অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়াঃ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ২৬ আগষ্ট দিনটি একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৯১৪ সালের ২৬ আগষ্ট রডা কোম্পানির অস্ত্র লুঠ হয়।এ ধরনের অস্ত্র লুন্ঠনের ক্ষেত্রে এটি প্রথম প্রয়াস ও প্রায় সফল প্রয়াস। রডা কোম্পানির অস্ত্র লুন্ঠনের পরিকল্পনা ও লুন্ঠনের মূল নায়ক ছিলেন হাওড়া জেলার আমতা থানার রসপুর গ্ৰামের শ্রীশচন্দ্র মিত্র ওরফে হাবু মিত্র।
পরিতাপের বিষয় এই দিনটির ইতিহাস, হাবু মিত্র-র আত্নত্যাগ সরকারি ভাবে যেমন উপেক্ষিত তেমনি হাওড়া জেলা প্রশাসন, স্থানীয় আমতা প্রশাসন থেকেও উপেক্ষিত থেকে গেছে বলে রসপুর গ্ৰামের বাসিন্দাদের অভিযোগ।
রসপুর গ্ৰামে শুধুমাত্র এক স্মৃতি ফলক আর আগাছা আবৃত জম্ম ভিটা টুকু ছাড়া শ্রীশচন্দ্র মিত্র-র বিশেষ কিছু স্মৃতি চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।
জানা যায়, শ্রীশচন্দ্র মিত্রের জন্ম ১৮৯০ মতান্তরে ১৮৮৭ সালে রসপুর গ্ৰামে। পিতার নাম শরৎচন্দ্র মিত্র, মাতা সরোজিনী দেবী। শরৎচন্দ্রের দু’টি ছেলে ও তিনটি মেয়ে। সবার বড় ছিলেন শ্রীশচন্দ্র (হাবু)। খুবই অল্প বয়সেই কলকাতায় তাঁর বাবা-মার সঙ্গে চলে আসেন, থাকতেন ১/১ নং অভয় হালদার লেনে। ছোটবেলা থেকেই শ্রীশচন্দ্র (হাবু) খুবই দুরন্ত ছিল। তাহার একটি বিশেষ গুন ছিল, বয়োজ্যেষ্ঠদের, সকল প্রতিবেশীকে যথাযোগ্য সম্মান করতেন। বাঙালির শারীরিক বল সঞ্চয় হউক ইহা সর্বদা চেষ্টা করতেন। দরিদ্রনারায়ন সেবা ও স্বাধীনতা ছিল তাহার কাম্য।’
আত্নোন্নতি সমিতির এক আখড়া ছিল বহুবাজার মদন বড়াল লেনে, বিপ্লবী ৺অনুকূল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সেই আখড়ার গুরুদেব। বিপ্লবী বীর শ্রী বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন ‘আত্নোন্নতি সমিতি’র নেতা।’ হাবু’র দুরন্তপনা ও তাঁর মেজাজ এবং চলাফেরা দেখে পাড়ার বাসিন্দারা তাঁকে ‘হাবুলাট’ বলতেন। তাঁর চালচলন ছিল লাটসাহেবদের মতই সত্য।তবে মানসিক দুর্বলতা বা দাসত্বের কাছে তিনি মাথা নোয়ান নি কোনদিন। জীবনে করবার মত একটা কিছু করতেই হবে, এই ভাবটাই বোধ হয় তাঁর মনের কোণে লুকিয়ে ছিল ঘুমন্ত অবস্থায়। চূড়ান্ত দুষ্টপনার জন্য বাইরে সেটা প্রকাশ পেত না।
এই ভাবে চলতে চলতে কিছু দিনের মধ্যেই নজরে পড়ে যান বিপ্লবী মহানায়ক বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায়ের। শুরু হয় বিপ্লবের দীক্ষামন্ত্র। লাঠি – ছোরা, মুষ্ঠিযুদ্ধ, চাল-চলন অভ্যাস প্রভৃতি ও চলত তাঁর, বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায়। আবার কাজ চালাবার মত লেখাপড়া শেখাবার ও ব্যবস্থা হয়েছিল বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় ও কালীদাস বসুর প্রচেষ্টায়।এক – দু’বছর ঐ ভাবে কাটাবার পর প্রথমে তাঁর জন্য একটি কাজের যোগার হয়ে যায় “জে.এফ.ম্যাডান.অ্যান্ড.কোম্পানি” -র অফিসে স্টোর কিপারের পদে। মাসিক বেতন ছিল ৪০ টাকা।অল্প দিনের মধ্যেই ” আর,বি,রডা,এ্যান্ড কোম্পানি-র অফিসে তাঁর আবার ও একটি কাজের যোগার হয়ে যায় বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায়ের এক বন্ধুর সহযোগিতায় ১৯১৩ সালের আগস্ট মাসে। এইবারে তাঁর বেতন হয় কোম্পানির নিয়মানুসারে মাসে ৩৫ টাকা। কোম্পানির কাছে আপন কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়ে এক – দু’মাসের মধ্যেই “জেটি ক্লিয়ারিং ক্লাকের পদে উন্নীত হন। ঐকান্তিক ও কর্মপটুতার জন্য শিঘ্রই তাঁর সাহেবদের নেক নজরে পড়তে অসুবিধা হয়নি। ১৯১৩ সালের আগস্ট মাস থেকে ১৯১৪ সালের ২৬ আগষ্টের আগে পর্যন্ত কমপক্ষে চল্লিশ বার কোম্পানির মাল খালাস করেছিলেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। আত্নোন্নত সমিতি সভ্যরা অনুভব করেছিলেন ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতবর্ষের পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচন করতে গেলে সশস্ত্র বিপ্লবের প্রয়োজন। সমিতির সকল কর্মীই ধর্মবুদ্ধি প্রণোদিত মনোভাবাপন্ন ছিলেন। অধিকাংশ সভ্য স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত ছিলেন। বিপ্লবী সমিতির সভ্য হওয়া শ্রীশচন্দ্র সংগঠনের কার্য্য বিস্তারে সর্বদা চেষ্টা করতেন। তিনি সকল শ্রেণীর যুবক দিগের মধ্যে স্বাধীনতার উদ্দিপনা জাগাইয়া রাখিতে মনযোগ দিতেন।
অরবিন্দ্র ও বারিন্দ্রের আলিপুর বোমার মামলার পর বড় রকমের বিপ্লবী দল পশ্চিমবাংলায় প্রকাশ পায় নি ১৯১৪ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ১৯১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় ও গর্ভনর জেনারেল লড হাজিঞ্জের উপরে বোমা নিক্ষেপের পর হইতে পুলিশের তৎপরতা, জুলুম,অত্যাচার পশ্চিমবাংলায় বিশেষ ভাবে প্রকাশ পায়।
কলকাতার রডা কোম্পানিতে শ্রীশচন্দ্র কে চাকুরী যোগাড় করিয়া দিয়া বিপ্লবী নেতাগণ খুব নিশ্চিন্তে ছিলেন।শ্রীশচন্দ্র অফিসে কাজে যাওয়ার সময় অধিকাংশ দিন নগেন্দ্রনাথ সঙ্গী হতেন। তিনি কাজ করতেন জেনারেল পোস্ট অফিসে (জি পি ও)। দু ‘জনই অফিসে যাওয়ার সময় প্রায় পরামর্শ করে বের হতেন। আবার মাঝে মধ্যে অজুহাত দেখিয়ে দু’জনে একসঙ্গে ছুটি নিয়ে দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়ি গিয়ে পঞ্চবাটির তলায় বসে দেশের দুরবস্থা নিয়ে আলোচনা করতেন। এই দু’জনই বিবেকানন্দের অন্ধ ভক্ত ছিলেন।
একদিন কাস্টমস হাউসে এক সাহেবের সঙ্গে শ্রীশচন্দ্রের মারামারি হয়। শ্রীশচন্দ্র সাহেবকে উত্তম মধ্যম প্রহার করেন। কিন্তু তাতেও তিনি শান্তি পান নি। বিপিন বিহারী বাবুর কাছে গিয়ে সাহেবকে একেবারে শেষ করে দেওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। শ্রীশচন্দ্রকে শান্ত থাকতে পরামর্শ দিয়ে বিপিন বাবু বলেন, “হাবু তুমি শান্ত থাকো। যুদ্ধের সেনাপতি খুব ধীরস্থির হয়ে সৈন্য পরিচালনা করে।মাথা ঠাণ্ডা রাখে। তোমার ও সেই মতো চলা উচিত। বিপ্লব আন্দোলনে অস্থির হয়ে কাজ নেই।কত রকমের বিদেশি শত্রুদের আক্রমণ সহ্য করে শক্তি সঞ্চয় করতে হয়।”
অতঃপর মোক্ষম কথাটি সেদিন বিপিন বাবু বলেছিলেন শ্রীশচন্দ্র কে? যদি ধৈর্য্য ধরো, তোমার ‘কীর্তি’ অক্ষয় হয়ে থাকবে। মানুষ মারা যাবে, কিন্তু তার কীর্তি জগতে বিচরণ করে। স্বাধীনতার জন্য তোমাদের বিপ্লবের কীর্তি ভারতে অক্ষয় হয়ে থাকবে ‘ । এই কথা শুনে শ্রীশচন্দ্র (হাবু) শান্ত হয়েছিলেন।
একবার কতগুলি অস্ত্রশস্ত্র সংগ্ৰহ করতে হবে বলে বিপিন বাবু বাছিয়া বাছিয়া কয়েক জন সভ্যকে নিযুক্ত করেন ও নিজে তাদের পরিচালনা করেন। অনেক কষ্ট একটা গাড়ি সংগ্ৰহ করে তাদের লালদিঘীর একধারে রাস্তার ওপর রেখে নিজে তার কাছে উপস্থিত থেকে অপেক্ষা করতে থাকেন। বেলা ১২ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত থেকে হতাশ হয়ে ফিরে আসার পর শ্রীশচন্দ্র দু’টি বাক্স ভর্তি গুলি (টোটা) কাঁধে করে বিপিন বাবুর বাড়িতে উপস্থিত হন। কোনো ভয় পাননি। এই সবে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না। যথা সময়ে ওই টোটা গুলি চন্দননগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।১৯১৪ – ১৯১৫ সালে বিপ্লব ঘোষণার সময় সেগুলি কাজে লাগানো হয়।
১৯১৪ সালের ২৬ আগষ্ট বাংলা তথা ভারতীয় বিপ্লবীদের একটি স্মরণীয় দিন। ১৯১৪ সালের জুলাই মাসে
‘আত্নন্নোতি সমিতি’র গোপন বৈঠকে হরিশ্চন্দ্র সিকদার, প্রভাস চন্দ্র দে, আশু রায়, হরিদাস দত্ত, গিরিন্দ্র নাথ বন্দোপাধ্যায়, অনুকূল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়, বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায়, কালিপদ বসু, নগেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র উপস্থিত ছিলেন। সভায় আলোচনা হয় ইংরেজদের শাসনের হাত থেকে ভারতবর্ষকে বাঁচাতে গেলে সশস্ত্র বিপ্লবের প্রয়োজন। তার জন্য দরকার অস্ত্রের। যেমন করেই হোক অস্ত্র সংগ্ৰহ করতেই হবে। কিন্তু সেটা কোনো ও ভাবেই সম্ভব নয় বলে বিপ্লবী রা মত প্রকাশ করেন। কয়েক জন বিপ্লবী হতাশ হয়ে সভা ত্যাগ পর্যন্ত করেন।
সভায় শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই রডা কোম্পানি বিলেত থেকে পিস্তল আমদানি করবে।ওই পিস্তল লুঠ করা হবে।
এরপর বিপ্লবীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকলেন। ২৫ আগষ্ট ১৯১৪ শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র অস্ত্র লুন্ঠনের জন্য শ্রীশ পালকে প্রস্তুত থাকতে বললেন। রাত্রে বিপ্লবীরা বসে এক কসলেন অস্ত্র লুন্ঠনের। শ্রীশ পাল, অনুকূল মুখোপাধ্যায়-কে একটি গরুর গাড়ির ব্যবস্থা করতে বললেন। ঠিক হল সেই গাড়ির গাড়োয়ান হবেন হরিদাস দত্ত। ঘটনা হল, এই পিস্তলের জন্য তিব্বত সরকার বিলেত থেকে এনে দেওয়ার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ করে।ভারত সরকার কলকাতার বিখ্যাত আর-বি-রডা কোম্পানিকে নির্দেশ দেয় ওই পিস্তল সরবরাহ করতে।
ঘটনার দিন ২৬ আগষ্ট ১৯১৪ বেলা আড়াইটে কিংবা তিনটে সরকারের অস্ত্র আইনের ইন্সপেক্টর পূর্ণচন্দ্র লাহিড়ী লালদিঘীর ভিতর তার অনুচরদের সঙ্গে গল্পে ব্যস্ত। এদিকে কাস্টমস হাউস থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এক-এক করে ছ’টি গরুর গাড়ি বোঝাই হল। সপ্তম গাড়ি যার চালক ছদ্মবেশী বিহারীবাসী হিন্দুস্তানী গাড়োয়ান ‘কুঞ্জ’ (হরিদাস দত্ত)। শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র তাঁর হাতে তুলে দিলেন বাক্স ভর্তি ৫০ টি মাইজার পিস্তল, ৫০টি অতিরিক্ত স্প্রিং এবং ৫০ টি পিস্তলের খাপ -যার সাহায্যে ঐ পিস্তল গুলিকে রাইফেলের মতো বড় করে ব্যবহার করা যায়, আর ৫০ রাউন্ড কার্তুজ। ব্যাপারটি পূর্ণচন্দ্র লাহিড়ী খেয়ালই করলেন না। কাস্টমস হাউস থেকে সাতটি গরুর গাড়ি ক্লাইভ স্ট্রিট থেকে লালদিঘীর (ডালহৌসি স্কোয়ার) দক্ষিণ দিকে গেলে’ ‘ভ্যানিসিটাট রো ‘ – র সামনে এসে উপস্থিত ‘ আত্নোন্নতি সমিতি’-র সদস্যদের কাছে সপ্তম গাড়িটি দিয়ে বাকি ছ’টি গাড়ি শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র রডা কোম্পানির গুদামে পৌঁছে দিতে গেলেন।শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র যে সপ্তম গাড়িটি আত্নন্নোতি সমিতির সদস্যদের কাছে ছেড়ে গিয়েছিলেন সেই গাড়িতে যাবতীয় অস্ত্র ছাড়াও ছিল একটি শাবল। ওই গাড়ির দু’পাশে পাহারা দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন শ্রীশ পাল ও খগেন দাস। গাড়ির গাড়োয়ান হরিদাস (ছদ্মবেশী বিহারীবাসী হিন্দুস্তানী গাড়োয়ান ‘কুঞ্জ’) দত্ত ছাড়া ও ওঁরা দু’জনই ছিলেন সশস্ত্র। প্রয়োজনে যুদ্ধ করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলেন। একটু পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন শ্রীশচন্দ্র।ওই লুঠের গাড়ি নিয়ে সকলে মিশন রো,প্রিন্সেপ স্ট্রিট থেকে মলঙ্গা লেনে হাজির হন। যেখানে গাড়িটি থামে সেটি ছিল অনুকূল বাবুর বাড়ির সামনের একটি লোহামাঠ।গাড়িটি পৌঁচ্ছায় সাড়ে চারটা নাগাদ।
এরপর সকলের কর্মতৎপরতা বেড়ে গেল। ভিন্ন – ভিন্ন গাড়িতে সেই লুঠের পিস্তল, কার্তুজ, আনুষঙ্গিক অস্ত্র-শস্ত স্থানান্তরিত হতে থাকে। বহুবাজারে জেলেপাড়ায় ভুজঙ্গ ভূষণ ধরের বাড়ি ছিল। সেখানে বাক্সগুলি ওঠানো হয়।হিদারাম ব্যানার্জী লেনের অনেকেই দেখে বাক্স গুলো গলির মধ্যে একটি বাড়িতেই গেল। বিপিন বাবু কে প্রতিবেশীরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন ও করেছিল। সেখান থেকে নতুন নতুন স্টিল ট্যাঙ্ক করে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে সেগুলো পাঠানো হয়। এই সব পরিচালনা করেন বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায়।শ্রীশচন্দ্র (হাবু) তারপর থেকে আর কোনো ও দিন অফিসে যাননি।
২৬ আগষ্ট থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত রডা কোম্পানির কেউই জানতেই পারলো না যে অস্ত্রশস্ত্র লুঠ হয়েছে।৩০ আগষ্ট রডা কোম্পানির অফিসার মাল মিলাতে গিয়ে দেখেন তিব্বত সরকারের দেওয়া অর্ডারের অস্ত্রশস্ত্র, কার্তুজ সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নেই। রডা কোম্পানি অস্ত্রশস্ত্র লুঠের খবর পুলিশকে দেয়। সেই সঙ্গে জানায় অফিসের কর্মচারী শ্রীশচন্দ্র ওরফে হাবু মিত্র ২৭ আগষ্ট থেকে অফিসে আসেনি। পুলিশ নিশ্চিত হয় যে অস্ত্রশস্ত্র লুঠ শ্রীশচন্দ্র (হাবু)ই করেছে। ৩০ আগষ্ট হইচই পড়ে গেল। মলঙ্গা লেন, দাস লেন, হালদার লেন, জেলেপাড়া, দুর্গাপিয়ুরী লেন (বিপিন বিহারী বাবু বাড়ি) এবং কলকাতার বিভিন্ন স্থানে খানা তল্লাশি চলে। বহু বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে লালবাজারে পাঠিয়ে দেয়।এর মধ্যে গিরীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় ও নগেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়কে ৪/৩ মলঙ্গা লেন, অনুকূল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে ৩৯ মলঙ্গা লেন, কালিদাস বসু সহ বহু জনকে হালদাস লেন থেকে গ্ৰেফতার করল।১৪ দাস লেন থেকে শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র আগেই সরে পড়েছিলেন।২২ থেকে ২৪ দিন পর হরিদাস দত্তকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ব্রিটিশ পুলিশ শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্রকে কলকাতায় তন্ন তন্ন করে খুঁজে না পেয়ে আমতার রসপুরে তাঁর বসত বাড়ি, আমতায় তাঁর মাতুলালয় নিয়োগী বাড়িতে ও হানা দেয়, তল্লাশি চালায়, কোনো ও কিছু না পেয়ে ভাঙচুর করে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
শ্রীশ পাল ঘটনার পর শ্রীশচন্দ্রকে নিয়ে গিয়েছিলেন রংপুর জেলার নাগেশ্বরী (বর্তমানে বাংলাদেশে) থানার অন্তর্গত ডাক্তার সুরেন্দ্রনাথ বর্ধনের বাড়ি। সুরেন্দ্রনাথ বর্ধন – হেমচন্দ্রের মুক্তি সংঘের আঞ্চলিক অধিনায়ক ছিলেন।সুরেন্দ্রবাবু পুলিশের সন্দেহভাজন হওয়ায় তাঁর আশ্রয়ে শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র নিরাপদ মনে না হওয়ায় তিনি শ্রীশচন্দ্রকে আসাম সীমান্তে তাঁর বিশেষ অনুগত ‘রাভা’ উপজাতিদের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেখানে তিনি এক বৃদ্ধা কাঠকুড়ানীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। উপজাতিদের সঙ্গে শ্রীশচন্দ্র (হাবু) তাদের মেষ চড়িয়ে প্রথমে ভালোই ছিলেন।তবে সুরেন্দ্রনাথ বর্ধন গ্ৰেফতার হওয়ার পর শ্রীশচন্দ্র (হাবু) র আর কোনো ও খবর পাওয়া যায় নি।শ্রীশচন্দ্র (হাবু) ফ্রন্টিয়ার পার হতে গিয়ে সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে হোক বা বন্য পশুদের আক্রমণেই হোক মৃত্যুবরণ করেছিলেন বলে অনেকে অভিমত পোষণ করেন। যাই হোক,তা ছিল শহীদের মৃত্যু। ডাঃ সুরেন্দ্রনাথ বর্ধন ২১/১১/৬৫ তারিখের পরে ভুপেন রক্ষিত রায়কে জানিয়েছেন যে রাভা যুবকের দায়িত্বে “হাবু” বাবু ছিলেন, সেই যুবক ও নিখোঁজ। অজ্ঞাত ফ্রন্টিয়ার পাড়ি দেওয়ার চেষ্টায় তাঁদের শেষ পরিণতি ঘটে বলে তাঁর ধারণা।
স্বাধীনতার পুজারী শ্রীশচন্দ্র (হাবু ) মিত্র দেশে বিপ্লবের জন্য অস্ত্র – শস্ত্র সংগ্ৰহ করেছিলেন। বাংলায় বিপ্লবী বিভিন্ন দলের মিলন ক্ষেত্র প্রস্তুত হল। ওই সময় বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় সকল দলকে আহ্বান করলেন। সেই বৈঠকে যতীন মুখোপাধ্যায় (বাঘাযতীন) , বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় বিপ্লবী দলের নেতা নির্বাচিত হলেন। তাঁরা সক্রিয় সশস্ত্র বিপ্লবের আন্দোলন ঘোষণা করলেন। বিপ্লবী দলের কাজ শুরু হল। কলকাতার গার্ডেনরিচে বার্ণ কোম্পানির মিল – এ ১৮ হাজার টাকা যাচ্ছিল,তা লুঠ হল। বেলেঘাটার চালের গুদামে ২০ হাজার টাকা লুঠ হয়। বিপ্লবী দল উত্তর কলকাতার হেদুয়ার মোড়ে সরকারী গুপ্ত বিভাগের পুলিশ কর্মচারী সুরেন বন্দোপাধ্যায়-কে গুলি করে হত্যা করে। পুলিশ ইন্সপেক্টর মধুসূদন ভট্টাচার্য্য কে মেডিক্যাল কলেজের সামনে পুলি লেনের কাছে গুলি করে মারে। যতীন্দ্র মুখোপাধ্যায় বালেশ্বরে গেলেন রডা কোম্পানির লুটের অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে জার্মানি থেকে প্ররিত জাহাজের অস্ত্র – শস্ত্র নামাতে। ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বরে বালেশ্বরে বুড়ি বালামের তীরে বাঘাযতীন ও তাঁর দুর্ধর্ষ সতীর্থবৃন্দ মাউজার পিস্তল নিয়ে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।১৯৩০ সালে ৮ ডিসেম্বর রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান করলেন বিনয় বসু, দীনেশ গুপ্ত,বাদল গুপ্ত।ওই অলিন্দ যুদ্ধে যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল সেটা ও ওই লুন্ঠিত হওয়া মাউজার পিস্তল। ১৯৩২ সালে ২৯ অক্টোবর বিম দাশগুপ্ত ক্লাইভ স্ট্রিটের গিলওর্স হাউসে ঢুকে ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ভিলিয়ার্সকে মাউজার পিস্তলের গুলি করেন। রডা অস্ত্র লুঠের একটি মাউজার পিস্তল ব্যবহার করতেন রাসবিহারী বসু। তিনি তখন জাপান যান তখন পিস্তলটি শচীন্দ্রনাথ সান্যালকে দেন।শচীন্দ্রনাথ সান্যাল স্বাধীনতা সংগ্ৰামী গিরিজা বাবুকে দিয়ে যান। রডা কোম্পানির অস্ত্র লুন্ঠনের পর অনুষ্ঠিত ৫৪ টি ডাকাতি, নরহত্যা ও তার চেষ্টায় মাউজার পিস্তল ব্যবহৃত হয়। সেই অস্ত্র লুঠের অন্যতম নায়ক শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্রের জন্য বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব পান নি। মানুষ জানেই না এত বড় একটি ঘটনার কৃতিত্ব আসলে কার।
পরিতাপ ও দুঃখের বিষয় সরকারি ভাবে, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক – শিক্ষিকা, ছাত্র – ছাত্রীদের কাছে শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র উপেক্ষিত ও অবহেলিত থেকে গেছেন।
স্বাধীনতা লাভের পর শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্রের পৈতৃক ভূমির উপর তাঁর স্মৃতিতে তদানীন্তন ইউনিয়ন বোর্ডের সহায়তায় গ্ৰামবাসীবৃন্দ একটি বেদী নির্মাণ করেন। এতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন তারাপদ প্রামাণিক। বর্তমানে সেই বেদীর কোনো ও অস্তিত্বই নেই।বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ , বাস্তুভিটা ও দখল হয়ে গেছে।
স্বাধীনতার পর স্বাধীনতা সংগ্ৰামীদের ইতিহাস লেখার সময় আমতা থানার সোমেশ্বর গ্ৰামের আর এক স্বাধীনতা সংগ্ৰামী ভোলানাথ মাল লক্ষ্য করলেন যে শ্রীশচন্দ্র মিত্র (হাবু)-র নাম লিখিত হলে ও তার জম্মস্থান বহুবাজার এবং ওখানকার ছেলে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি রসপুরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এখানকার ছেলে তা স্বীকৃতি দেবার জন্য ভোলানাথ মাল ৪/৪/১৯৪৮ সালে আত্নন্নোতি সমিতির নেতা বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় কে রসপুর গ্ৰামে নিয়ে আসেন এবং শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্রকে রসপুরের ছেলে বলে ঘোষনা করেন।সে সময় যে স্মৃতি রক্ষা কমিটি করেন তার সভাপতি ছিলেন ভোলানাথ মাল ও সম্পাদক নীরদ বরণ দে। পরবর্তী সময়ে ৪/৪/৫৬ তারিখে আরও এক বিপ্লবী যিনি চট্টগ্রাম বিপ্লবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মহেন্দ্র নাথ চৌধুরী এখানে আসেন এবং এ সম্বন্ধে এই তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেন। সে সময় সভার আহ্বায়ক ছিলেন পাঁচু গোপাল রায়।শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্রর বাড়ির কাছে যে স্মৃতি মঞ্চ তৈরি হয়েছিল সেই স্মৃতি মঞ্চের উদ্ধোধক ছিলেন বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায়।পরে ১৯৮৩ সালে রসপুর পিপলস লাইব্রেরীর সামনে শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র স্মৃতি মঞ্চের উদ্ধোধক ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্ৰামী দুঃখ হরণ ঠাকুর চক্রবর্তী।এটি ও তৈরী হয় সাধারণ মানুষের প্রচেষ্টায়। পিপলস লাইব্রেরী ও শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র স্মৃতি রক্ষা সমিতি এর রক্ষনাবেক্ষণ করে। ইউনিয়ন বোর্ডের কোনো ও ভূমিকা নেই।
১৯৮৩ সালে রসপুর পিপলস লাইব্রেরীর উদ্যোগে গঠিত হয় বিপ্লবী শ্রীশ চন্দ্র ( হাবু) মিত্র স্মৃতি রক্ষা সমিতি। ওই বছর ২৬ শে আগষ্ট রডা অস্ত্র লুন্ঠনের ৭০ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রসপুর পিপলস লাইব্রেরীর পাশে শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করে, যা এখন সংস্কারের প্রয়োজন।পি ডব্লু ডি রাস্তার রামকৃষ্ণ কাঁড়ার এর বাড়ির নামার সামনে থেকে শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র – র বাড়ি যাওয়ার রাস্তার নামকরণ করা হয় ‘শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র সরণী।’ দামোদর বাঁধের পাশে ওই স্মরণ বেদীতে তাঁর জম্ম তারিখ উল্লেখ করা যায় নি। কলকাতার মলঙ্গা লেনে তিনজন স্বাধীনতা সংগ্ৰামীর স্মৃতি মঞ্চ আছে। সেখানে অনুকূল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়, হরিদাস দত্তর মূর্তির সঙ্গে তাঁদের জম্ম – মৃত্যু তারিখের উল্লেখ আছে।শ্রীশচন্দ্র (হাবু) র স্মৃতি ফলক থাকলেও তাঁর কোনো ও স্ট্যাচু নেই, নেই জন্ম – মৃত্যুর তারিখ। কারণ তাঁর সঠিক জন্ম- মৃত্যুর তারিখ যেমন পাওয়া যায় নি, তেমনি পাওয়া যায়নি তাঁর কোনো ছবি।
কয়েক বছর পর পি ডব্লু ডি রাস্তাটি পাকা রাস্তা করার সময় শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র সরণী স্মৃতি ফলকটি তুলে দেওয়ার হয়। এর কোনো ও প্রতিবাদ করেননি তৎকালীন রসপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলের নেতা জয়ন্ত পল্ল্যে। ২০১১ সালে রাজ্যের ক্ষমতা পরিবর্তন হয়। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে রসপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েত তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে আসে।উপ – প্রধান হন জয়ন্ত পল্ল্যে।গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জয়লাভ করে জয়ন্ত পল্ল্যে উপ -প্রধান হন। কিন্তু তিনি সেই স্মৃতি ফলকের পুনঃ প্রতিষ্ঠার কোনো ও উদ্যোগ নেন নি এখনও পর্যন্ত।
আমতা ১নং ব্লকের দামোদর নদের তীরে বসবাসকারী বেশ কয়েকটি পরিবার প্রতি বছর বন্যার কবলে পড়ে।তারা তখন আশ্রয় নিতে বাধ্য হতো রসপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। বেশ কয়েক বছর আগে আমতা ১নং পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে রসপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে ফ্লাড রেসকিউ সেন্টার তৈরী হয়েছে। সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ওই রেসকিউ সেন্টার টি ” শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র ফ্লাড রেসকিউ সেন্টার ” নামকরণ করা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় রেসকিউ সেন্টার তৈরি করা হলেও সেন্টারটি স্বাধীনতা সংগ্ৰামী শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র নামকরণ করা হয়নি।
রডা অস্ত্র লুন্ঠনের ২৬ আগষ্ট ২০২২-এ ১০৯তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে রসপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ফ্লাড রেসকিউ সেন্টার এর প্রাঙ্গনের অনুষ্ঠানে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও এ অনুষ্ঠানে রসপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর একজন ও শিক্ষক-শিক্ষিকা, একজন ও ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত না থেকে প্রকৃত পক্ষে তাঁরা বিপ্লবী শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্রকে অসম্মানিত করলেন।
২০২২-এর ২৬ আগষ্ট রডা অস্ত্র লুন্ঠনের ১০৯ তম বর্ষপূর্তি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করল১৯৮৩ সালে রসপুর পিপলস লাইব্রেরীর উদ্যোগে গঠিত বিপ্লবী শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র স্মৃতি রক্ষা সমিতি।
এই অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন স্বাধীনতা সংগ্ৰামী চন্ডীচরণ দাস।শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র -র জীবনী , স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান নিয়ে আলোচনা করেন স্বাধীনতা সংগ্ৰামী চন্ডীচরণ দাস, ইতিহাস গবেষক ও লেখক প্রদীপ রঞ্জন রীত,সায়ন দে, আমতা থানার ওসি, আমতা ১নং ব্লকের গ্ৰন্থাগার ও জনশিক্ষা দপ্তরের আধিকারিক সৌভিক পাল, সাংবাদিক রবীন্দ্রনাথ শীল ,রসপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সম্পাদক জলধর বাগ,পত্র লেখক দীপঙ্কর মান্না, সমাজসেবী বনমালী পাত্র বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এদিন পিপলস লাইব্রেরীর শ্রীশচন্দ্র (হাবু) স্মৃতি প্রবেশদ্বার উদ্বোধন করা হয়।এছাড়া অনুষ্ঠান ডালিতে ছিল সংগীত, নৃত্য।
‘অগ্ৰগতি’ গনসংগঠন পরিচালিত পি টি টি আই ও বেসিক প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নিজেদের শৌপ্লিক স্বর্তা পরিবেশন করে র্শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্রর স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্নত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন। এই অনুষ্ঠানে উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজী-র কাছে “বিপ্লবী শ্রীশচন্দ্র (হাবু) স্মৃতি রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি সম্বলিত দাবি সনদ পাঠিয়েছেন।
দাবি গুলি হল –
১/স্বাধীনতা সংগ্ৰামী শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র – র অবদান ছড়িয়ে পড়ুক সারা বাংলা তথা ভারতবর্ষে।
২/ সংরক্ষণ করা হোক শ্রীশচন্দ্র (হাবু ) – র জম্ম ভিটা।
৩/ শ্রীশচন্দ্র (হাবু ) মিত্র – র জম্ম ভিটায় স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ।
৪/ রসপুর পিপলস লাইব্রেরীর সামনে ১৯৮৩ সালে নির্মিত শ্রীশচন্দ্র (হাবু ) মিত্র – র স্মৃতি স্তম্ভের সংস্কারের আশু প্রয়োজন।
৫/ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র – র জীবনী ও স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান।
৬/ পি ডব্লু ডি রাস্তার রামকৃষ্ণ কাঁড়ার এর বাড়ির নামার সামনে থেকে শ্রীশচন্দ্র ( হাবু) মিত্র – র বাড়ি যাওয়ার রাস্তার নামকরণ ” শ্রীশচন্দ্র (হাবু ) মিত্র সরণী ” যেটি ১৯৮৩ সালে বসানো হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে পাকা রাস্তা হওয়ার সময় সেই ফলক তুলে দেওয়া হয় – সেই ফলকের পুনঃ প্রতিষ্ঠার।
সমগ্ৰ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্মৃতি রক্ষা সমিতির সম্পাদক অসীম কুমার মিত্র, সদস্য ও সমাজ সংগঠক অতনু মন্ডল।
Social