পল মৈত্র, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডি ব্লকের মহিষবাথান এলাকার মুখাশিল্প রাজ্য সহ সমগ্র দেশ জুড়ে জনপ্রিয়। দিন দিন জনপ্রিয় মুখা শিল্পের চাহিদা বাড়ছে। জেলার এই কুশমন্ডি ব্লকের দেউল গ্রাম পঞ্চায়েতে অবস্থিত মহিষবাথান এলাকায়। বিগত কয়েক বছরে এই মুখা শিল্পের ওপর ভিত্তি করেই জীবন জীবিকা গড়ে উঠেছে নতুন করে বহু মানুষের। জানা গিয়েছে, অতীত কালে বছরের বিশেষ সময়ে ধান কাটার জন্য রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষজন বিশেষ পুজো আয়োজন করতেন। সেই সময়ই বিভিন্ন দেবদেবীর মুখা পরিধান করে গম্ভীরা নৃত্য করা হত। প্রাচীন এই রীতির কথা মাথায় রেখে মহিষবাথান এলাকার মানুষজন বংশ পরম্পরায় বহু যুগ ধরে মুখ্য তৈরি করে আসছেন। বর্তমানে আধুনিক যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে মুখার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য এবং রাজ্য ছাড়িয়ে বিভিন্ন দেশে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডির মহিষবাথানের মুখা পৌঁছে গেছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মহিষবাথান গ্রামীণ হস্ত শিল্প কেন্দ্রে এলাকার মানুষজন মুখা তৈরির প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে সারা বছর তৈরি করা মুখা বিক্রির সব রকম সাহায্য পেয়ে থাকেন।
এই বিষয়ে, মহিষবাথান এলাকার মুখা শিল্পী সাগুলাল সরকার বলেন, “মুখা শিল্পের উপর ভিত্তি করেই বহু বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করছি। রাজ্য সরকারের আয়োজিত বিভিন্ন মেলা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন বাজারে এমনকি পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশেও আমাদের তৈরি মুখা পৌঁছে যায়। আর সেকারণে দিন দিন মুখা শিল্পের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।”
উল্লেখ্য বর্তমান রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মুখা শিল্পের উন্নয়নে প্রথম থেকেই বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। মুখ্য শিল্পীদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে শিল্প কেন্দ্রের উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে কুশমণ্ডি মহিষবাথান গ্রামীণ হস্তশিল্প কেন্দ্রর ভবনটি ইতিমধ্যেই দোতালা করা হয়েছে। কুশমণ্ডি মহিষবাথান গ্রামীণ হস্তশিল্পের সম্পাদক পরেশ চন্দ্র সরকারের বলেন, “বর্তমানে মুখ শিল্পের ওপর ভিত্তি করেই শিল্পীদের জীবনযাত্রার মান পাল্টে গেছে। আমরা আশা করছি আগামীতে আরও উন্নতি হবে শিল্পীদের। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণার প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক ২টি নামি সংস্থার সাথে চুক্তি হয়েছে। জনপ্রিয় এই মুখ্য শিল্প সামগ্রীক ভাবে আরও ব্যাপক পরিসরে বিদেশে রপ্তানি হবে খুব শীঘ্রই বলে আমরা আশাবাদী।” একটা সময় প্রত্যন্ত এই এলাকার মানুষজনের দুবেলা খাদ্য সংস্থান করতেই হিমশিম অবস্থা হত। তবে রাজ্য সরকার পাশে থাকায় মুখাশিল্পের ওপর ভিত্তি করেই জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে বিগত কয়েক বছরে। সর্বোপরি বলাবাহুল্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমন্ডির মহিষবাথানে মুখা শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষজনের জীবন পাল্টাচ্ছে।
Social