অরুণাভ দত্ত, উত্তর দিনাজপুরঃ উত্তর দিনাজপুর হলো উত্তরবঙ্গের একটি সীমান্তবর্তী জেলা, সেই জেলার একটি ছোট্ট শহর হলো কালিয়াগঞ্জ। এই শহরেই রয়েছে দেবী বয়রা কালীর মন্দির। সেই মন্দিরেই প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে অধিষ্ঠিত দেবী বয়রা কালী, দেবী বয়রা কালী মাতার পুজো প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময়ের প্রাচীন হলেও এই পুজোকে কেন্দ্র করে ভক্তদের মনে অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। দেবী বয়রা কালীর মন্দিরকে ঘিরে ভক্তদের মুখে বহু অলৌকিক ঘটনা শোনা যায়। সারাবছর দেবী বয়রা কালী মাতার মূর্তি সোনা ও রূপার অলঙ্কারে সুসজ্জিত থাকে। প্রতিবছর কার্ত্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর দিন এই পূজাকে ঘিরে দর্শনার্থীদের ঢল চোখে পরার মতো।
দেবী বয়রা কালী মাতার মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য ভক্তদের লম্বা লাইন পরে। মন্দিরের পাশ দিয়ে গিয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। বয়রা গাছের নীচেই গড়ে উঠেছে মায়ের মন্দির, এখানে মা বয়রা কালী নামেই পরিচিত। দেশ বিদেশে দেবী বয়রা কালীর মাহাত্ম্য কথা ছড়িয়ে আছে। কালিয়াগঞ্জ শহরের বুকের উপর দিয়ে শ্রীমতি নদী বয়ে গেছে। তবে বদলেছে সময়। এই নদীতে যদিও এখন আর আগের মতো তেমন আর গতি নেই। তবে একটা সময় এই নদী পথেই সওদাগরেরা নৌকা ভাসাতো, নৌকায় পাল তুলে বাণিজ্যে যেতো। দেবী বয়রা কালীর ভক্তদের কাছ থেকে শোনা যায়, দেবী বয়রা কালীকে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যে আসা যাওয়ার পথে পুজো দিয়ে যেতেন। মা কালীর মন্দির বয়রা গাছের তলায় থাকায় ব্যবসায়ীরাই দেবী বয়রা কালীর মন্দির নাম দেন। কোনো এক সময় জলভরা শ্রীমতি নদীর জল শুকিয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে শ্রীমতি নদীর পার সংলগ্ন এলাকা ধীরে ধীরে ঘন জঙ্গলে পরিণত হয়, দিনে দিনে লোকের আনাগোনা কমে যায়। তারপর ঘন জঙ্গলে ডাকাতদের রাজত্ব গড়ে ওঠে, তার জন্য দেবী বয়রা কালীর আরাধনায় কোন ভাটা পড়েনি। দেবী বয়রা কালী সেই সময়ে ডাকাতদের কাছেই পুজিতা হতেন।
পরবর্তীকালে ১৯৩২ সালে ইংরেজ আমলে অন্য এক সম্প্রদায়ের ব্যাক্তি এই জায়গার দারোগা হয়ে আসেন, শোনা যায় ডাকাত দমনের জন্য সেই দারোগাও নাকি দেবী বয়রা কালীর শরণাপন্ন হন। তিনিই পরে চাঁদা তুলে ও বিভিন্ন ভাবে টাকা সংগ্রহ করে দেবী বয়রা কালীর মন্দির সংস্কার করে প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকেই কার্ত্তিকি অমাবস্যার কালীপুজোর রাতে বেশ ধুমধাম করে দেবী বয়রা কালীর আরাধনা হয়,তাই কালীপুজোর রাতে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তদের সমাগম হয়। দেবী বয়রা কালীর ভক্তদের কাছ থেকেই চাঁদা তুলে ১৯৯৮ সালে দেবী বয়রা কালী মায়ের বর্তমান প্রতিষ্ঠিত মূর্তি তৈরি করা হয়, এই মূর্তি অষ্টধাতু দিয়ে গড়ে তোলা হয়। দেবী বয়রা কালী মায়ের প্রচুর সোনা ও রুপোর অলঙ্কার আছে। জনশ্রুতি আছে – কোনো ভক্ত যদি এই দেবী বয়রা কালীর মন্দিরে একবার মনস্কামনা নিয়ে আসেন, তাহলে এখানেই তার মনষ্কামনা পূরণ হয়। সেই ভক্তকে নাকি আর অন্য কোনও মন্দিরে যেতে হয় না। দেবী বয়রা কালীকে পুজো দিলেই মনস্কামনা পূর্ণ হয়, দেবী বয়রা কালী কাউকে ফেরান না।
Social