দায়ী করেছেন, বন্যা পরিস্থিতি দেখতে হুগলির পুড়শুড়ায় গিয়ে তিনি ফের ‘ম্যান মেড বন্যা’র তত্ত্ব খাড়া করেন এবং অভিযোগ করেন, রাজ্যকে কিছু না জানিয়েই ডিভিসি জল ছেড়েছে। এরপরও পাঁশকুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে সুর সপ্তমে তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ডিভিসির সঙ্গে সব সম্পর্ক কাট আপ করে দেব। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে না জানিয়ে জল ছাড়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ কিন্তু ঠিক নয়। ডিভিসিতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি রয়েছেন। তাঁর মাধ্যমেই রাজ্য সরকারের কাছে খবর পৌঁছে তবেই বাঁধ থেকে জল ছাড়া হয়।
কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক থেকেও জানানো হয়েছে, জল ছাড়ার আগে নিয়ম মেনে সমস্ত সতর্কতা পাঠানো হয়েছিল রাজ্যকে। তাছাড়া বাঁধের সুরক্ষায় বেশি বৃষ্টি হলে জল ছাড়তেই হবে। তাছাড়া মৌসম ভবন আগেই জানিয়েছিল ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গ ও লাগোয়া ছোটনাগপুরের মালভূমিতে ভারী বৃষ্টি হবে। এছাড়া সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তনের ধরণ সম্পর্কেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানানো হয়। তাছাড়া বৃষ্টি হলে বাঁধ রক্ষা করতে গেলে তো জল ছাড়তে হবেই। তবে তেনুঘাট জলাধার থেকে যে ৮৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে তার সঙ্গে ডিভিসির কোনও যোগ নেই। ওই জলাধার সম্পূর্ণতই ঝাড়খণ্ড সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। জলাধারটিকে বহুবার ডিভিসির অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ঝাড়খণ্ড সরকারকে অনুরোধ করা হলেও তারা তা করেনি।

একথা ঠিক যে ডিভিসির বাঁধগুলি থেকে কী পরিমাণ জল ছাড়া হবে তা ঠিক করে দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেশন কমিটি। তেনুঘাটের উপর এই কমিটির কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ঝাড়খণ্ড থেকে প্রচুর পরিমাণে জল ছাড়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোচ্চার হন, তিনবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে কথাও বলেন কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির কোনও ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার থেকে ডিভিসি যত জল ছেড়েছে তার বেশিরভাগটাই পাঞ্চেত বাঁধ থেকে। তার আগে সোমবার পর্যন্ত মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়া হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও ডিভিসি যে ৬০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ে, তার মধ্যে ৫০ হাজার কিউসেক পাঞ্চেতের, বরাকর নদীর উপর মাইথন থেকে ছাড়া হয় ১০ হাজার কিউসেক। পাঞ্চেত বাঁধ থেকে দামোদর নদের যে জল ছাড়া হয়, যা আসে তেনুঘাট বাঁধ হয়ে।


এও জানা যায় তেনুঘাটের জলাধারে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। সেই কারণে বেশি জল এলেই সেখান থেকে জল ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই জল এসে পৌঁছয় পাঞ্চেতে। ডিভিসি সূত্রে জানা যায়, তেনুঘাটের পর্যাপ্ত জল ধরে রাখার ক্ষমতা থাকলে পাঞ্চেতের উপর জলের চাপ কমত, এবং জল ছাড়ার পরিমাণও। আগেও অতিবৃষ্টির কারণে তেনুঘাটের জন্য মাইথনের তুলনায় পাঞ্চেত থেকে বেশি জল ছাড়তে হয়েছে। আর ডিভিসিকে যে বারবার জল ছাড়তে হচ্ছে তার কারণ,  ডিভিসির বাঁধগুলিতে পলি জমার ফলে জলাধারগুলির জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। যে কারণে পলি তুলে জলাধার সংস্কারের কথা বলা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন জানিয়ে দেয়, কারিগরি ও আর্থিক কারণে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করা এখনই সম্ভব নয়। কারণ, শুধুমাত্র মাইথন ও পাঞ্চেতের জলাধার থেকে পলি তুলতে ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।
উল্লেখ্য, ডিভিসির চারটি বাঁধ মাইথন, পাঞ্চেত, তিলাইয়া ও কোনার—এর জলধারণ ক্ষমতা ১৯৫০ এর দশক থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ২৩ থেকে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তাছাড়া শুরুর পরিকল্পনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার যদি ডিভিসির আওতায় সাতটি বাঁধই নির্মাণ করত, তাহলে ৩৫৯৬ মিলিয়ন কিউবিক মিটার (এমসিএম) জল ধরে রাখা সম্ভব হত। কিন্ত চারটি বাঁধ নির্মিত হওয়ায় মোট জলধারণ ক্ষমতা কমে দাঁড়ায় ১৮৬৩ এমসিএম। তবে, জলাধার তৈরির জন্য পরিকল্পনামতো জমি না পাওয়ার কারণেও জলধারণ ক্ষমতা বাস্তবে আরও কমে ১২৯১ এমসিএম হয়। প্রকল্প নির্মানের আগে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, ডিভিসির বাঁধগুলি কিন্তু তার মাত্র ৩৬ শতাংশ জলধারণ করতে পারে। একই সঙ্গে বলার কথা, শুরুতে কিন্তু ডিভিসি প্রকল্পে মোট সাতটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সাতটির মধ্যে কার্যকর হয় চারটি। পরবর্তীতে ১৯৮০-র দশকে অখণ্ড বিহার সরকারের উদ্যোগে মূল পরিকল্পনার অন্তর্গত একটি বাঁধ দামোদর নদীর উপর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিহার সরকারের কাছে প্রকল্পটির জন্য বন্যানিয়ন্ত্রণের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বোকারোসহ বিভিন্ন শিল্পশহরে জল সরবরাহ এবং সেচের উন্নয়ন। তাই বেশি পরিমাণে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা তেনুঘাটে করা হয়নি।

About Prabir Mondal

Check Also

শস্য গোলায় ডানার হানা! ক্ষতির আশঙ্কা সুগন্ধি ধানে

টুডে নিউজ সার্ভিস, বর্ধমানঃ ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই দানার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *