ঘর নেই, টিভি নেই, না খেতে পাওয়া ঘরের ছেলেটা আজ সিনেমার লেখক ও পরিচালক

Burdwan Today
3 Min Read

 

দেবজিৎ দত্ত, বাঁকুড়াঃ সত্যিই আজ মাটির ঘরে খরের চালাতে চাঁদের আলো উঁকি দিয়েছে। সমীর পণ্ডিত বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস থানার   বাজিতপুর নামের এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম। বাবা নন্দদুলাল পণ্ডিত গরীব দিনমজুর, অবসরে ঢোল, সানাই বাজাতেন। সমীর পন্ডিত-এর পড়া বাঙ্গালচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর নুন্দুরি সুধীর চন্দ্র বিদ্যানিকেতনে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত।

কোনোদিন ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যায়নি, গরীব বাবা ব্যাগ কিনে দিতে পারেনি। বই কিনে দিতে পারেনি। পারেনি কোনো টিউশন দিতে। কোনোদিন গরম ভাত খেয়ে স্কুলে যায়নি। অনেকদিন এমনও গেছে যে গাছের পেয়ারা খেয়ে খালি পায়ে স্কুলে যেতে হয়েছে। পাত্রসায়ের হাট থেকে পুরনো পোশাক পড়ে কেটেছে পূজা অনুষ্ঠান। এমনকি স্কুলের সাদা জামাটাও পুরনো কিনেছিল হাট থেকে।

হঠাৎ তার মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। পড়াশুনা ছেড়ে বাঁকুড়া-মেদিনীপুরের বিভিন্ন প্রান্তে রাজমিস্ত্রি কাজ করে বেড়ায়। হাতে প্রচুর ফোস্কা পড়ে যায় কাজ করে। এমন সময় তার  মেজো দাদা তাকে ক্লাস নাইনে জয়পুর থানার হেতিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে  ভর্তি করে। হোস্টেলে অন্তত খেতে পাবে। তার মা ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।

এদিকে উচ্চ মাধ্যমিকে ফাস্ট ডিভিশন পেয়ে ছেলেটা পড়া ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে না জানিয়ে কলকাতা চলে যায় কাজের সন্ধানে। বেলঘরিয়াতে একটা  হোসিয়ারি কারখানাতে কাজে লেগে যায়। কারখানায় মালিক রেজাল্ট দেখে কলেজে ভর্তি হতে বলে।  কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়াশুনা। ছোট থেকেই অভিনয় ও লেখালেখির প্রতি ছেলেটার প্রবল আকর্ষণ ছিল। কলেজে পড়তে পড়তে টালিগঞ্জের  ফিল্মি পাড়াতে যাতায়াত। সমাজতত্ত্বে অনার্স  করে মুম্বাইতে কাজের  সন্ধানে চলে যায়। আবার কলকাতা ফিরে এসে আবার পড়াশুনা। সমাজ সেবায় এম.এ পাশ করে ।

জীবনে প্রেম ভালোবাসা এসেছে। ছেড়েও চলে গেছে। একরোখা জেদী সে ২৪ ঘণ্টায় কাজ নিয়ে থাকতে ভালবাসে। আছে প্রচুর গল্প লেখা, কবিতা লেখা। কাজের জন্য দিনের পর দিন টালিগঞ্জে ঘুরেছে।কেউ সুযোগ দেয়নি। ২০০৬ সাল থেকে ঘুরতে ঘুরতে লড়াই। অবশেষে একটা কাজের সূত্র এলো। তারপর ২০১২ সালে তমলুকের মহাপ্রভু মন্দির থেকে মহাপ্রভুর উপর তথ্যচিত্র নির্মাণের  দায়িত্ব পায়। তারপর বড় ব্রেক। ২০১৮  সালে রিলিজ হয় “আমি তোকে ভালবাসি” নামের একটি সিনেমা।

করোনার সময়ে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের তথ্যচিত্র “এ কোন ভোর” পরিচালনা করেছিলেন। আজ “দিবানি” রিলিজ। চারিদিকে চলছে সিনেমাটি।

অনেকে অপমান করেছে,অনেকে পাশে থেকেছে। লড়াই করতে গিয়ে জিবনে অনেক দুপুর-রাত খেতে পায়নি টাকার অভাবে। নিজের রোজগারের টাকায় অনেক মানুষকে বই খাতা পোশাক দিয়েও পাশে থেকেছে। এমনকি গরীব ছেলেমেয়েদের ফ্রীতে কোচিংয়ে পড়াশুনার ব্যাবস্থা করেছে। গরীব মেয়েদের বিয়েতে টাকা দিয়ে পাশে থেকেছে। তার সমস্ত কিছুই  প্রমাণ স্বরপ। সমীর পণ্ডিতের বাড়িতে একটা টিভি নেই। নেই নিজের বাড়ি ।সেই  ছেলেটি আজ সিনেমার লেখক পরিচালক।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *