Breaking News

ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে উত্তেজনা দুর্গাপুর এনআইটিতে

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, দুর্গাপুরঃ বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না দুর্গাপুরের ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এনআইটি)-কে। একাধিকবার এই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন কারণে তার বিরুদ্ধে পড়ুয়ারা ক্ষোভ উগড়ে দিলেও কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি।

শোনা যায় কখনো তিনি রিসার্চ স্কলারদের প্রাপ্য আটকে অথবা কমিয়ে দিয়েছেন, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিয়েছেন, একটি অ্যাম্বুলেন্স নাকি বিক্রি করে দিয়েছেন, মেডিক্যাল ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছেন, অধিকাংশ সেমেস্টারে পড়ুয়াদের ব্যাকলগ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে পড়ুয়ারা চাপে পড়ে যাচ্ছে। ডিরেক্টরের স্বেচ্ছাচারি সিদ্ধান্তের জন্য অনেক পড়ুয়া ডিপ্রেশনে ভুগছে।

এবার এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার উপর পড়ুয়াদের জমা হয়ে থাকা ক্ষোভ ঝরে পড়ে। মৃত ছাত্রের নাম অর্পণ ঘোষ (২০)। তার বাড়ি হুগলি জেলায়। সে কলেজের মেকানিকাল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল।

পড়ুয়াদের সূত্রে জানা যাচ্ছে গত ২৮ শে এপ্রিল দ্বিতীয় বর্ষের ব্যাকলগের একটি পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরুর আগে অর্পণ একবার হেনস্থার শিকার হয়। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা আগে খাতা জমা দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সে বেরিয়ে হস্টেলে ফিরে আসে। পরে তার রুমমেটরা তাকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলতে দেখে।

সহপাঠীরা দ্রুত তার দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও কলেজ কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার জন্য সেটা সম্ভব হয়নি। বহু কষ্টে দ্বিতীয় অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার যোগাড় করার পর তার পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া নিয়ে আরও একদফা নাটক শুরু হয়। সবমিলিয়ে বেশ কিছুটা মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত তাকে যখন গান্ধীমোড় সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। তার সহপাঠীদের দাবি উদ্ধার করার সময় তার শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিল। সময়মতো চিকিৎসা হলে সে বেঁচে যেতে পারত।

অর্পণের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই পড়ুয়ারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। কলেজের ডিরেক্টর অরবিন্দ চৌবেকে কলেজের অডিটোরিয়ামের মধ্যে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তাকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়া হয়। এমনকি তাকে শারীরিক হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ। পরে কার্যত তাকে টেনে হিঁচড়ে অডিটোরিয়াম থেকে বের করে কলেজের মূল গেটে আর একদফা হেনস্থা করা হয়। তার উদ্দেশ্যে ‘চোর’ স্লোগান দেওয়া হয় ও তার ইস্তফা দাবি করা হয়। পরে গেটের নিরাপত্তাকর্মীদের রুমে ঢুকিয়ে তাকে ঘেরাও করে রাখা হয়। ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যাবেলায় অর্পণের সহপাঠীরা মোমবাতি নিয়ে মিছিল করে। পড়ুয়াদের দাবি ডিরেক্টর ইস্তফা না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস বয়কট করা হবে।

ডিরেক্টর অরবিন্দ চৌবে বলেন, “আমি ইস্তফা দিয়েছি। কিন্তু সেটা গ্রহন হয়েছে কিনা জানা নেই।” তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যাচ্ছে তিনি নাকি বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এই খবরে পড়ুয়ারা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

অর্পণের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বাবা কলেজ ক্যাম্পাসে আসেন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের দিকে নাকি অভিযোগের আঙুল তোলেন।

এদিকে দুর্গাপুরের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আত্মহত্যার ঘটনায় একরাশ আতঙ্ক গ্রাস করতে শুরু করেছে অভিভাবকদের। গুসকরার জনৈক অভিভাবকের বক্তব্য – আমার সন্তান দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি কলেজে পড়াশোনা করে। আতঙ্ক হয় শেষপর্যন্ত ডিগ্রির পরিবর্তে তার মৃতদেহ ফিরবে নাতো?

About Prabir Mondal

Check Also

কার্তিক লড়াইকে ঘিরে জমজমাট কাটোয়া

রাহুল রায়, কাটোয়াঃ পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের সকলের কাছে সব থেকে বড় পুজো হল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *