টুডে নিউজ সার্ভিসঃ নদীয়ার কালিগঞ্জ বিধানসভার আসন্ন উপ-নির্বাচনে ভোটার তালিকায় সংযোজন বিয়োজনের পাশাপাশি বাড়ল বুথের সংখ্যা, বাড়ল ভোটারও। মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে আয়োজিত সর্বদল বৈঠকে এই তথ্যই তুলে ধরলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। একইসঙ্গে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন কালিগঞ্জ বিধানসভার ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলবে আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ৮ এপ্রিল থেকে আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই সংশোধনের কাজে যুক্ত বিএলও বা বুথ লেভেল অফিসারদের ছুটি দেওয়া যাবে না। এই সময়কালের মধ্যে দুটি শনিবার এবং দুটি রবিবার পড়ছে। সেই দুটি শনিবার এবং দুটি রবিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বিএলওদের হাজির থাকতে হবে এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করতে হবে যা সম্পূর্ণ বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছে কমিশন।
সর্বদল বৈঠকে স্বাভাবিকভাবেই ভূতুড়ে ভোটার বা ভুয়ো ভোটার ইস্যু নিয়ে সরব হন রাজনৈতিক দলগুলি। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নতুন করে ভোটার তালিকার সংশোধন করা হচ্ছে। সেই তালিকার খসড়া রাজনৈতিক দলগুলিকে তুলে দিয়ে সিইও জানান গত তিন মাসে কালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় ৩২৮ জন ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৬০ জন মৃত ভোটার এবং ১৭ জন ডুপ্লিকেট নাম্বারে নথিভূক্ত হওয়ায় তালিকা থেকে বাদ গিয়েছেন। পাশাপাশি নতুন জায়গা থেকে স্থানান্তর হয়ে কালীগঞ্জে আসা বা নতুনভাবে ভোটার হওয়ার সুবাদে ৩১২ জনের নাম সংযোজিত হয়েছে কালীগঞ্জের ভোটার তালিকায়। সংশোধিত খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী কালীগঞ্জের ভোটার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭৮। শুধু ভোটার তালিকায় সংযোজন বিয়োজন নয়, কালীগঞ্জ বিধানসভার ক্ষেত্রে বেড়েছে বুথের সংখ্যাও। গত বিধানসভা নির্বাচনে কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে ২৬১ টি বুথ ছিল। এবার কমিশনের নয়া নিয়ম অনুযায়ী আরও ৪৮ টি নতুন বুথ যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ, আসন্ন কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে মোট বুথের সংখ্যা হবে ৩০৯। কমিশন জানিয়েছে এবার থেকে গোটা দেশে যে কোনো বুথে ভোটার ১২০০ বেশি হবে না। করোনা পরবর্তী সময়ে যা ছিল পনেরোশো ভোটার যার ফলে তৈরী হয়েছিল অক্সিলিয়ারি বুথ। তখন নিয়ম হয়েছিল মূল বুথের সঙ্গে থাকবে এই অক্সিলিয়ারি বুথ। কিন্তু, এবার থেকে এই অক্সিলিয়ারি বুথ উঠে গেল গোটা দেশে। যেহেতু বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে ভোটের কাজে যুক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যাও। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের জন্য কত বাহিনী লাগতে পারে তার হিসেব-নিকেশ চেয়ে পাঠানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর জানিয়েছে, সবকিছু বিচার বিবেচনা করলে কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের জন্য প্রায় ২০কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হতে পারে। এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের মধ্যস্থতাকারী নোডাল অফিসার আনান্দ কুমার ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রাজনৈতিক দলগুলোকে জানান, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে কালীগঞ্জ বিধানসভায় উপনির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে আগামী মে মাসের মধ্যে কালীগঞ্জ বিধানসভায় উপনির্বাচন হতে পারে। ইতিমধ্যেই এই কেন্দ্রে ইভিএমের ফার্স্ট লেভেল চেকিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী এই কাজ শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। তাই কমিশনের এই কর্তা জানিয়েছেন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ৫ মে, সম্ভবত ১৫ মে’র মধ্যে উপ-নির্বাচনের নির্ঘন্ট প্রকাশ করা হবে কালিগঞ্জ বিধানসভা উপ-নির্বাচনের।
প্রসঙ্গত, ভোটার তালিকায় ভূতুড়ে ভোটার বা ডুপ্লিকেট এপিক কার্ড ইস্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ, বিহারসহ ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে নদীয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভাসহ দেশের ৮ বিধানসভার উপনির্বাচন একপ্রকার অ্যাসিড টেস্ট হতে চলেছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। সেই কারণেই তড়িঘড়ি মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে কালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচন ও সংশোধিত ভোটার তালিকার খসরা নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
কমিশন সূত্রে খবর, অন্যান্য সাধারণ নির্বাচনের মতোই এই উপ-নির্বাচন করতে এখন থেকেই তৎপর কমিশন। ভুয়ো ভোটার কার্ড নিয়ে তৈরী হওয়া অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের পর এখন দেখার নদীয়া জেলার কালিগঞ্জ বিধানসভার উপ-নির্বাচনকে কতটা সুষ্ঠু অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করিয়ে নিজের গড়িমাকে ধরে কতটা সক্ষম হয় নির্বাচন কমিশন।