দেবজিৎ দত্ত, বাঁকুড়াঃ বাঁকুড়া জেলার শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে ছোট্ট এক গ্রাম হাপানিয়া-রামনাথপুর আর এই গ্রামের একলা এক কোণে একটা জায়গা আছে যে জায়গাটাতেই ঢুকতে গেলেই চোখে পড়বে, বড় বড় হরফে লেখা আছে মারাংবুরু চাচো মার্শাল আশ্রম। মারাংবুরু হল আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপাস্য দেবতা, চাচো মার্শাল কথার অর্থ হলো চলো আলো জ্বালায়। হ্যাঁ সত্যি এ এক এমন জায়গা যেখানে অনবরত জ্ঞানের আলো প্রদান হতে থাকে কিশলয়দের। আর এই জ্ঞানের আলো প্রদানকারী যে মানুষটার কথা না বললেই নয় বাবুনাথ টুডু যিনি দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে সমাজের অবহেলিত বা পিছিয়ে পড়া কিশলয়দের মধ্যে জ্ঞান বিতরন করে চলেছেন।
একটা শৃঙ্খলাপরায়ন আশ্রমিক জীবন যেখানে চাঁদ, সুগুন, রাজর্ষীরা প্রতিনিয়ত নিজেদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আশ্রমের ঢুকতেই চোখে পড়বে সারিবদ্ধ ভাবে বসে আছে কিশলয়রা আর তাদের সামনে কেউ একটা সাদা বোর্ডের উপর কলম নিয়ে তাদের ভাষায় তাদের স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে চলেছেন। পেশায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক বাবুনাথ বাবু হাপানিয়া রামনাথপুর গ্রামেরই বাসিন্দা যিনি আজ দীর্ঘ দুই দশক ধরে এই মারাংবুরু চাচো মার্শাল আশ্রমকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।সাঁওতালী ভাষী বাচ্চারা স্কুলে গিয়ে অসুবিধের সন্মুখীন হয় বাংলা ভাষা কথা বলতে, তাই তাদের অলচিকি ভাষা দিয়ে বাংলা ভাষা চেনানোর প্রয়াস থেকেই এই আশ্রমের পত্তন করেন বাবুনাথ বাবু।বাচ্চাদের খাওয়া দাওয়া থেকে ভরণপোষণ একা হাতে সামলাচ্ছেন, আর তার এই কাজে ব্রতী হয়েছেন তার শ্রী লক্ষ্মী টুডু, এতো বড়ো একটা আশ্রমের দায়িত্বভার ভাগ করার জন্য একটা আশ্রমিক কমিটি গঠন হলেও সিংহভাগ বাবুনাথ বাবুই করে থাকেন। আশ্রমের খরচ কিভাবে চলে বাবুনাথ বাবুকে জিজ্ঞেস করায় উনি জানান কেউ যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় কোনো মাসে বা এককালীন সেই সাহায্য সাদরে গ্রহণ করা হয়,বাকিটা নিজের মতো করেই ওনার মাস মাইনের টাকা থেকেই চলে এই আশ্রম জীবন। এখনও পর্যন্ত সরকারী সাহায্যে সেরম কিছু পাননি বলেই জানান বাবুনাথ বাবু।
সবে মিলে শহুরে ব্যাস্ত জীবনের থেকে অনেক দূরে শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে একাকি এক গ্রামে মানুষ গড়ার কারীগর বিনাপয়সার মাষ্টারের জীবন যুদ্ধ চলছে ৮৫ জন আবাসিক কিশলয়কে নিয়ে। বাবুনাথ বাবু জানান যতদিন দেহে প্রান আছে আমি এই কাজ করেই যাবো।
Social