পাপু লোহার, দুর্গাপুরঃ সিবিআই হেফাজতে বগটুইকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখ-এর মৃত্যু ঘিরে রীতিমতো উত্তাল রাজ্য। মঙ্গলবার রামপুরহাটের অস্থায়ী সিবিআই ক্যাম্পের বাইরে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল লালনের পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীরা। লালন শেখ-এর রহস্যমৃত্যুর আঁচ এবার গিয়ে পড়ল পাশ্ববর্তী জেলা পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে। সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যু নিয়ে বিক্ষোভের আঁচে উত্তপ্ত হয়ে উঠল দুর্গাপুর এনআইটি ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকা। এনআইটি ক্যাম্পাসেও সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। বিভিন্ন মামলায় এই ক্যাম্পে অনেককে জেরা করেছে সিবিআই। এই ক্যাম্পাসের বাইরে এদিন বিক্ষোভ দেখান সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
প্রসঙ্গত, ঘটনাটি শুরু হয়েছিল চলতি বছরের ২১ মার্চ থেকে। এইদিন বড়শাল গ্রামে বোমা মেরে হত্যা করা হয় ভাদু শেখ-কে। ভাদু শেখ বড়শালের গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান ছিল। তার মৃত্যুর পরেই শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা ও বিবাদ। সারা বগটুই গ্রাম জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। রাতের পর রাত চলে ভাঙচুর। এমনকি ১০ জনকে জ্যান্ত পুড়িয়েও ফেলা হয়। এই সকল অপকর্মের জন্য দায়ী করা হয় ভাদু শেখের সবচেয়ে কাছের মানুষ লালন শেখকে। এই ঘটনার তদন্তের ভার পড়ে সিবিআই-এর ওপর। ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার প্রায় ৮৯ দিনের মাথায় আদালতে একটি চার্জশিট পেশ করা হয়, যার মধ্যে মোট ১৮ জনের নাম জমা পড়েছিল। সেখানে লালনের নামও ছিল। তবে লালন বগটুই গ্রাম থেকে পলাতক হয়।
অবশেষে সিবিআই-এর নজর থেকে রক্ষা পায়নি লালন। গত ৪ ডিসেম্বর সিবিআই তাকে উদ্ধার করে ঝাড়খণ্ডের নরোত্তমপুর এলাকা থেকে। ওই এলাকাতেই একটি কুঁড়েঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেছিল লালন। সিবিআই সেইদিনই রামপুরহাটের অস্থায়ী ক্যাম্পে তাকে নিয়ে যায়।
এরপর ১০ ডিসেম্বর তাকে আদালতে নিয়ে হাজির করা হয়। আদালত তাকে আরও তিন দিন সিবিআই-এর নজরবন্দী করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর তারপরে হঠাৎ খবর আসে সোমবার বিকেলের পর তদন্ত চলাকালীনই মৃত্যু হয় লালন শেখের। সিবিআই-এর দাবি লালন আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনার পর সিবিআই এর উপর আঙুল তুলছে লালনের স্ত্রী এবং পরিবার।
লালনের স্ত্রীর দাবি, সিবিআই-এর জন্যই তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। লালন শেখের স্ত্রীর মন্তব্য, তাদের ২ জনকে মারার জন্য চক্রান্ত করা হয়েছিল। সিবিআই থেকে জানান হয়, তার স্বামী মারা গিয়েছে। কাজেই সেও যেন আত্মহত্যা করে নেয়।
লালনের মৃত অবস্থার ছবি পাঠানো হয়েছে তার পরিবারজনদের কাছে। লালনের স্ত্রী আরও দাবি করে, সিবিআই-এর লোকজন তার স্বামীকে প্রথমে মারধর করে এবং পরে শৌচালয়ে দেহ ঝুলিয়ে রেখে দেয়। ওই শৌচালয়ে ছাদের উচ্চতার জন্য কোনো মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়ালে মাথা ঠেকে যাবে। কাজেই সেখানে লালন কিভাবে আত্মহত্যা করল সেটি নিয়ে সন্দেহ করছে তার স্ত্রী রেশমা বিবি।
লালনের স্ত্রীর তরফ থেকে জানা গিয়েছে, মৃত লালনের শরীরে কোনো পোশাক ছিল না। রেশমা বিবির দাবি, তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে লালনের পরিবার-পরিজন এবং পরিচিতরা রাস্তা অবরোধ করে। তবে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত চালানো হচ্ছে।
Social